নির্বাচন নিয়ে সাতক্ষীরার রাজনীতি- পর্ব ১
শরিক নিয়ে অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণা করা হবে ২০২৩ সালের নভেম্বরে।
জানুয়ারিতে নির্বাচন হলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এখনো ১০ মাস। এবারের নির্বাচনে সাতক্ষীরার ৪টি আসনেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যেমন শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে, তেমনি শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে তাদের শরিক জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের। ঠিক একইভাবে আসনগুলোতে বিএনপির যেমন শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে, তেমনি নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতেরও রয়েছে শক্তিশালী প্রার্থী।
বর্তমানে আসন ৪টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রকাশ্যে ও গোপনে নিজ নিজ এলাকায় ইতোমধ্যে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। তবে এই মুহূর্তে জেলাবাসীর কাছে সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় শরিকদের জন্য সাতক্ষীরার কোন কোন আসন ছাড় দিতে বাধ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগ। যদিও মহোজোটের শরিক জাতীয় পার্টি বলছে, এবার এককভাবে নির্বাচন করবেন তারা।
৪ পর্বের ধারাবাহিকতায় আজ প্রথম পর্বে থাকছে সাতক্ষীরার চারটি আসনের সরকার দলীয় সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী ও দলটির আদ্যপ্রান্ত নিয়ে।
৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ৫টি সংসদীয় আসন ছিল। কিন্তু নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন ৫টির পরিবর্তে ৪টি আসনে বিন্যস্ত করে। এর ফলে সাতক্ষীরা-১ ও ২ আসন আগের অবস্থানে থাকলেও বাকি ৩টি সংসদীয় আসন দু’টি আসনে পরিণত হয়। সাতক্ষীরা-৩ আসনে আশাশুনি উপজেলার সঙ্গে যুক্ত হয় দেবহাটা উপজেলা ও কালিগঞ্জ উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন। অপরদিকে, কালিগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নকে শ্যামনগর উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করে গঠিত হয় সাতক্ষীরা-৪ আসন। পাল্টে যায় ভৌগোলিক অবস্থান ও ভোটের হিসাব-নিকাশ।
বর্তমানে জাতীয় সংসদের ১০৫ (সাতক্ষীরা- ১), ১০৬ (সাতক্ষীরা- ২), ১০৭ (সাতক্ষীরা- ৩) ও ১০৮ (সাতক্ষীরা- ৪) নম্বর আসন নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরার ৪টি আসন।
সাতক্ষীরা-১: জাতীয় সংসদের ১০৫ নম্বর (সাতক্ষীরা-১) আসনটি সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া ও তালা উপজেলা নিয়ে গঠিত। বর্তমানে এ আসনে ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৮৪ সালে সাতক্ষীরা- ১ আসন সৃষ্ট হওয়ার পর থেকে একবারের উপনির্বাচনসহ ৪ বার আওয়ামী লীগ, দু’বার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, দু’বার বিএনপি, একবার করে জামায়াত এবং জাতীয় পার্টি নির্বাচনে জয় পায়।
ওয়ার্কার্স পার্টির সাংগঠনিক ভিত্তি খুব মজবুত না হলেও টানা দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য থাকার কারণে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বেশ জনপ্রিয়। এবারও তিনি ১৪ দলের মনোনয়ন নিয়ে অংশ নিতে চান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। কিন্তু আওয়ামী লীগের অপর একাংশ এবার দলীয় যেকোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে অটল রয়েছেন। আসনটি দলীয়ভাবে ফিরে পেতে চান এখানকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
সূত্র বলছে, দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় এ আসনের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী মুজিবুর রহমান, সাবেক এমএলএ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ স.ম আলাউদ্দিনের মেয়ে ও জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক লায়লা পারভীন সেঁজুতি, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সরদার মুজিবসহ আরও অনেকে। সব মিলিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে সাতক্ষীরার ৪টি আসনের মধ্যে সাতক্ষীরা-১ আসনে শরিকদের বেশ চাপেই থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
সাতক্ষীরা-২: জাতীয় সংসদের ১০৬ (সাতক্ষীরা- ২) নম্বর আসনটি সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ উপজেলায় বর্তমান ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। স্বাধীনতার পর ১৯৮৪ সালে আসনটি সৃষ্ট হওয়ার পর আওয়ামী লীগ দুইবার, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি (এরশাদ) একবার ও এককভাবে জাতীয় পার্টি একবার নির্বাচিত হলেও আসনটি মূলত জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় থেকে টানা তিন মেয়াদে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের শরিক দলের প্রার্থী জয়লাভ করলেও মূলত জামায়াতের দুর্গ হিসেবে পরিচিত সাতক্ষীরা- ২ আসন। বিগত সময়ে এই আসনে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের ৫টিতে জয়লাভ করে তারা।
বর্তমানে সাতক্ষীরা-২ আসন থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে জয়লাভ করেন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য পত্র-পত্রিকায় সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন এই সংসদ সদস্য। তবে এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান। এ ছাড়া সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহম্মেদ, যুগ্ম-সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ আসাদুজ্জামান বাবু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এস এম শওকত হোসেনসহ প্রায় ডজনখানেক আওয়ামী লীগের নেতা এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চান বলে জানা গেছে।
সাতক্ষীরা-৩: জাতীয় সংসদের ১০৭ নম্বর নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৩ আসন। এটি কালিগঞ্জ উপজেলার আংশিক এলাকা ও দেবহাটা, আশাশুনি উপজেলা নিয়ে গঠিত। ১৯৮৪ সালে সৃষ্ট এ আসনে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। সাতক্ষীরা-৩ আসন তৈরি হওয়ার পর থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতে ৪ বার আওয়ামী লীগ, ৩ বার জামায়াত, একবার করে জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছে। এর ভেতরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনের আশাশুনি উপজেলার সঙ্গে দেবহাটা উপজেলা ও কালিগঞ্জ উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন যুক্ত হওয়ার পর থেকে টানা তিন মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক।
এর মধ্যে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করে তাদের প্রার্থিতা বাতিল করলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। পরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পেশায় চিকিৎসক আ ফ ম রুহুল হক ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন তিনি। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান। ডা. আ ফ ম রহুল হক ছাড়াও সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান নর্দান ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. ইউসুফ আবদুল্লাহ, আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম, দেবহাটা উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. গোলাম মোস্তফাসহ আরও অনেকে।
সাতক্ষীরা-৪: জাতীয় সংসদের ১০৮ নম্বর আসনটি নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৪ আসন। জেলার শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলার আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত এই আসনে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখেরও বেশি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি (জাপা) ও জামায়াতের একাধিক প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কালিগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নকে শ্যামনগর উপজেলার যুক্ত করার পর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে বর্তমানে টানা দুই মেয়াদে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম জগলুল হায়দার।
পেশায় ব্যবসায়ী জগলুল হায়দার ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান। তবে ওই নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করে তাদের প্রার্থিতা বাতিল করলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পেয়ে জয়লাভ করেন। টানা দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালীন দেশের সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত সংসদ সদস্যের একজন ছিলেন জগলুল হায়দার। 'একজন সংসদ সদস্য হয়েও শুধু আলোচনায় থাকার জন্য পরিমিতিবোধ হারিয়ে সরকারকে বিতর্কের মুখে ফেলে দিয়ে নিজেকে হাস্যকর বানিয়েছেন, সব সময়ই কথিত মানবিক কাজ করে তিনি আলোচনায় থাকতে চান'- এমনটাই ধারণা তার নিজ নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের। তবে এবারও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান তিনি।
জগলুল হায়দারসহ এ আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট কয়েকজন প্রার্থী রয়েছেন, যারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য শেখ মাসুদা খানম মেধা, শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল হক দোলনসহ হাফ ডজন আওয়ামী লীগের নেতা সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে এবার দলীয় মনোনয়ন পেতে নিজ নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগসহ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে চলেছেন। অপরদিকে মহাজোট থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে এই আসনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত এ এইচ এম গোলাম রেজা।
যেমন প্রার্থী চাচ্ছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কথা হয় সাতক্ষীরার ৪টি আসনের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা জানান, বর্তমান সরকার টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায়। এর মধ্যে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করলেও ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জোটের স্বার্থে সরে দাঁড়ান এবং ১৪ দলীয় ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীকে জয়ী করার পথ সৃষ্টি করে দেন। এরপর থেকে এ আসনটি আর ফিরে পায়নি আওয়ামী লীগ।
তবে এবার সাতক্ষীরা-১ আসনে কোনো শরিক দল না বরং আওয়ামী লীগের যেকোনো প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। আগের চেয়ে তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশ ছেলেমেয়ে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তা ছাড়া, দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে তৃণমূল পর্যায়ে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। যেটা সমাধানের জন্য একটা নির্দিষ্ট স্পেস প্রয়োজন। তবে ওখানকার উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে বিরোধ, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝেও বিরোধ। এ কারণে সাতক্ষীরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে এবার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিকল্প নেই বলে জানান তারা।
সাতক্ষীরার অন্য তিন আসন নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলেন, সাতক্ষীরার অধিকাংশ সংসদ সদস্য তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের খোজঁ রাখেন না। মূলত দলীয় গ্রুপিং, কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন মতবিরোধের কারণে নেতা-কর্মীরা বিভক্ত। যার প্রভাব পড়েছে বিগত সাতক্ষীরা পৌরসভা ও জেলার ৭টি উপজেলার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। এ কারণে কর্মীবান্ধব তরুণ নেতাদের সুযোগ দিয়ে বর্তমান সংসদ সদস্যদের ভেতরে বিতর্কিতদের নির্বাচনে না আসাটা যৌক্তিক মনে করছেন তারা।
কারণ হিসেবে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলেন, সবকিছুর জন্য একটা সময় রয়েছে। বর্তমানে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের অনেকে বিতর্কিত আবার অনেকের বয়স হয়েছে। এ কারণে বয়স বিবেচনায় তাদের উচিত হবে নতুনদের জায়গা তৈরি করে দেওয়া। আজ জেলার অঙ্গ-সংগঠনগুলো বিভক্ত, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যেও দূরত্ব। সবাই ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া। এতে করে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের ভিত অনেকাংশে দুর্বল হয়ে গেছে। যদি তরুণ বা যুবকদের সুযোগ না দেওয়া হয় তাহলে একদিন এই নির্বাচন সংক্রান্ত কারণে সবাই সংঘাতে জড়াবে। সেদিন অভিভাবক বলতে কেউ থাকবে না। এতে করে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব ধরে রাখাটা কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে বলে সংশয় প্রকাশ করেন তারা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সাধারণ জনগণের ভাবনা: বর্তমান সরকারের আমলে দেশে বহুমুখী উন্নয়ন হলেও সাতক্ষীরার কয়েকজন সংসদ সদস্য ও তাদের সমর্থকদের নিয়ে চাপা ক্ষোভ রয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। তারা বলেন, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে যারা সংসদ সদস্য রয়েছেন তারা সাধারণ জনগণের সেভাবে খোঁজখবর রাখেন না। বরং সেবার চেয়ে ফটোসেশনকে গুরুত্ব দেন অনেকে। আবার অনেক সংসদ সদস্যের সমর্থকদের কাছে জিম্মি সাধারণ জনগণ। বিভিন্ন সময় বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন তারা। যার সমস্যা পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ জনগণের। কোন দল কাকে মনোনয়ন দেবে সেটা ওই দলের একক সিদ্ধান্ত। তবে আমরা সাধারণ জনগণ যে প্রার্থীকে যোগ্য মনে করব দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে ভোট দেব।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে যা বলছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এ নির্বাচনে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলো অংশ নেবে বলে আমরা আশা করি।
'দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেমন প্রার্থীদের প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে?' প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই তার বিভিন্ন বক্তব্যে জানিয়েছেন, 'আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অপেক্ষাকৃত তরুণ, স্বচ্ছ নেতাদেরই গুরুত্ব দেবে দল এবং মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অবশ্যই দল এবং জনগণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্য হতে হবে।' এ কারণে আমরা ধারণা করছি, আগের চেয়ে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী বদল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
কারণ হিসেবে তারা বলেন, অনেক সংসদ সদস্য রয়েছেন, যারা কয়েকবার নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এলাকায় তাদের জনপ্রিয়তা ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তেমন সম্পর্ক নেই। সেখানে আমাদের সাংগঠনিক অবস্থান মজবুত হলেও প্রার্থী পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আবার বয়স বিবেচনায় এবার দলের অনেকে মনোনয়ন পাবেন না। তাদের পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত তরুণদের দল মনোনয়ন দেবে। কেননা এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মূল উদ্দেশ্য আগামী প্রজন্মের জন্য নেতৃত্ব তৈরি করে দেওয়া। আর সেই লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে নিয়মিত মাঠ জরিপ করছে। সরকারও তার বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে মাঠপর্যায়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা ও গতিবিধি সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন। জনসমর্থনে যার অবস্থান সবচেয়ে ভালো হবে তিনিই হয়তো পাবেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন।
সব মিলিয়ে সাতক্ষীরার ৪টি আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে যদি কেউ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পান সেক্ষেত্রে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই। আর আওয়ামী লীগ যদি এবারের নির্বাচনে আগামীর নেতৃত্ব তৈরির জন্য বিতর্কিতদের রেখে কর্মীবান্ধব তরুণ নেতাদের অগ্রাধিকার দেয় সেক্ষেত্রে জয়ের পথ অনেকটা সুগম হবে এমনটাই ধারণা রাজনীতি বিশ্লেষকদের। তবে সাতক্ষীরার ৪টি আসনের মধ্যে কোন আসন শরিকের জন্য ছেড়ে দিতে হবে সেটা নিয়ে যেমন চিন্তিত এখানকার নেতাকর্মীরা ঠিক তেমনি আওয়ামী লীগের ভাবনার কারণ বিতর্কিত কাউকে মনোনয়ন দিলে সিট হারানোর সম্ভাবনা। এতে করে সব হিসাব-নিকাশই নতুন করে ভাবাচ্ছে দলটিকে।
এসজি