নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন
তৈমুরের পরাজয়ের নেপথ্যে
সদ্যসমাপ্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি থেকে অব্যাহতি পাওয়া তৈমুর আলম খন্দকার প্রায় ৬৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত তৈমুর আলম খন্দকার বারবার বলে যাচ্ছিলেন তিনি লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবেন। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো। তিনি পরাজিত হয়েছেন। নির্বাচনী ফলাফল মেনে নিলেও বলেছেন, ইভিএমে সূক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে। কিন্তু আসলে কি তাই?
কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে যারা কাজ করেছেন, যারা খুব কাছ থেকে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন তারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচনী দৌড়ে যোজন যোজন পিছিয়ে ছিলেন। অনেকগুলো কারণে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেননি। মুখে আওয়াজ তুললেও নির্বাচনী মাঠে তার কর্মী-সমর্থক ছিল না বললেই চলে।
তৈমুর আলম খন্দকার পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, ব্যক্তি ইমেজের দিক থেকে সেলিনা হায়াত আইভীর চেয়ে অনেক গুণ পিছিয়ে ছিলেন তৈমুর। ভোটের মাঠে নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে মাঝপথে এসে নিজের দল বিএনপি তাকে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টার পদ থেকে অব্যাহতি দেয়। একই সঙ্গে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী দলসহ বিভিন্ন ফোরাম থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এটি তার নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলে।
দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ফলে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি'র নেতাকর্মীদের বড় অংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। এটা তার আরেকটা বড় দুর্বলতা ছিল। শোনা গেছে, বিএনপির হাইকমান্ড নারায়ণগঞ্জের দলীয় নেতাকর্মীদের তৈমুরের পক্ষে কাজ না করার জন্য হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিল। এ কারণে দলীয় নেতা-কর্মীদের বড় অংশ তার সঙ্গে মাঠে নামেনি।
বরং নারায়ণগঞ্জ বিএনপি'র একটি অংশ সেলিনা হায়াত আইভীর পক্ষে নীরবে কাজ করেছে। এটা তৈমুর আলম খন্দকার এর জন্য নেতিবাচক হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ এর রাজনীতিতে আলোচিত ওসমান পরিবারের প্রতিনিধি শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরা তৈমুর আলম খন্দকার এর পক্ষে মাঠে রয়েছেন। তার প্রতি শামীম ওসমানের সমর্থন রয়েছে। এমন প্রচারণাও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন, সেলিনা হায়াত আইভীর জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। এর বিপরীতে তৈমুর আলম খন্দকার ভবিষ্যতে নারায়ণগঞ্জ এর জন্য কি করবেন, কি করতে চান সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ইশতেহার দিতে পারেননি। যদিও এবারের নির্বাচনে আইভীও কোন সুনির্দিষ্ট ইশতেহার দেননি। তারপরও গত ১০ বছর ধরে মেয়র থাকার প্রেক্ষিতে তার জনপ্রিয়তা তৈরি হয়ে গেছে। যেটিকে টেক্কা দেয়ার মত কোন কৌশল তৈমুর আলম খন্দকারের ছিল না। এখানেও তিনি পিছিয়ে ছিলেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দারা মনে করেন, তৈমুর যদি বিএনপি'র প্রার্থী হতেন এবং বিএনপির নেতাকর্মীরা যদি মাঠে থাকতো তাহলে লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি হত। একটা সম্ভাবনার জায়গা তৈরি হতো। কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মীদের অবস্থান না থাকায় তৈমুরকে একা লড়াই করতে হয়েছে। নির্বাচনের দিন প্রত্যেকটি ভোটকেন্দ্রের বুথে বুথে তৈমুরের এজেন্ট থাকলেও কেন্দ্রের বাইরে তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি তৈমুর সমর্থকদের।
তৈমুর সমর্থকদের ধারণা ছিল, এবারের নির্বাচনে নীরব বিপ্লব হবে। এই আশা নিয়ে তৈমুর আলম খন্দকার বারবার বলে যাচ্ছিলেন লক্ষাধিক ভোটে তিনি বিজয়ী হবেন। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো।
এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের রাজনীতিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা ডাক্তার সেলিনা হায়াত আইভীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে গিয়ে কোন ক্যারিশমাই দেখাতে পারেননি তৈমুর। এসব কারণেই তৈমুরকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরিবর্তে বড় পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে।
এনএইচবি/কেএফ/