নাটোরে ৩ হাজার একর আবাদী জমি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে!
নাটোরের সর্বত্রেই চলছে ভূমি দস্যুদের পুকুর খননের মহোৎসব। নানা কায়দা, কৌশলে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাত-দিন কাটা হচ্ছে একের পর এক বিশাল আকারের পুকুর-এমন অভিযোগ কৃষকদের। এতে একদিকে যেমন কৃষি আবাদি জমি ধ্বংস হচ্ছে তেমনি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত এক ইঞ্চি জায়গা অনাবাদি না রাখার ঘোষণাকে দেখানো হচ্ছে বৃদ্ধাঙ্গুলি। ওই পুকুর কাটার প্রভাবে দিনের পর দিন বেকার হচ্ছেন কৃষকরা। অথচ হাতে গোনা কয়েকজন ভূমিদস্যুর স্বার্থের কারণে খাদ্য সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে নাটোরের আপামর কৃষকরা।
নাটোর সদর উপজেলার বড় হরিপুর ইউনিয়নের ভেদরার বিলে রয়েছে ৩ হাজার একর কৃষি জমি। জমিগুলো তিন ফসলী এবং দুই ফসলী। ২০টি গ্রাম সংলগ্ন ওই বিলে ভূমি দস্যুরা ইতিমধ্যেই ২০ বিঘা, ৩০ বিঘা করে ১০টি পুকুর খনন করেছেন বলে অভিযোগ কৃষকদের। এতে আশপাশের জমিগুলো বর্ষায় ভাঙনের পাশাপাশি অনাবাদি হয়ে পড়ছে। ওই বিলে বাড়ছে জলাবদ্ধতা।
কৃষকদের দাবি, ওই বিল দিয়ে বর্ষাকালে ২২টি বিলের অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হয়ে স্থানীয় শাখা নদীর মাধ্যমে পদ্মা নদীতে চলে যায়। ধান, পাট, গম, ভুট্টা, রসুন ও সরিষা থেকে শুরু করে সব ধরনের চৈতালী ফসলি উৎপাদিত হয় ওই বিলের জমিতে। অথচ ভূমি দস্যুদের কবলে তারা একত্রিত হয়েও কিছুই করতে পারছেন না। ভূমি দস্যুদের হাত থেকে বাঁচতে ওই এলাকার ৭৭০ জন কৃষক মিলে ফসলি জমি রক্ষা ও সমাজ উন্নয়ন সংগঠন নামে একটি সংস্থা করেছেন। ওই সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন, স্মারকলিপি, বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন তারা। তার পরেও রক্ষা করতে পারছেন না তাদের জমি আর একের পর এক তাদের বেকার হওয়া থেকে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান,ফসলি জমিতে পুকুর কাটার বিরুদ্ধে প্রশাসন অত্যন্ত তৎপর। এমন কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যদি প্রশাসনের কেউ ওই কাজে জড়িত থাকে তবে সত্যতা নিশ্চিত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগেও বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারী) পুকুর কাটা নিয়ে ভেদরার বিলে ধলাট গ্রামে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে এলাকার শত শত কৃষক। এ সময় তারা দাবি করে, ধলাট গ্রামের সুবাহানের ছেলে শহীদ এবং রবির হাটের আফছুরের ছেলে শহীদুল্লাহসহ শহরের বেশ কিছু প্রভাবশালী মানুষ যাদের লাখ লাখ কালো টাকা রয়েছে তারা একের পর এক কিনছেন ওই বিলের জমি। গরিব কৃষকদের টাকার লোভ দেখিয়ে শত শত বিঘা জমি কিনছেন তারা। এরপরে সেই জমিগুলো অনাবাদি রাখছেন বছরের পর বছর। এক পর্যায়ে ওই জমিগুলোকে অনাবাদি দেখিয়ে তারা একের পর এক পুকুর কেটে মাটি বিক্রি করছেন।
মানববন্ধন,বিক্ষোভ করলেও প্রশাসনের সহযোগিতায় রাতের আঁধারে তারা ভেকু দিয়ে মাটি কাটছেন এমন দাবি করেন মানববন্ধনে অংশ নেওয়া কৃষক নেতারাও।
ফসলি জমি রক্ষা ও সমাজ উন্নয়ন সংগঠনের সহ-সভাপতি শামীম সরকার জানান, বংশ পরম্পরায় তারা ওই বিলের দুই ফসলি এবং তিন ফসলি জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অথচ ওই বিলের জমি একের পর এক পুকুর খনন করে মাটি বিক্রি করায় পুকুরের আশপাশের জমিগুলোর ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্ষাকালে বাড়ছে জলাবদ্ধতা। কাজ হারাচ্ছেন তারা। এতে কিছু ভূমি দস্যুর স্বার্থে হাজার হাজার কৃষকদের পেটে লাথি মারা হচ্চে। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত এক ইঞ্চি জায়গা ফাকা না রাখাকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে।
তার দাবি, প্রশাসনের সহযোগিতায় ওই ভূমি দস্যুরা রাতের বেলায় জমি কাটছেন ভেকু দিয়ে। তারা একের পর এক ওই সোনার ফসল ফলানোর জমিগুলো কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন তারা তাদের জমিতে আবাদ করা নিয়ে সমস্যায় পড়ছেন অপরদিকে বেকার হচ্ছেন শত শত কৃষক।
ওই স্বার্থান্বেসী মহলের কারণে হাজারো কৃষকের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। বেকার হয়ে যাচ্ছেন তারা। এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না দাবি করে তিনি বলেন, জমি রক্ষার জন্য প্রয়োজনে তারা জীবন দেবেন। তারপরেও তারা চান না যে এই ধরনের পুকুর আর খনন করা হোক। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীসহ সকলে সুদৃষ্টি ও পদক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রেখেছিলেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক বাবুল হোসেন,সদস্য দেলোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম,সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মহসিনসহ স্থানীয় কৃষকরা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মহসিন জানান, ইতিমধ্যে ওই বিলের ৫০০-৭০০ বিঘা জমিতে পুকুর কাটা হয়েছে। আরো ২০০- ৩০০ বিঘা জমিতে পুকুর কাটার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ভূমি দস্যুরা। ওই ভূমি দস্যুদের কালো টাকা আর ক্ষমতার কাছে তারা অসহায় দাবি করে এর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীসহ সকলের সুদৃষ্টি ও আশু কার্যকরী পদক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এসআইএইচ