‘কখনো ভাবিনি ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পাব’
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার আলিপুর গ্রামের মিলন হাওলাদারের মেয়ে সুরাইয়া (২০)। তার বাবা একজন কৃষক। কিন্তু পরিবারের বড় সন্তান তিনি। মা আর ছোট দুই ভাই-বোনকে তার অভাব বুঝতে দেননি। এরই মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে মাদারীপুর সুফিয়া সরকারি কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হন সুরাইয়া। তার মধ্যে খবর পেলেন পুলিশের কনস্টেবল পদে লোক নেওয়া হবে। তার তিন বান্ধবী আর বাবা-মায়ের কাছ থেকে ১২০ টাকা নিয়ে খরচ করে চাকরির জন্য আবেদন করেন। কয়েক দিন পর ডাক পড়ে তার। শারীরিক ফিটনেস, নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তারপর লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা। সবশেষে কোনো ধরনের অনৈতিক সুবিধা ছাড়াই চাকরি!
শুধু এমন একজন সুরাইয়াই নয়, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশের কনস্টেবল পদে আবেদন করে দরিদ্র অসহায় এমন আরো অনেক পরিবারের তরুণ-তরুণী। তারাও পুলিশে চাকরির সুযোগ পেলেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের রাজমিস্ত্রি দিলীপ মন্ডলের মেয়ে দিপানীসা মন্ডল ও হরিদাসপুর গ্রামের রিকশা ভ্যানচালক জামাল হোসেনের ছেলে শাওন হোসেনসহ অনেকে। এদের কারোর বাবা নেই, আবার কারোর বাবা দিনমজুর বা রিকশা ভ্যানচালক কিংবা রাজমিস্ত্রি। কোনো ধরনের তদবির এবং অনৈতিক চাপ ছাড়াই পুলিশ কনস্টেবল পদে এমন চাকরি।
সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টায় মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম ট্রেইনি পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন। এতে ৩৮ জন ছেলে ও ৭ জন মেয়ে প্রাথমিকভাবে ট্রেইনি পুলিশ কনস্টেবল পদের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচিতদের নাম ঘোষণার সময় জেলা পুলিশ লাইন মাঠে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তাদের সবাই।
কনস্টেবল পদে চাকরি পাওয়া মোহাম্মদ সাকিলুর রহমান বলেন, শুনেছি সরকারি চাকরির জন্য অনেক টাকা-পয়সা লাগে। অনলাইনে ১২০ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করেছিলাম। ১২০ টাকার বেশি লাগেনি। আমি কখনো ভাবি নাই ১২০ টাকায় চাকরি পাব আল্লাহ আমারে যোগায় দিছে।
আরেক চাকরি পাওয়া মশিউর রহমানের মা আলেয়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী রিকশা চালায়। দিন আনতে দিন খাইতে কষ্ট হয়। সরকারি চাকরি হইবো পুলিশের আমি কখনো ভাবি নাই। আমি আমার দেওরের ছেলের কাছ থেকে ১২০ টাকা এনে দিলে ছেলে আবেদন করেন। পরে ১২০ টাকায় চাকরি পাইছে আল্লাহর রহমতে। আমরা জানতাম পুলিশে চাকরি নিতে হলে অনেক টাকা লাগে আজকে ১২০ টাকাই আমার ছেলে চাকরি পাইছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।
নাইমারের বাবা সোহরাব মোল্লা বলেন, আল্লাহ আমাকে মুখের দিকে তাকাইছে। আমরা গরিব মানুষ কখনো ভাবি নাই আমার মেয়ে চাকরি পাইবো।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম বলেন, আমরা খুবই স্বচ্ছতার সঙ্গে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। কাউকে কোনো অসদুপায় অবলম্বনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। মেধাবী এবং শারীরিক যোগ্যতা সম্পন্ন তরুণ-তরুণীদের আমরা চাকরি দিয়েছি। আশা করি, নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা পুলিশ বিভাগ ও দেশের সম্মান বৃদ্ধি করবে।
উল্লেখ্য, এবারের ট্রেইনি পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষায় মাদারীপুর জেলার ৪৫টি পদের বিপরীতে ১ হাজার ৪৮০ জনের অধিক তরুণ-তরুণী অনলাইনে আবেদন করেছেন। পরে যাচাই-বাছাই করার পরে ৮৭৬ জন টিকে। এর মধ্যে ২৯৩ জন লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হন। লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেন মাত্র ১২৪ জন। এদের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা শেষে ৫৪ জনকে চূড়ান্তভাবে ট্রেইনি কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়।
এসআইএইচ