নাটোরে বিষমুক্ত ফল-সবজি খেতে ছাদ বাগান
নাটোরের লালপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহাবুদ্দিন মজনু বিষমুক্ত ফল-সবজি খেতে করেছেন ছাদ বাগান। চারতলা বাড়ির তিনতলার চিলেকোঠা আর চারতলায় করেছেন ওই বাগান। প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ করে করা ওই বাগান থেকে ইতোমধ্যেই খরচের টাকারও বেশি মূল্যের সবজি-ফল খেয়েছেন। এছাড়া বিলি করেন প্রতিবেশী আর স্বজনদের।
লালপুরের রামকৃষ্ণপুরের বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন মজনু জানান, ২০১৭ সালে তিনি ওই বাড়িটি নির্মাণ করেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে অবসরে যান। এরপর ২০২০ সালে শুরু করেন ওই ছাদ, বাগান। ২৫০০ বর্গফুটের একটি ছাদ আর তৃতীয় তলার চিলেকোঠায় করা ওই ছাদ বাগানে রয়েছে ফল,সবজি আর ঔষধি গাছ, মিলে প্রায় ৫০ টি গাছ।
সরেজমিনে দেখা যায়, খালি ড্রাম, প্লাষ্টিকের বড় কৌটা, সিমেন্টের টবের মধ্যে তিনি ছাদে রেখেছেন গাছ। আছে মাটিও। ওই বাগানে লাগানো হয়েছে টমেটো, বেগুন,পালংশাক , মরিচ, লাউ, সিম, পুঁইশাক, লাল শাক প্রভৃতি। এছাড়া ছাদে শোভা পাচ্ছে বেদেনা, মাল্টা, পেয়ারা, লিচু, লেবু, পেঁপে, মাল্টা, বড়ই ও ড্রাগন।
আছে গোলাপ ফুল, সূর্যমুখী, নাইট কুইনসহ নানা প্রজাতির ফুলগাছ। বাহারি ফুলের রঙে সাজিয়ে উঠেছে পুরো ছাদটি। এ যেন ছাদজুড়ে সবুজের সমারোহ। এ ছাদে উঠলে মনে হয়, এটি কোন এক দর্শণীয় জায়গা। একটু দাঁড়িয়ে জুড়ে যায় প্রাণ। এ বাগান থেকে উৎপাদিত সবজি দিয়েই পরিবারের খাদ্য চাহিদা পূরণ করেন তিনি।
শাহাবুদ্দিন জানান, তার ওই ছাদ বাগান শুধু শখের বিষয় নয়, পরিবেশ সুরক্ষায় বড় ভূমিকা পালন করছে। কেননা, ওই বাগানের মাধ্যমে পরিবেশ দুষণমুক্ত থাকে। বায়োডাইভারসিটি সংরক্ষণ করা যায়। এ ছাড়া তাজা শাকসবজি ও ফল মুলের চাহিদা ও মেটে। নিজ ছাদবাগানের সবজি, ফল, মূল খেয়ে তিনি সতেজ আর সজীব রয়েছেন। তিনি প্রায় ৭০ বছর বয়সী হলেও এখনও রোগমুক্ত। নিজেই মোটরসাইকেল চালিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করেন।
প্রতিবেশী মো: মিজানুর রহমান বলেন, স্যারে খুব সুন্দর ছাদ বাগান তৈরি করেছেন। ছাদ বাগান আমার খুব পছন্দ। তার ছাদ কৃষি দেখে আমরা উৎসাহিত হচ্ছি। চেষ্টা করব আমাদের বাসার ছাদে এ ধরনের ছাদ বাগান করতে। মো. আবুল হোসেন বলেন, শিক্ষক মৌসুমীর ছাদ বাগানটি দেখতে খুবই সুন্দর। তার বাড়ির কাজ চলমান আছে। কাজ শেষ হলে এমন একটি বাগান করার ইচ্ছে রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক শাহাবুদ্দিন মজনুর ছাদে বিভিন্ন জাতের ফুল, সবজি ও গাছের চারা দিয়ে অসাধারণ বাগান করেছেন। আমি মনে করি, তিনি আগ্রহী কৃষাণ। তিনি দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি, ফল, ঔষধি গাছ চাষ ও পরিচর্যা করেন। তার মতো যদি অন্যরাও ছাদগুলো ফেলে না রেখে সবজি অথবা ফলের বাগান করেন, তারাও লাভবান হতে পারবেন। তিনি আরও বলেন ছাদ বাগান থেকে উৎপাদিত স্বাস্থসম্মত খাদ্য শরীরের জন্য যেমন নিরাপদ একই ভাবে তা অনুকুল পরিবেশ ও আবাসন স্থানকে দুষণমুক্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ছাদ কৃষি মানুষের মাঝে সাড়া জাগিয়ে তুলতে কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
দুই ছেলে আর এক মেয়ের জনক ওই শিক্ষকের রয়েছে প্রায় ৪০ বিঘা জমি। জমিগুলো লীজ দিয়ে বছরে আয় করেন লক্ষাধিক টাকা। এছাড়া তার অবসর নেওয়া স্কুলে এখন তার সহধর্মীনী প্রধান শিক্ষক। বড় ছেলে ৩৪ ব্যাচের বিসিএস ক্যাডার হিসাবে সিনিয়র মৎস্য কড়মকর্তা পদে কর্মরত। ছেলের স্ত্রী খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক। অপর ছেলে ডুয়েট থেকে পাশ,করে এখন ডেসকোর সাব এ্যাসিসট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার। আর মেয়ে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে অনার্স পড়ছেন।
শিক্ষিত,প্রতিষ্ঠিত ওই শিক্ষকের এখন একটাই চাওয়া, আর তা হলো ওই শখের ছাদ, বাগানকে আরও সমৃদ্ধ করা। আর এর মাধ্যমে বিষমুক্ত ফল ফলাদী আর সবজি খেয়ে দীর্ঘ রোগমুক্ত জীবন উপভোগ করা।
এএজেড