ডিম-ব্রয়লারে আগুন, বেড়েছে আদা-রসুনের দামও
রোজা আসতে এখনো এক মাস বাকি থাকলেও নীলফামারীর বাজারগুলোতে বেড়েছে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচাবাজারের প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে ব্রয়লার মুরগি, সোনালি মুরগি ও ডিমের দাম হু হু করে বেড়েছে। দাম বেড়েছে রসুন, আদা, মরিচের।
প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে। পটলের কেজি ১০০ টাকা ও প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও কেজিপ্রতি রসুনের দর ছিল ৬০ টাকা। এদিকে প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিম ৪৫ টাকা, দেশি ডিম ৭০ টাকা ও হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে হালি প্রতি ৮০ টাকা দরে। জেলার প্রায় সবকটি হাটবাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। দাম বেড়েছে সব ধরনের মসলার। জিরা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজি দরে।
ভ্যানচালক বাতেন বলেন, আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষজন ডিমকেই মাংসের সঙ্গে তুলনা করি। অথচ ডিমের যে দাম আমাদের পক্ষে কেনা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রশিদ নামে এক রিকশাচালক বলেন, বড় ঈদের পর থেকে গরুর মাংস খাওয়া বাদ দিতে হয়েছে দামের কারণে। মাঝে মাঝে ব্রয়লার মুরগি ও ডিম নিয়ে যেতাম। এখন ব্রয়লার মুরগির যে দাম ৭ দিনে একবারও ব্রয়লার মুরগি কিনতে পারিনি। ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি ডিমের দামও বেড়ে যাওযায় তাও খাওয়া বাদ দিতে হচ্ছে।
লতিফ নামে এক ক্রেতা জানান, এক সপ্তাহ আগেও ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকা কেজি করে কিনেছি। আজ বাজারে ২২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তাই মুরগি না কিনে খালি হাতেই বাড়ি যেতে হচ্ছে।
রাজ্জাক নামে এ ক্রেতা বলেন, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ছাড়া সব সবজির দাম বেড়েছে। পটল, করলা কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকার উপরে। বেড়েছে সকল মসলার দাম। জিরার দাম আকাশ ছোঁয়া এ ছাড়া বেড়েছে এলাচ, লবঙ্গ ও দারুচিনির দামও।
সুমন নামে আরেক ক্রেতা বলেন, গত দুই সপ্তাহ থেকে বাড়তি দামেই বাজার করতে হচ্ছে। এখানে কোনো জিনিসের দাম বাড়লে আর কখনো কমে না।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তেলের দাম বাড়ার পর পরই বেড়ে গিয়েছিল ডিম ও মুরগির দাম। তবে বাজার মনিটরিং করার ফলে এক সপ্তাহের মধ্যেই দাম কমে গিয়েছিল। হঠাৎ করে দুই সপ্তাহ থেকে আবারও বাড়তে শুরু করেছে ডিম ও মুরগির দাম। বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি ২৩০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা ও দেশি মুরগি ৪৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতো ১৫০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৩০ টাকা ও দেশি মুরগি বিক্রি হতো ৩২০ টাকা দরে। বাজারে ব্রয়লারের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা দরে। দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই দাম শুনেই পণ্য না কিনে চলে যাচ্ছে। দাম বাড়ার কারণে বিক্রিও অনেক কমে গেছে।
সবুজ নামে এক বিক্রেতা জানান, দাম বাড়ার কারণে কমে গেছে মুরগির বিক্রি। দিনে যেখানে দুই মনেরও বেশি মুরগি বিক্রি করতাম, দাম বাড়ার কারণ এখন দিনে ৩০ কেজির মতো মুরগি বিক্রি হয়। তা ছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষ ব্রয়লার মুরগি কিনত। দাম বাড়ার কারণে ব্রয়লার বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে। এদিকে মাছের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। দেশি মাছের দাম আকাশ ছোঁয়া।
দেশি মাছ ৬০০ টাকার নিচে কেজিতে পাওয়া যায় না। আর কিছুদিন পরেই রমজান মাস আর এই মাস সামনে রেখে অনেক ব্যবসয়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। তাই ক্রেতারা দাবি করেছেন এখন থেকেই যদি বাজার মনিটরিং করা যায় তবে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরবে জনমনে।
মুরগি বিক্রেতা মাহবুব জানান, সরবরাহ কম থাকায় দাম বেশি। তা ছাড়া কাজী ফার্মের মুরগি না ছাড়ার কারণেও ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে গেছে।
ডিম ব্যবসায়ী লেমন জানান, প্রতি হালি ডিম কিনতে হয় ডিলারের কাছ থেকে ৪৩ টাকায়। তা ছাড়া অনেক ডিম ভেঙে যায় সেসব ডিম কম দামে বিক্রি করতে হয়। ফলে ৪৫ টাকা হালিতে ডিম বিক্রি করলেও লাভ থাকে না।
নীরফামারী জেলা ভোক্তা অধিকারের পরিচালক সামসুল আলম জানান, প্রতিদিনই বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। সমন্বয় কমিটির মিটিংয়ে বাজার নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
এসএন