সাতক্ষীরায় মেডিকেল ট্রেনিং শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ স্থগিত
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলে কোনো শিক্ষক না থাকায় শিক্ষক নিয়োগসহ ৫ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। তবে পরে বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রহুল হক এমপির আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারী) সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্কুল ক্যাম্পাসে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে স্কুলের প্রধান ফটকে সাতক্ষীরা-শ্যামনগর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন শুরু করে। এ সময় সড়কের দুই পাশে প্রায় ১০ কিলোমিটারের মতো যানজট সৃষ্টি হয়।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে নলতা মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলেও এখন পর্যন্ত কোনো শিক্ষক ও স্টাফ নিয়োগ দেওয়া হয়নি। স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে গেস্ট টিচার দিয়ে চালানো হয় সকল কার্যক্রম। এতে করে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যায়নরত দেশের ৬৪ জেলা থেকে আগত শিক্ষার্থীদের। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে একাধিকবার জানানো হলেও তারা বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। এতে করে স্কুলটিতে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে রবিবার সকাল থেকে ৫ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা।
দাবিগুলো হলো-১. স্কুলে স্থায়ী ভাবে শিক্ষক ও স্টাফ নিয়োগ দেওয়া, ২. সকল শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ৩. ক্যাম্পাস সংস্করণ, পুকুর খনন, নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, খেলার মাঠ উন্নয়ন, ধর্মীয় উপসানালয় স্থাপন করা ৪. ফিল্ড ট্রেনিং চালু এবং ৫. কম্পিউটার ল্যাব, মেডিক্যাল মিউজিয়াম, মেডিক্যাল লাইব্রেরি উন্মুক্তকরন করা।
এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যায়নরত মোস্তাফিজুর রহমান, মোনাইম ইসলাম, হাসান সীমান্ত, শাহরিয়া সুলতানা, রুবাইয়া ইয়াসমিনসহ আন্দোলনরত একাধিক শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিষ্ঠানটির ভর্তি ফি ৩০ টাকা, রেজিস্টেশন ফি সাড়ে ৪০০ টাকা থাকলেও ভর্তির সময় ১৯টি খাতের উন্নয়ন বাবদ জনপ্রতি ১৮ হাজার টাকা করে গ্রহণ করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে উন্নয়ন তো দূরের কথা এখানে ঠিকমতো ক্লাস নেওয়া হয় না। মাঝে মাঝে যারা ক্লাস নেন তারা সকলে ভাড়া করা শিক্ষক এবং তারা মুখস্থ বিদ্যা ছাড়া অন্য কোনো কিছু জানেন না, যেটা আমাদের হাতে-কলমে শেখা দরকার।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, যে শিক্ষা গণ মানুষের অধিকার, আজ সেই শিক্ষা লাভের জন্য রাজপথে আন্দোলন করতে হচ্ছে। যেটা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জার। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাতে এ কেমন শিক্ষা ব্যবস্থা? এভাবে কী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া সম্ভব? প্রশ্ন রেখে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ভর্তির সময় সকল সুবিধার কথা বলে হলেও বাস্তবে কোনো মিল নেই। আমাদের ভবিষ্যততো নষ্ট হয়েছে। এ কারণে আমাদের ছোট ভাই-বোনের ভবিষ্যৎ যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য আজ ক্যাম্পাসে তালা ঝুলিয়ে ভর্তিসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।
আন্দোরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, প্রতিষ্ঠানটিতে ল্যাব, লাইব্রেরি, কম্পিউটার থাকলে সেগুলো কখনও চালু করা হয়নি। হোস্টেলের কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা আমাদের দেওয়া হয় না। ক্যাম্পাসে কোনো জাতীয় অনুষ্ঠান হয় না। জাতীয় অনুষ্ঠানের বাজেট আসলেও তা দিয়ে অনুষ্ঠান করা হয় না।
এ সময় তারা আরও বলেন, ক্যাম্পাসে কোনো নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নেই। হোস্টেল সিট নেই। ৩ ব্যাচের ১৫০ জন শিক্ষার্থীর অধিকাংশ ছেলে। অথচ হোস্টেলে ছেলেদের সিট মাত্র ১৮ জনের।
৫ দফা দাবি সম্পর্কে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা সকাল থেকে আমাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি হিসেবে এ মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ, গণস্বাক্ষর ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করি। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রহুল হক এমপি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন দ্রুততম সময়ের ভিতরে দাবিগুলো পূরণ করা হবে। এ জন্য তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে কথা বলবেন। আমরা তার আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেছি। তবে সেটা যদি না হয় তাহলে কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলন করা হবে বলে হুশিয়ারি ব্যক্ত করেন তারা।
এসআইএইচ