খাদ্যগুদামে ধান-চাল দিতে আগ্রহ নেই কৃষকের
লক্ষ্মীপুরে এবার সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে খোলা বাজারে ধান-চালের দাম বেশি। আড়াই মাসে মাত্র ২০০ মেট্রিক টন পরিমাণ সংগ্রহ করা হলেও প্রান্তিক কৃষকরা খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহে আগ্রহী নন। তারা হয়রানিমুক্তভাবে ক্ষেতেই বেশি দামে ধান বিক্রি করছেন। এতে এ বছর ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান-চালের দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরউভূতা গ্রাম, লাহারকান্দি ইউনিয়ন ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ ফসলিমাঠ। ক্ষেতে ধান বিক্রি করছেন কৃষকরা।
প্রান্তিক কৃষকরা জানান, সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে পদে-পদে হয়রানি হতে হয়। কৃষি কার্ড, অনলাইন, ব্যাংক হিসাব, লটারি, পরিবহন সমস্যা, গুদামে কমিশন, সিন্ডিকেট, ধান বাচাইসহ অনেক হয়রানি। সময় মতো টাকাও পাওয়া যায় না। তা ছাড়া বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১২০০-১৩০০ টাকা দরে। ব্যবসায়ীরা ক্ষেত এবং কৃষকদের বাড়ি থেকেই ধান কিনে নিচ্ছেন। খাদ্যগুদামের এসব কষ্ট থেকে রেহাত পেতে কৃষকরা বাজারেই ধান বিক্রি করছেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুরে চলতি বছর ৪ হাজার ২৭৮ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। প্রতি কেজি ২৮ টাকা, মণ ১ হাজার ১২০ টাকা। রবিবার (২৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরের রায়পুর, সদর, কমলনগর ও রামগতি উপজেলা মিলে ২০০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়। তবে রামগঞ্জে গত দুই মাসে এক কেজি ধানও কেনা হয়নি। এ ছাড়া ৩ হাজার ৮০৫ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও রবিবার পর্যন্ত ৪৯৪ মেট্রিক টন কেনা হয়। এর মধ্যে সদরে ৪৫০ ও রামগঞ্জে ৪৪ টন, প্রতি কেজি চাল ৪২ টাকা দরে। চলতি আমন মৌসুমে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান গত বছরের ১৭ নভেম্বর শুরু হয়ে শেষ হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি।
সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চৌরাস্তা এলাকার কৃষক মো. জাহাঙ্গির হোসেন লিটন বলেন, অনলাইনে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের নামে কৃষকরা সিন্ডিকেটের কাছে হয়রানির শিকার হয়েছে। অনেককে গুদামে মাসের পর মাস ধান রেখে যেতে হয়েছিল। আবার অনেককে ধানের উষ্ণতা ও চিটাসহ নানান সমস্যা দেখিয়ে ধান ফেরত নিতে হয়েছে। এতে পরিবহন খরচ গুনতে হয়েছে। তাই এবার ক্ষেতেই ১২৫০ টাকা দরে ধান বিক্রি করেছেন তিনি।
একই কথা বলেছেন কমলনগর হাজিরহাট এলাকার কৃষক সফিক ভূইয়া, কামাল পাটোয়ারী। রামগঞ্জ ভোলাকোট এলাকার কৃষক সফিক বলেন, ভেজা হোক আর শুকনা হোক মাঠেই ভালো দাম পাচ্ছি। খাদ্যগুদামে দিতে গেলে একে তো দাম কম, তার উপরে পরিবহন খরচ, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ কর্তৃপক্ষের হয়রানির কারণে ধান দিচ্ছি না।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ধান-চাল সংগ্রহ কমিটির সদস্য মো. কামাল উদ্দিন হাওলাদার বলেন, খাদ্যগুদামে মূল্যবৃদ্ধি ও পরিবহন সুবিধা দিতে পারলে কৃষকরা খাদ্যগুদামে সরবরাহ করবেন। সরকারি সংগ্রহে ধানের আর্দ্রতাসহ গুণগত বিভিন্ন বিষয়ে যাচাই করা হয়। এসব প্রয়োজন হয় না বলেই কৃষকরা খোলা বাজারে ধান বিক্রি করেন। বাজার মূল্যের সঙ্গে মিল রেখে সরকারের ধানের মূল্যবৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
রামগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) সমীর দেবনাথ বলেন, মূলত আমন মৌসুমে ফরিয়াদের প্রভাব বেশি থাকে। লটারির মাধ্যমে কৃষকরা যেন সরকারকে ধান সরবরাহ করতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করছি। রামগঞ্জে এখন পর্যন্ত কোনো ধান কেনা সম্ভব হয়নি। তবে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য আমরা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছি।
লক্ষ্মীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হুমায়ুন কবির বলেন, কৃষকদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির লক্ষ্যেই সরকার কাজ করে থাকে। এবার সরকার নির্ধারিত দাম কম থাকায় চালের মিলাররা লক্ষ্যমাত্রা মোতাবেক চুক্তিবদ্ধ হয়নি। তারপরও আমরা অনেক চেষ্টার পর ২০০ মেট্রিক টন ধান-চাল কিনতে পেরেছি। বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়াও কৃষকদের কাছ থেকে আশানুরূপ সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। তারা ফরিয়া, দাদনদার ও ব্যবসায়ীদের কাছেই বিক্রি করছেন।
এসজি