পঞ্চগড়ে স্বল্প খরচে মিলছে সেচের পানি

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের করতোয়া নদী পাড়ের গ্রাম ফুলতলা। এই গ্রামে অন্তত ২ হাজার মানুষের বসবাস। যাদের বেশীর ভাগই কৃষির উপর নির্ভরশীল। তবে কৃষি জমিতে সেচের পানির সংকট ছিল তাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা। এক সময় সেচের অভাবে এই গ্রামের বেশির ভাগ জমিতে ফসল ফলানো ছিল কষ্টসাধ্য ব্যাপার। প্রায় সময় কৃষি কাজ ব্যাহত হতো। যা এই গ্রামের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল। এ সমস্যা সমাধানে কৃষকদের পাশে এসে দাড়িয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেচ প্রকল্পের আওতায় স্থাপন করেছে ৩টি হাল্কা সেচ পাম্প। স্বল্প খরচে প্রকল্পের সেচের পানি পেয়ে কৃষকেরা নদীর উভয় পাড়ের জমিতে আলু, সরিষা, শিম, পিঁয়াজ, বেগুনসহ নানা ধরনের সবজি ও বোরো ধানের চাষাবাদ শুরু করেন। এতে সুদিন ফিরতে শুরু করে এলাকার মানুষের। বদলে যায় গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা। আর এই সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে শুস্ক মৌসুমে এই অঞ্চলের কৃষিতে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ১১০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে শতভাগ জমি সেচের আওতায় এসেছে। যার সুফল সরাসরি পাচ্ছেন কৃষকরা।
এ ছাড়াও ইউনিয়নের আহম্মদনগর ও বেংহারী গ্রামের শতভাগ জমি এই প্রকল্পের আওতায় এনেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বেড়েছে চাষাবাদ। উৎপাদিত হচ্ছে ধান, গম, আলু, ভূট্টা সহ নানা ধরনের ফসল, যা দেশের জাতীয় উৎপাদনে ভূমিকা রাাখছে। খরপোষ কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষি বদলে দিয়েছে গ্রামগুলোতে বসবাসরত মানুষের জীবনধারা।
বোরো ধানের সেচ সুবিধায় বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে এই সেচ প্রকল্পের আওতায় থাকা তিনটি সেচ পাম্প ইউনিট চালু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেচ প্রকল্প পরিদর্শনে আসেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের উপপ্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রফিউল বারী, দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. আবু নাসের ওবায়দুল্লাহসহ সেচ সুবিধাভোগী পানি ব্যবস্থাপনা দলের কৃষকরা।
বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামের ফরিদুল ইসলাম বলেন, এ সময় আমাদের এলাকার বেশিরভাগ জমি পতিত থাকত। পানির অভাবে চাষাবাদ করা যেতো না। করতোয়া নদীর দুই তীরের মানুষজন কৃষিতে তেমন সুবিধা করতে পারতাম না। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের সেচের ব্যবস্থা করেছে। আমাদের গ্রামের সবাই শতভাগ জমিতে সেচ সুবিধা পাচ্ছে। এখন আমরা শান্তিতে কৃষিকাজ করতে পারছি।
একই ইউনিয়নের বেংহারী গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, বোরো ধানের চাষ করব কিন্তু সেচের পানি নেই। এক সময় এই দুঃচিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেত। সেচ পাম্প স্থাপন করে সেচ দিব, যা ছিল কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল বিষয়। তবে সেই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। বর্তমানে আমরা কম খরচে অধিক পানি পেয়ে শান্তিতে কৃষিকাজ করছি। এখন আর আমাদের কোনো সমস্যা নেই।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের উপপ্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রফিউল বারী বলেন, কৃষিকে আরো লাভজনক ও আধুনিকীকরণে সেচ সুবিধার বিকল্প নেই। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এ কাজে এগিয়ে এসেছে। আমরা কৃষকের সেচ সুবিধায় সেচ প্রকল্পের তিনটি ইউনিটের পাম্পগুলো চালু করেছি। ফলে স্বল্প খরচে সেচ সুবিধা পাচ্ছে চাষীরা। আমরা আশা করি দেশকে খাদ্যে সমৃদ্ধি করার জন্য এ প্রকল্প অবদান রাখবে।
এসআইএইচ
