ঠাকুরগাঁওয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে তুলা চাষ
বস্ত্র খাতে তুলার চাহিদা মেটাতে সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসছেন অনেক বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন তুলা চাষিদের পাশাপাশি তুলার বীজ সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তেমনিভাবে উদ্ধুদ্ধ হয়ে উন্নত মানের হাইব্রীড ডিএম-৪ জাতের তুলার ফলনে এগিয়ে এসেছেন ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকরা। এবার খরচের চেয়ে দ্বিগুন লাভবান হওয়ায় ব্যাপক সারা ফেলেছে তাদের মাঝে।
বস্ত্র তৈরিতে তুলার ব্যবহার অপরিহায্য। তাই বিশ্বের বাজারে দিন দিন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তুলার চাহিদা। দেশে পোশাক তৈরিতে সিংহভাগ তুলা আমদানি করা হচ্ছে বিদেশ থেকে। তাই সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর যৌথ উদ্যোগে অধিকাংশ তুলা বাংলাদেশ থেকে উৎপাদন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাজারে নিয়ে এসেছে উন্নত হাইব্রীড ডিএম-৪ জাতের তুলার বীজ। যা চাষ করে দ্বিগুন লাভবান হচ্ছেন ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকরা।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, তুলা এমন একটি ফসল যার প্রতিটি অংশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-আঁশ থেকে সুতা, বীজ থেকে খৈল ও খাওয়ার তেল পাওয়া যায়। গাছ থেকে জ্বালানি, কাগজ তৈরি ও হার্ডবোর্ড বানানো যায়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। যে জমিতে কোনো ফসল হয় না সেই জমিতে পর পর দুই মৌসুম তুলা চাষ করলে এর উর্বরতা শক্তি এমন বৃদ্ধি পায় যে তখন সর্ব প্রকার ফসল সহজেই ফলানো যায়।
যে জেলায় আগে তুলা চাষ সম্পর্কে মানুষের ধারণাই ছিল না। সেই জেলায় গত ২০২১-২২ অর্থবছরে উফশী ও হাইব্রীড ডিএম-৪ মিলে তুলা চাষ হয়েছে ৪২৬ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৮১৬ বেল তুলা। যার মূল্য ১৮ কোটি টাকা। আর ২২-২৩ অর্থবছরে তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০০ হেক্টর জমিতে, যার উৎপাদন লক্ষমাত্রা অনুযায়ী বর্তমান মূল্য প্রায় ২৮-৩০ কোটি টাকা। এত টাকার তুলা উৎপাদিত হবে শুধু এই জেলা থেকেই।
সদরের হরিহরপুর গ্রামের তুলা চাষী আমান বলেন, ‘৩৩ শতাংশের ১৪ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন লাল তীরের হাইব্রীড ডিএম-৪ জাতের তুলা। চাষ করতে বিঘায় খরচ হয়েছে ২০-২৫ হাজার টাকা। এক বিঘাতেই ফলন হয়েছে ১৬ মণ। বর্তমান যার প্রতি মণ বাজার মূল্য ৩৮০০ টাকা। প্রতি বিঘার জমির তুলা বিক্রি করেছেন ৬০ হাজার টাকা। তাতে ছয় মাসে এক বিঘা জমিতে লাভ হয়েছে তার ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
জেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতা ও পরামর্শে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা পরিত্যাক্ত জমিতে চাষ করেছেন তুলা। চাষীদের অনেকেই তুলার সাথে সাথী ফসল হিসেব কেউ আখ, কেউ কলা, কেউ নানা ধরণের শাক-সবজি চাষ করেছেন। এতে এক ফসলের পরিচর্যা ও খরচে দুই ফসল করতে পেরে আর্থিভাবে লাভবান হচ্ছে বলে জানান তুলা চাষি অর্জুন দেব নাথ ও বেলাল হোসেন। এ ছাড়াও উদ্বুদ্ধ হয়ে তোফাজ্জল ইসলাম তুলা চাষ করেন। তিনি বলেন,‘হারভেস্ট করার পরে তুলা গাছগুলো জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করেন তারা।
তুলা চাষের সাথে কৃষকরা সাথী ফসলও চাষ করতে পারছেন বলে বেশি করে তুলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন তারা। তুলা বোর্ড কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন ও বীজ সরবরাহ করছেন বলে জানান ঠাকুরগাঁও তুলা উন্নয়ন বোর্ডের মাঠ পরিদর্শক স্বদেশ চন্দ্র রায়।
জেলার প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা বলছেন, লাল তীর সীড়ের ডিএম-৪ জাতের বীজের জার্মিনেশন ভালো ও এর বিঘা প্রতি ১৬-২০ মণ করে ফলন হওয়ায় খুশি কৃষকরা।
এ ছাড়াও তুলা উন্নয়ন বোর্ড-ই কৃষকদের কাছে তুলা ক্রয় করে এবং এই ফসলের দামও স্থিতিশীল ও একই ফসলের সাথে অন্য ফসল করতে পারায় আগামীতে জেলায় তুলা চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন ঠাকুরগাঁও জোনের তুলা উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কর্মকর্তা এ কে এম হারুন অর রশিদ।
তুলা চাষের মাঠ পরিদর্শনে এসে রংপুর অঞ্চল তুলা উন্নয়ন বোর্ডের উপ-পরিচালক আবু ইলিয়াস মিঞা বলেন, ‘লাল তীর সীড়ের ডিএম-৪ ও তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সিবি হাইব্রীড-১, উফশী-১২ ও-১৫ জাতের বীজ কৃষকদের সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে কৃষকরা এসব হাইব্রীড জাতের তুলা চাষ বেশি করে।
এসআইএইচ