মুক্তিযোদ্ধা মজিবর মাষ্টার পাচ্ছেন ২১ শে পদক

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের পদাগঞ্জ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর মাষ্টার ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ একুশে পদক-২০২৩ পাচ্ছেন।রোববার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আলহাজ্ব মোঃ মজিবর রহমান মাস্টার এখন বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়েছেন। রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের পদাগঞ্জ গ্রামে। ১৯৩৭ সালে এ গ্রামেই তার জন্ম। তিনি প্রয়াত সেরাজ উদ্দিনের ছেলে। মজিবর রহমান মাস্টার তিন সন্তানের জনক। দুই ছেলে মোস্তাফিজার রহমান মজনু শিক্ষক ও মোস্তাকুর রহমান প্রকৌশলী। আর মেয়ে মোনসেফা খানম গৃহিণী।
ভাষা সৈনিক আলহাজ মজিবর রহমান মাস্টার ১৯৫২ সালে বদরগঞ্জ থানা ঘেরাও করেছিলেন সেই সময়ে ১১জনের নামে মামলা হয়েছিল। তিনি ছিলেন প্রধান আসামি। মজিবর রহমান মাস্টার বদরগঞ্জে কমিউনিস্ট পার্টির নেতা জীতেন দত্ত, ইদ্রিস লোহানী ও ইউসুফ লোহানীর অনুপ্রেরণায় ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি ছিলেন মেট্রিক পরীক্ষার্থী। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার সময় মজিবর মাস্টার বদরগঞ্জের শ্যামপুর হাই স্কুলে সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
১৯৭১ সালে ঢাকার রেডক্রস ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ভাষণের পর তিনি বদরগঞ্জে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। ওই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।আহ্বায়ক ছিলেন এমএলএ এলাহী বকস্ সরকার। সে সময় শ্যামপুর আঞ্চলিক সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক করা হয়েছিল।
মজিবর রহমান মাস্টার বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু এই তিনটি শ্লোগানকে বুকে ধারণ করে ২৮ মার্চ হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষ রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করতে গিয়েছিলেন। রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাওয়ের সময় পাকহানাদারের গুলিতে অসংখ্য মুক্তিকামী মানুষ শহীদ হন।
পহেলা এপ্রিল ১৯৭১ সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ক্যাপ্টেন আনোয়ারের নেতৃত্বে ৩ শতাধিক আনছার, পুলিশ ও সেনা সদস্য বদরগঞ্জে আসেন। এ বহরে অংশ নেন মজিবর মাস্টার। বদরগঞ্জ থেকে তারা দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে যান। সেখানে তাদের গ্রেনেড দিয়ে যুদ্ধে যাওয়ার প্রশিক্ষণ শুরু করেন। বাবার কাছে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য বিদায় নিয়ে ৬নং সেক্টরের কমান্ডার ক্যাপ্টেন নোয়াজেসের সঙ্গে তিনি নীলফামারীর চিলাহাটির ৩টি স্থানে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের সঙ্গে কলকাতায় দেখা করেন। তিনি ভারতের কুচবিহারের টাপুরহাট ইয়থ ক্যাম্পে সহকারী রিক্রুটিং অফিসার হিসেবে যোগ দেন।
আলহাজ মজিবর রহমান মাস্টার যুদ্ধাপরাধী এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলার প্রধান স্বাক্ষী ছিলেন। তাকে বহুবার হুমকি দেয়া হয়েছিল। তা উপেক্ষা করে তিনি স্বাক্ষী দিয়েছেন। যুদ্ধ অপরাধী আজহারের বাাড়ি তার পাশের গ্রামে। স্বাধীনতার পর তিনি বিসিআইসি চেয়ারম্যান ছিলেন কয়েক বছর। স্কাউটসে রাষ্ট্রপতি পদকপ্রাপ্ত হয়েছেন।
ভাষা সৈনিক আলহাজ মজিবর রহমান মাস্টার ১৯৬৯ সাল থেকে ৯০ সাল পর্যন্ত রংপুরের বদরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাকশাল গঠনের পর তিনি দীর্ঘদিন রংপুর জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বদরগঞ্জের কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যনও ছিলেন।
এএজেড
