নওগাঁয় কৃষিখাতে বাড়ছে মিশ্র ফলের চাষ
নওগাঁর সাপাহারে আম গাছের সারির ফাঁকে ফাঁকে বরই গাছ। চার ফুট উচ্চতার গাছগুলোর ডালে থোকায় থোকায় ধরে আছে বরই। পরিপক্ব বরইগুলো দেখতে অনেকটা লাল ও সবুজ আপেলের মতো। উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা আম, বরই মিশ্র ফলের চাষ করে এখন সাবলম্বী। পাশাপাশি এসব মিশ্র বাগানে কাজ করে খেয়েপরে সুখে আছে আরও প্রায় একহাজার পরিবার।
এই উপজেলায় অনেকটাই সম্ভাবনাময় মিশ্র ফলের চাষ। সারাদেশে এই উপজেলা আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত। কিন্তু বর্তমানে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফার আশায় বরই চাষে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকেদের মাঝে।
চলতি মৌসুমে ইতিমধ্যে আম বাগানে নানান জাতের বরই সংগ্রহ ও বাজারজাত করণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির বরই। শুরুতেই বাজারদর ভালো থাকার ফলে সন্তোষ প্রকাশ করছেন বরই চাষিরা। স্বল্পমেয়াদে অধিক ফলন ও লাভবান হবার ফলে বরইচাষে আগ্রহের সীমা নেই এলাকার চাষিদের।
উপজেলা সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতাউর রহমান সেলিম বলেন, চলতি বছরে এই উপজেলায় মোট ২৫ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির বরই। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাত গুলো হল, কাশ্মীরি, বলসুন্দরী, বাহুকুল, আপেলকুল। তবে বেশিরভাগ চাষিরা বলসুন্দরী ও আপেলকুল চাষ করছেন।
তিনি বলেন, এই মৌসুমে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রতি হেক্টর জমিতে ৬/৮ মেট্রিকটন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বলসুন্দরী জাতের বরই এর বাজার চাহিদা বেশ ভাল। খেতে সুস্বাদু হবার ফলে বেশিরভাগ চাষিরা বলসুন্দরী জাতের বরই চাষ করছেন। কাশ্মীরি জাতের বরই নির্ধারিত সময়ের পরে ফলন হয়। যার জন্য এই জাতের বরইও চাষ করছেন অনেকেই।
তিনি আরও বলেন, আম চাষ ব্যাপক লাভজনক। কিন্তু আম গাছ রোপনের পর প্রায় দু বছর পর আম পাওয়া সম্ভব। বরই চাষে তেমন বেশি সময় লাগেনা। স্বল্প সময়ে পাওয়া উৎপাদন সম্ভব হওয়ায় এটি একটি লাভজনক চাষ বটে। যার ফলে কৃষকেরা বর্তমানে মিশ্র বাগানে বরই চাষে ব্যাপক ভাবে ঝুঁকে পড়েছেন।
বরই চাষি সিরাজুল ইসলাম জানান, গত বছরে তিনি বরই চাষ শুরু করেন। আবহাওয়া ও মাটির গুণগত মান ভালো হবার ফলে বরইয়ের উৎপাদন অনেক ভালো। হারভেষ্টিংয়ের পরে পাইকারেরা জমিতে এসে বরই নিয়ে যাচ্ছেন। চলতি বছরে বাজারে বলসুন্দরী জাতের বরই প্রতিমন বিক্রয় হচ্ছে ২২ থেকে ২৪ শ টাকা। এরকম বাজার স্থিতিশীল থাকলে বরই চাষে অনেক লাভবান হওয়া সম্ভব।
বরই চাষি ইমরান হোসেন জানান, তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বরইবাগান দেখে এসে বরইয়ের বাগান করার প্রতি উদ্বুদ্ধ হন। তিনি ৬০ বিঘা বরইয়ের বাগান করেছেন। অন্যান্য ফসলের তুলনায় বরই অধিক লাভজনক বলেও জানান তিনি। বরই বাগানে তেমন কোন পরিচর্যা করতে হয়না।
প্রথমে গাছ লাগান এবং জমি তৈরীর পর কীটনাশক ও সামান্য পরিচর্যা এতেই পাওয়া যায় বরইয়ের ভালো ফলন। এ অঞ্চলে মিশ্র ফলের চাষে সম্ভবনা উজ্জল। এটা অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী ও চাষিরা।
কেএফ/