যশোরে পানির জন্য হাহাকার, স্তর নেমেছে ৩২ ফুট
যশোরাঞ্চলে গরম শুরুর আগেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে ৩২ ফুট নিচে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বেশিরভাগ এলাকায় পানির স্তর নেমেছে ২৬ ফুট। কঠিন হয়ে পড়ে নলকূপের পানি উঠানো। বৃষ্টির অভাব ও অপরিকল্পিতভাবে গভীর-অগভীর নলকূপ স্থাপনের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিমত তাদের।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সূত্রে জানা যায়, জেলায় গভীর নলকূপের সংখ্যা ১ হাজার ৮৬৭টি। এসব নলকূপ দিয়ে ২৫ হাজার ২২৩ হেক্টর আবাদি জমিতে পানি দেওয়া হয়। এ ছাড়া, ৬৩ হাজার ৭৯৩টি শ্যালো ও টিউবওয়েল দিয়ে ১ লাখ ২৩ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমিতে সেচ দেন কৃষক। এর বাইরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, এলজিইডি, পৌরসভার আওতায় আরও কয়েক হাজার গভীর-অগভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপ দিয়ে জমিতে সেচের পাশাপাশি লাখ লাখ মানুষের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার হচ্ছে পানি।
বিএডিসি যশোরের যুগ্ম পরিচালক (সার) রোকনুজ্জামান বলেন, পর্যাপ্ত পানির অভাবে ফসলের কাঙ্ক্ষিত ফলন বিঘ্নিত হয়। পর্যাপ্ত সার বা কীটনাশক দিয়ে কাঙ্ক্ষিত ফলন আশা করা যায় না।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, যশোর জেলায় মোট অগভীর নলকূপের সংখ্যা ২৪ হাজার ৩২৩টি। অন্যান্য বছর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যেতে থাকায় নলকূপগুলোতে মার্চ মাস থেকে ক্রমান্বয়ে পানি ওঠা বন্ধ হতে থাকে। তবে, চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে জেলার অন্তত এক তৃতীয়াংশ নলকূপ দিয়ে পানি উঠছে না। এই হিসেবে বর্তমানে পানি উঠছে না আট হাজারেরও বেশি নলকূপে। সামনের খরায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।
যশোরে মাঘ মাস থেকে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নামতে শুরু করে। ঠিক সেই সময় বোরো ধানের রোপণ শুরু হয় জোরেসোরে। আবাদের শুরুতে ভূগর্ভস্থ লেয়ারের এমন অবস্থায় চাষিরা শঙ্কিত। তারা পুরো বোরো মৌসুমে বড় ধরনের পানি সংকটের আশঙ্কা করছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে বোরো আবাদে প্রভাব পড়বে বলে কৃষি বিভাগ মনে করছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ পারভেজ জানান, জেলার কোথাও কোথাও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। পানির স্তর ২৬ ফুটের নিচে নামলে নলকূপে পানি পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। তারপরও সদর উপজেলায় ২৫ থেকে ৩২ ফুট নিচে নেমে গেছে পানির স্তর। বাঘারপাড়া, ঝিকরগাছা ও শার্শা এলাকায় একই অবস্থা দেখা দিয়েছে। অভয়নগর ও মণিরামপুরে পানির স্তর স্বাভাবিক পর্যায়ে আছে।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র যশোর সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৬২৫টি নলকূপ, সাব মার্সিবল ও তারা টিউবয়েল রয়েছে। এ উপজেলার কয়েক এলাকায় ২৫ থেকে ৩২ ফুটের নিচে পানির উপস্থিতি দেখা গেছে। সামনে পানির স্তর আরও নামতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন।
সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের ফরিদ আহমেদ রজব বলেন, তিনি এবছর পাঁচ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। কিন্তু স্তর নেমে যাওয়ায় জমিতে পানি দেওয়া কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আবু তালহা বলেন, চলতি মৌসুমে যশোরে ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ হয়েছে। বাকিটা কয়েক দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরে বোরো আবাদের আগে বৃষ্টিপাত হলেও এবছর এখনো বৃষ্টির দেখা মেলেনি। দ্রুত বৃষ্টিপাত হলে এ পরিস্থিতির উত্তরণ হবে। তা না হলে সেচের অভাবে বোরো আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
যশোর পৌরসভায় ২৯টি গভীর নলকূপ, ৫০০ তারা পাম্প এবং ৪-৫ হাজার টিউবয়েল ও সাব মার্সিবল রয়েছে। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এর দুই-তৃতীয়াংশে ইতোমধ্যে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে।
পৌরসভা বলছে, যশোর শহরে বর্তমানে ১০ হাজারেরও বেশি পানির গ্রাহক রয়েছেন। এসব গ্রাহকের দৈনিক পানির চাহিদা ২২ লাখ গ্যালন। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনে পৌর কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের কতটুকু পানির চাহিদা পূরণ করতে পারবে তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে।
পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী বিএম কামাল আহম্মেদ বলেন, সাধারণত ফাল্গুন মাসের শেষের দিকে এ অঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে গেলেও এবার একটু আগেই পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নেমে গেছে। এটি সামনে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
এসএন