নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছে ভোলার ৯৫% জেলেরা
শুনশান নিরবতা বিরাজ করছে ভোলার মাছঘাটগুলোতে। ভোলার ৯৫% জেলেরাই চলমান নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছে বলে জানায় জেলা মৎস্য অধিদপ্তর। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ১লা মার্চ থেকে বেকারত্ব দিন কাটছে উপকূলীয় জেলে ও মৎস্য ঘাটে।
নদীতে মাছ শিকারে চলছে নিষেধাজ্ঞা। এতে করে কর্মহীন হয়ে পড়েছে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর জেলেরা ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। যার জন্য সংসার চালানো নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন জেলার এক লাখ ৫৮ হাজার জেলের মধ্যে ৫-১০% জেলেরা।
জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ইলিশের অভয়াশ্রমগুলোতে ১লা মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলছে।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ শিকার করা বন্ধের আওতায় ১৯০ কিলোমিটার নদী পথ।
জেলা মৎস্য অফিসার মোল্লা এমদাদুল্লা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, জেলায় নিবন্ধিত জেলেদের জন্য প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্ধ রয়েছে।
জেলার হাকিমুদ্ধি,দৌলতখা, তুলাতলি, ইলিশাসহ বড় বড় মৎস্য ঘাট ঘুরে দেখা যায়, কেবল মাছ শিকারের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় এবং বর্তমানে নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকায় বেকার সময় পার করছেন জেলেরা। এতে করে সংসার চালাতে চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। মহাজনদের দাদন ও এনজিওর ঋণের চাপও রয়েছে জেলেদের উপর। তবে এনজিওর ঋণের কিস্তি পরিশোধের চিন্তায় জেলেদের হিমসিম খেতে হচ্ছে বলে জানান জেলে জাহিরুল ইসলাম।
জেলে সাদেক বলেন, আমরা মৎস্য অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছি। সরকার আমাদের চাউলের ব্যবস্থা করে দিয়েছে আমরা চাউল পেয়েছি। এখন আমরা মাছ শিকারে যাই না। তাই বেকার সময়ে মাছ ধরার জাল সেলাইয়ের কাজ করি।
জেলে হারেছ মাঝি বলেন, আমি এবং আমার জেলেরা এখন আমাদের মাছ ধরার ট্রলার মেরামত করছি।
তুলাতলি ঘাটের জেলে দুলাল বলেন, আমরা এখন বেকার না থেকে তরকারি ক্ষেতে কাজ করছি। নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে মাছ ধরার কাজে ফিরে যাব।
ইলিশা ঘাটের জেলে হেজু বলেন, আমার ছোট সংসারে স্ত্রীসহ দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তারা অন্য মাজির সাথে মাছ শিকার করত। নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন তরকারি ক্ষেতে কাজ করেন । তরকারি ক্ষেতে দিন মজুরের কাজ করে আমাদের যা আয় হয় তা দিয়েই ভালোভাবে চলে সংসার। তবে গত কয়েকদিন আগ থেকে নদীতে সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যার ফলে অনেক জেলেরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের জন্য সরকারিভাবে যে চাল বরাদ্দ রয়েছে তা কিছু কিছু জেলেরা এখনো পাননি বলেও জানা গেছে । খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন ওই চাল বিতরণ করা হয় এমন দাবি করেছেন সাধারণ জেলেরা। অপরদিকে জেলেদের দাবি, এনজিওর কিস্তি পরিশোধ এই দুই মাস বন্ধ থাকলে ভালো হতো।
এদিকে জেলা মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এনজিও জেলা প্রতিনিধিদের সাথে ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে একটি মিটিং হয়েছে । মিটিংয়ে নিষেধাজ্ঞা চলমান সময়ে জেলেদের থেকে চাপ দিয়ে কিস্তি আদায় না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারপরও কোনো এনজিওকে যদি কিস্তির টাকা জেলেরা স্বেচ্ছায় প্রদান করে তা গ্রহণ করবে এনজিওকর্মী ।
জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে ভোলার ইলিশা থেকে মনপুরার চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার ও ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী জেলার চর রুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর অন্তত ১০০ কিলোমিটার এলাকা। নিষেধাজ্ঞা আওতাধীন নদী এলাকায় ভোলার ৭টি উপজেলায় ১৫৮০০০ নিবন্ধিত জেলে থাকলেও ৮৯৪১০ জন জেলের মধ্যে চাউল বিতরণ করা হবে বলে জানায় ভোলা জেলা মৎস্য অধিদপ্তর।
ইতিমধ্যে চাল বিতরণ শুরু করে চরফ্যাশন উপজেলা। প্রথম ধাপে চাল বিতরণ সম্পূর্ণ করেছে এই উপজেলাটি । দৌলতখান উপজেলায় চাউলের রিজার্ভ না থাকায় একটু বিলম্ব হলেও বাকী সকল উপজেলায় চাল বিতরণের কাজ দ্রুততার সাথে চলছে বলে জানা গেছে।
মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন ৮ মার্চ পর্যন্ত ৩৭ জন জেলেকে বিভিন্ন হারে জরিমানা করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা মৎস কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লা। তবে এই বছর ৯৫% জেলে স্বেচ্ছায় মৎস্য অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছে বলেও জানান তিনি।
এসআইএইচ