সাইনবোর্ড সর্বস্ব শিক্ষা বাণিজ্যের মহোৎসব!
সাইনবোর্ড সর্বস্ব শিক্ষা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে হাজী শমসের আলী কারিগরি স্কুল ও বিএম কলেজ নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর হোসেন প্রতারণা, মিথ্যা আশ্বাস এবং সার্টিফিকেট বাণিজ্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এছাড়া বছরের পর বছর এভাবে ব্যবসা বানিজ্য চালিয়ে গেলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তার দাবি, প্রতিষ্ঠানটি কারিগরি বোর্ডের অধীন হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব মহাসড়কের পাশেই উপজেলার সরাতৈল এলাকায় হাজী শমসের আলী কারিগরি স্কুল ও বিএম কলেজটি অবস্থিত। সেখানে দুইটি টিনের ঘর এবং জেলা পরিষদ থেকে পাওয়া তিন কক্ষ বিশিষ্ট পাকা ভবন রয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর জন্য টিন বা পাঁকা ভবনে নেই কোন টেবিল, ব্রাঞ্চসহ শিক্ষা উপকরণ।
এছাড়া দরজা জানালাও নেই ঘরগুলোতে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই কোন মাঠ। রাত নামলেই মাদকসেবীরা কলেজের ঘরগুলোতে মাদক সেবন করে। পাঁকা ভবনের একটি কক্ষে অধ্যক্ষের রুম, আরেকটিতে কয়েকটি চেয়ার রয়েছে সেখানে শিক্ষক-শিক্ষিকা বসে সময় পার করেন। অপর কক্ষে কয়েকটি কম্পিউটারসহ আসবাবপত্র জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার বেরী পটল এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেন নামের এক ব্যক্তি হাজী শমশের আলী কারিগরি স্কুল ও বিএম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। আরেকটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার নাম দেয়া হয়েছে প্রিন্সিপাল স্যার জাহাঙ্গীর কারিগরি স্কুল ও কলেজ। তবে হাজী শমসের আলী কারিগরি স্কুল ও বিএম কলেজটির কলেজ শাখা এমপিওভুক্ত হলেও স্কুল শাখার এমপিও হয়নি।
ভাঙনের ফলে পরে কলেজটি বেরী পটল থেকে ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব মহাসড়কের পাশেই সরাতৈল এলাকায় ২০১৮ সালে স্থানান্তর করা হয়। তখন থেকেই প্রতিষ্ঠানটিতে আর কোন ক্লাশ কার্যক্রম শুরু হয়নি। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ সরকারি চাকরিজীবিসহ দুরদুরান্ত থেকে শিক্ষার্থী সংগ্রহ করে সেখানে ভর্তি দেখিয়ে পরীক্ষার নামে বাণিজ্য করে যাচ্ছে। শিক্ষার্থী প্রতি সার্টিফিকেটের জন্য আদায় করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
এদিকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখার এমপিওভুক্ত হয়ে সরকার থেকে লাখ লাখ টাকা শিক্ষকরা বেতন উত্তোলণ করলেও সেখানে কোন ক্লাশ কার্যক্রম হয় না। সেখানে পড়াশোনার করার মত উপযোগী পরিবেশ নেই। ফলে নাম সবর্স্ব সাইনবোর্ড ব্যবহার করে শিক্ষা বাণিজ্য করে যাচ্ছে।
এতে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী না থাকায় শিক্ষকরা মাঝে মাঝে গিয়ে প্রতিষ্ঠানে দুই ঘন্টা সময় কাটিয়ে চলে আসেন। স্থানীয়রা প্রতিষ্ঠানটি সার্টিফিকেটের দোকান হিসেবে চিনে। এছাড়াও একইভাবে শিক্ষা বাণিজ্যে করে যাচ্ছে মধুপুর উপজেলার মধুপুর টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড বিএম কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।
উপজেলার সরাতৈল গ্রামের আব্দুর রহিম জানান, শুধু পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন নেয়ার জন্য খোলা হয়। এছাড়া সব সময় বন্ধ থাকে প্রতিষ্ঠানটি। কোন দিন ক্লাশ করার জন্য শিক্ষার্থীদের কলেজে আসতে দেখেনি।
ইয়াকুব জানান, কলেজে যেখানে চেয়ার টেবিল ব্রাঞ্চ নেই তাহলে সেখানে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা কোথায় হবে। মূল কথা হল কলেজ বছরে একবারও খোলে না। তবে পরীক্ষার সময় হলে কিছু লোকজনকে দেখা যায়।
আব্দুল হাই জানান, আমার বাপ-দাদা জমিতে অনুমতি না নিয়েই টিনের ঘর তুলে দখল করেছে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর হোসেন। পরে বাঁধা দিতে গেলে জানানো হয় জমির ন্যায্য দাম দেয়া হবে। তবে এখন বলছে জমি তাদের। টাকা বা জমি ফেরত চাইতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। আমরা গরীব মানুষ মামলা করার টাকাও নেই।
স্থানীয়রা জানান, ব্যবসা করার জন্যই প্রতিষ্ঠানটি খুলে বসেছে জাহাঙ্গীর। এখানে শুধু সার্টিফিকেট বেচা-কেনা হয়। কোন ক্লাস কার্যক্রম নেই অথচ এক ডজন শিক্ষক সরকারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা উত্তোলণ করছে।
কলেজের শিক্ষকরা জানান, পরীক্ষার জন্য দীর্ঘ একমাস প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। শিক্ষকরা নিয়মিত কলেজে আসে। তবে ভোকেশনাল শাখা এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় সেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় না।
হাজী শমসের আলী কারিগরি স্কুল এন্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এই কলেজের উপর সংসারের খরচ নির্ভর করে। আমার ক্ষতি করবেন না দয়া করে। অনেক কষ্টে প্রতিষ্ঠানটি দাড় করিয়েছি।
কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও এলেঙ্গা পৌর মেয়র নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, বছর খানেক আগে আমাকে নিয়ে কলেজটিতে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে এখন কি অবস্থা সেটা জানা নেই। শিক্ষার্থী বা সেখানে ক্লাস কার্যক্রম হয় কিনা সেটাও জানিনা।
কালিহাতী উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা মোস্তফা কবীর জানান, যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কারিগরি বোর্ডের অধীন সেহেতু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব না।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ওলিউজ্জামান বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) হতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দায়িত্ব পেয়েছি। এছাড়া প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আমার জানা নেই। আর এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক স্যার ছাড়া আমাদের বক্তব্য দিতে নিষেধ রয়েছে।
এএজেড