নৌকা ডুবির ৫ মাস পরে নৌ অধিদপ্তরের মামলা
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাটে গত বছরের ২৫শে সেপ্টেম্বর মর্মান্তিক নৌকাডুবির ঘটনার ৫ মাস পরে ঘাটের ইজারাদারা ও দুই মাঝিকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেছে নৌ পরিবহণ মন্ত্রনালয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারী নৌ পরিবহণ মন্ত্রনালয়ের মুখ্য পরিদর্শক সফিকুর রহমান বাদী হয়ে নৌ অধিদপ্তর অধ্যাদেশ আইনে ঢাকার স্পেশ্যাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।
পরে আদালত মামলার শুনানী শেষে আদালত আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করে। পরে মামলার ১৮ দিন পরে বোদা থানা পুলিশ গত মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে অভিযান চালিয়ে বোদা উপজেলার মাড়েয়া এলাকা থেকে ঘাটের ইজারাদার আব্দুল জব্বার ও মাঝি বাচ্চু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে।
পরে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যেমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। তবে মামলার অন্য আসামী রবিউল ইসলাম পলাতক রয়েছেন। বুধবার বিকেলে বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজয় কুমার রায় গণমাধ্যেমকর্মীদের এসব তথ্য জানান। মামলার আসামীরা হলেন, আউলিয়ার ঘাটের ইজারাদার আব্দুল জব্বার (৫৫), ঘাটের মাঝি বাচ্চু মিয়া (৪৫) ও রবিউল ইসলাম (২৮)।
পুলিশ ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বোদা উপজেলার করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটে মর্মান্তিক নৌকাডুবির ঘটনায় জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদনে নৌকাডুবির কারণ হিসেবে ইজারাদার আব্দুল জব্বারের গাফিলতির অভিযোগ সহ নৌকার অদক্ষ চালক হিসেবে (মাঝি) বাচ্চু মিয়া এবং রবিউল ইসলামকে দায়ী করা হয়।
এছাড়া সনাতন ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় কুসংস্কার, ধর্মীয় অনুভূতি, অসচেতনতা, নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী ওঠা, নৌকার ইঞ্জিনে ত্রুটি সহ বেশি কিছু কারণও চিহ্নিত করা হয় প্রতিবেদনে। ঘটনার পর পৃথক তিনটি তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট নৌপরিবহন মন্ত্রনালয় সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়।
উল্লেখিত প্রতিবেদন এবং তদন্তের মাধ্যমে নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারী নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মূখ্য পরিদর্শক মো. সফিকুর রহমান বাদী হয়ে ঘাটের ইজারাদার আব্দুল জব্বার, নৌকার চালক বাচ্চু মিয়া এবং রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে নৌ অধিদপ্তর অধ্যাদেশ আইনে নৌ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বোদা থানয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠানো হলে মঙ্গলবার দুপুরে ঘাটের ইজারাদার আব্দুল জব্বার ও মাঝি বাচ্চু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে বোদা থানা পুলিশ।
বোদা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজয় কুমার রায় বলেন, এই মামলা বিষয়ে আমরা তেমন কিছু জানিনা। নৌ অধিদপ্তর আদালত থেকে আমাদের কাছে নামীয় আসামীদের ওয়ারেন্ট আসলে মঙ্গলবার আমরা ইজারাদার সহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করি। পরে ওইদিন বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়।
নৌ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একজন মূখ্য পরিদর্শক মামলার বাদী হয়েছেন এবং ওই মামলাটি তাদের পক্ষ থেকে তদন্ত এবং নৌ আদালতেই বিচাকার্য পরিচালিত হওয়ার কথা। পঞ্চগড় থেকে গ্রেপ্তার আসামীদের নৌ অধিদপ্তর আদালতে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। পলাতক আরেক আসামী রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সনাতন দর্শালম্বীদের মহালয়া উৎসবে যোগ দিতে শিশুসহ স্থানীয় কয়েকশ নারী পুরুষ শ্রী শ্রী বদ্বেশ^রী মন্দিরে যাচ্ছিলেন। এ সময় বোদার করতোয়া নদীর আওলিয়ার ঘাটে মর্মান্তিক নৌকাডুবির ঘটনায় নারী, পুরুষ, শিশুসহ ৭১ জন নিখোঁজ হন। ঘটনার সাথে সাথে স্থানীয়দের সঙ্গে পঞ্চগড় ছাড়াও নীলফামারি, দিনাজপুর ও রংপুর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ ১২ টি ডুবুরি দল উদ্ধার কাজ শুরু করেন।
ঘটনার ৪৯ দিনে নদীর বালু ও পানি থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধারসহ সর্বশেষ ৭১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে সুরেন্দ্রনাথ বর্মন (৬৫) নামে একজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। নৌকা ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ হয় ৭২ জন। পরে ৭১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে এখনো একজন নিখোঁজ আছেন।
এএজেড