পঞ্চগড়ে কাদিয়ানী জলসা বন্ধের দাবিতে সড়ক অবরোধ, হামলা, অগ্নি সংযোগ!

পঞ্চগড় পৌরসভার আহমদনগর এলাকায় আগামী ৩, ৪ ও ৫ মার্চ কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠিতব্য সালানা জলসা বন্ধ ও কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইমান আকিদা রক্ষা কমিটি সহ ৬টি ইসলামী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় শহরে প্রবেশের প্রধান সড়কগুলো বাঁশ ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বিক্ষোভকারীরা। এতে মহাসড়কের দুই ধারে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে যায়। বিপাকে পড়েন পথচারীরা সহ সাধারণ মানুষেরা। যাতায়াতে বাধার সম্মুখীন হন অনেকে।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে পৌনে ৪ টা পর্যন্ত সোয়া ৪ ঘন্টা ধরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রিয়াজ উদ্দীন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এসএম শফিকুল ইসলামের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয় বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভ মিছিলে খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি মুফতি আ ন ম আব্দুল করিম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি আব্দুল হাই, খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক কারী মো. আব্দুল্লাহ, ৬ টি সংগঠনের নেতা-কর্মী সহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ৫ শতাধিক মুসল্লী অংশ গ্রহণ করেন। পরে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কে জোহরের নামাজ আদায় করেন বিক্ষোভকারী মুসল্লীরা। এসময় সংগঠনটির নেতারা অবিলম্বে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধ না করা হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় জেলা প্রশাসক বরাবরে কাদিয়ানীদের সালানা জলসা বন্ধ ও কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেন সংগঠন গুলোর নেতারা।
সদর উপজেলার নলেহাপাড়া এলাকার মুহাইমিনুল ইসলাম মঞ্জিল বলেন, আমি আমার গবাদি পশুর খাবার নিতে পঞ্চগড় বাজারে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে আটকা পড়েছি। কখন সড়ক অবরোধ ছেড়ে দেয় আর কখন বাসা যাবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
সদর উপজেলার মীরগড় এলাকার আছিয়া খাতুন বলেন, বাপু মুই আইচ্চু পঞ্চগড়ত বাজার খরচ করিবা। আসে দেখচু সড়ক বন্ধ। এলা বাড়ি কেংগো যাম। ভ্যান নাই কিছুই নাই।
পরে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল শেষে আন্দোলনকারীদের একাংশ বিকেল চারটার দিকে পঞ্চগড় পৌরসভার আহমদ নগর এলাকায় কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে হামলা করে দুইটি বাড়ির দুইটি স্তুপ করে রাখা জ্বালানি খড়ির ঘরে অগ্নি সংযোগ করে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে দ্রুত ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ পৌঁেছ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বিক্ষোভকারীরা এ সময় পালিয়ে যায়।
খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ কারী মো আব্দুল্লাহ বলেন, প্রশাসন আমাদের আশ্বাস দিয়েছে কাদিয়ানীদের সালানা জলসা এবার সংক্ষিপ্ত পরিসরে হবে। আগামীতে তাদের কোন অনুষ্ঠান পঞ্চগড়ে হবে না। এরই প্রেক্ষিতে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি। তবে কাদিয়ানীদের বাড়ি ঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ কারা করেছে আমরা জানিনা। আমাদের কোন কর্মী সেখানে যায়নি।
তবে এ ঘটনার পর থেকে পঞ্চগড় পৌরসভার আহমদ নগর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবির টহল জোড়দার করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা শুরু থেকে তৎপর ছিলাম, এখনো আছি। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা কাদিয়ানীদের আহমদ নগড় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করেছি। আমরা হামলা কারীদের সনাক্তের চেষ্টা করছি।
/এএস
