শীতের তীব্রতায় কর্মহীন বেদে সম্প্রদায়ের লোক
ভোলায় শীতের তীব্রতায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে বেদে সম্প্রদায়ের লোকসহ পেশাজীবী জেলেরা। কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা, ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসের কারণে মৎস্য শিকারে যেতে পারছেন না তারা।
শীত বাড়তে থাকায় যেন স্থবির হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জনজীবন। শীতে জুবুথুবু হয়ে পড়েছে বেদে পরিবারসহ সাধারণ মানুষ। এবার বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদী পাড়ের গৃহহীন, ছিন্নমূল ও কর্মজীবীদের। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বেদে পরিবারের বৃদ্ধ ও শিশুরা। ভাসমান অবস্থায় নৌকায় জীবনযাপন করছে বলে তাদের ঝুঁকিও বেশি।
এ বিষয়ে রবিবার (৮ জানুয়ারি) সকালে কথা হয় ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের জোড়াখাল বেদে বহরের সর্দার মলুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তীব্র শীত, কুয়াশা আর প্রচণ্ড বাতাসের কারণে আমরা গত ৩-৪ দিন ধরে নদীতে যাইতে পারি না। মাছও ধরতে পারি না।‘
বেদে আলমগীর বলেন, ‘শীতের কারণে মাছ ধরতে যেতে পারি না। আমি নৌকায় ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে থাকি। বর্তমানে কোনো আয়-রোজগার নেই। আমাগো কষ্ট দেখার কেউ নেই।‘
তিনি আরও বলেন, শীতের তীব্রতা বাড়লেও এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কিংবা বেসরকারিভাবে গরম কাপড় কেউ দেয়নি। এ কারণে কষ্ট করেই থাকতে হচ্ছে।
অন্যদিকে তীব্র শীতের কারণে গত কয়েক দিনে উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। নদী পাড়ে বসবাসকারী ছিন্নমূল অসহায় দরিদ্র মানুষ ছাড়াও নিম্নবিত্তদের অবস্থাও রয়েছে করুণ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দিন-রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় শীতের তীব্রতার প্রভাব পড়েছে উপজেলাজুড়ে।
এ বিষয়ে ভোলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিনিয়র অবজারভার মাহবুবুর রহমান জানান, দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় হয়েছে তীব্র শীত। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝারি থেকে শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে।
তিনি আরো বলেন, এখন বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। শনিবার ভোলায় তাপমাত্রা ছিল ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রবিবার সেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ১২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় আজও সূর্য দেখা না যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে আগামীকাল থেকে দুই-এক দিন তাপমাত্রা বাড়লেও তারপরে আবার শীত বাড়তে পারে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে ভোলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ইব্রাহিম বলেন, শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে শিশু ও বয়স্করাই বেশি।
চিকিৎসকরা জানান, গত কয়েক দিনের শীতের কারণে নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগীদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। শীতে জবু-থবু হয়ে পড়েছে অসহায় প্রাণীরাও।
রাজাপুরের কৃষক জান্টু সরদার বলেন, আমার দুধের একটি গাভিসহ মোট তিনটি গরু আজ ৩/৪ দিন গোয়ালেই আছে। বাইরে মাঠে নিতে পারছি না শীতের কারণে। আমরা এত শীত সইতে পারতেছি না। তাই গরু-ছাগলের তো আরো বেশি কষ্ট।
এমন পরিস্থিতিতে বিআইডব্লিউটিএ ভোলার পোর্ট অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে ভোলা-ঢাকা নৌ-রুটসহ বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী লঞ্চগুলো ঢাকা থেকে ভোলা এবং ভোলা থেকে ঢাকা গন্তব্যে আসা-যাওয়া করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে রবিবার সকালে ইলিশা ঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে দিবা সার্ভিসের লঞ্চ যথা সময়ে ইলিশা ঘাট ত্যাগ করেছে।
কুয়াশার কারণে গতকাল দিবাগত রাত ২টা থেকে আজ সকাল ৭টা নাগাদ ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। তবে সকাল ৭টার পর থেকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান ভোলা বিআইডব্লিউটিসির ব্যাবস্থাপক পারভেজ খাঁন।
তিনি আরো বলেন, গত দুই দিনে ঘন কুয়াশার কারণে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে ফেরি চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হলেও এখন স্বাভাবিক হয়েছে।
এসআইএইচ