'ভূমিহীনদের ঘর দিতে আজ আমরাই ভূমিহীন'
সম্প্রতি বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোট নিশান বাড়ীয়া মৌজায় সরকারিভাবে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণের কথা জানিয়ে উচ্ছেদ অভিযান করে উপজেলা প্রশাসন। ওই স্থানে বহু বছর ধরে বসবাস করে আসছিল ২৪টি দরিদ্র পরিবার। ঘরবাড়ি হারিয়ে তারা এখন ভূমিহীন অবস্থায় খোলা আকাশের নীচে দিন পার করছেন। তাদেরই একজন বৃদ্ধা সালেহা বেগম।
কান্নাজড়িত কন্ঠে বিলাপ করতে করতে সালেহা বেগম বলেন, ‘সরকারি ভাবে ভূমিহীনদের ঘর দেওয়ার কথা বলে আচমকা লোকজন আইসা আমাদের ঘরবাড়ি সব কিছু ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। দুইটা মিনিট সময়ও দিল না, সারা জীবনের কামাই রোজগার যা ছিল সব শেষ। পাকিস্তান আমল হইতে আমরা এখানে থাকি। আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নাই। গুরাগারা লইয়া এহানেই আকাশের নিচে রাত পার করছি। মরলে এইখানেই মরমু, তবুও অন্য কোনো জায়গায় যাবো না। ভূমিহীনদের ঘর দিতে আজ আমরাই ভূমিহীন। ঘর দিলে আমাদেরই তো আগে দেওয়ার কথা।'
আরেক ভুক্তভোগী মো. খলিল বলেন, 'মোগো জমিতে মোরা থাকতাম। ইউএনও সাহেব মোগো ঘর-দুয়ার সব পুলিশ লইয়া ভেঙে দিছে। মোরা এখন বালবাচ্চা লইয়া কই থাকমু? মোগো একটা ব্যবস্থা করে দেন আপনারা।'
কুলসুম বেগম নামে আরেকজন বলেন, 'আমার পরিবারে ৮ জন সদস্য। প্রশাসন আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামে আমাদের ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করেছে। কনকনে শীতের মধ্যে পরিবারের দুইজন বয়স্ক ও দুই শিশু নিয়ে খোলা আকাশে গাছের নিচে বসবাস করতেছি। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের যদি শুকনো খাবার এবং তাবু দিত তাইলে পরিবারের সদস্য নিয়ে কোনোমতে রাত কাটাতে পারতাম।'
আরেক ভুক্তভোগী কোহিনুর বলেন, 'দুপুরে পোলাপাইন লইয়া এখন পর্যন্ত কিছু খাইতে পারি নাই। পোলাপাইনের লেহাপড়া তো হচ্ছে না। থাকার জায়গা নাই, লেখাপড়া করবে কিভাবে। তার ওপরে সামনে ওদের পরীক্ষা।'
বৃদ্ধ আবদুর রশিদ খান বলেন, 'ঘর ভাঙার নোটিশ আসলে আমরা আমাদের কাগজপত্র ইউএনও স্যারকে দেখাই। কিন্তু কোনোমতে তিনি তা মানতে রাজি হননি। এমনকি আমাদের আকুতিও শুনেননি। বাধ্য হয়ে আমরা সবাই মিলে আদালতে মামলা করেছি।'
তিনি আরও বলেন, 'মামলা চলাকালীন কেমনে আমাদের ঘর দরজা ভেঙে দিল? আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিয়েছিলাম। সেই অভিযোগ আমলে নিয়ে আমাদের পক্ষে কাগজ পাঠিয়েছিলেন সেটিও ইউএনও না দেখে আমাদের সব ভেঙে ফেলেছেন। এখানে ২৪ পরিবারের প্রায় ৮০ জন সদস্য রাস্তায় জীবনযাপন করছে। আমাদের এই ২৪ পরিবারকে যদি সরকার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেন তবে রাস্তায়ই আমাদের জীবনযাপন করতে হবে।'
এ ব্যাপারে তালতলীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম সাদিক তানভীর বলেন, 'আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত জমিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে ৪ একর ২৭ শতাংশ সরকারি জমি উদ্ধার করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প-৪ এর আওতায় ১৪২টি ঘর নির্মাণ করা হবে। উদ্ধারকৃত জমিতে যারা গৃহহীন হয়েছেন তাদের সকলকে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নতুন ঘর দেওয়া হবে।'
এসআইএইচ