কনকনে শীতে দুর্ভোগে চরাঞ্চলের মানুষ
ঘন কুয়াশায় আবৃত মেঘনার উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের শহর ও গ্রামাঞ্চল। কন কনে শীতে জনজীবনে নেমে এসে দূর্ভোগ। বিগ্ন সৃষ্টি করছে দৈনন্দিন কর্ম ক্ষেত্রে। তবে শীতের তীব্র প্রভাব পড়েছে মেঘনার উপকূলীয় চরাঞ্চলে। চরাঞ্চলের এসব বাসিন্দাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলেই চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। গত রবিবার রাত থেকে ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীত পড়তে শুরু হওয়ায় চরাঞ্চলের মানুষ বিপাকে রয়েছেন। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা শীতে কাবু হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকার মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
খোজ নিয়ে জানা যায়, জেলার ৫টি উপজেলা রামগঞ্জ, রায়পুর, কমলনগর, রামগতি ও সদর উপজেলা। এর মধ্যে সদর আংশিক, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগর মেঘনার তীরে অবস্থিত। মেঘনার ভাঙনের শিকার এসব উপজেলার হাজার হাজার পরিবার অস্থায়ীভাবে ঘর তৈরি করে কোনো রকম বসবাস করছেন চরাঞ্চলে। তবে সরকারিভাবে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র ও গুচ্ছগ্রাম তৈরি করা হয়েছে। সেগুলোতে গাছপালা কম হওয়ার কারণে রোদ, বৃষ্টি ও শীত সব মৌসুমেই কষ্টে দিনাতিপাত করে চরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলো।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের মজুচৌধুরীর হাট সংলগ্ন মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় 'মানতা' সম্প্রদায়ের প্রায় ৮০টি পরিবারের নৌকায় বসবাস। পরিবারগুলো হাড়কাঁপানো শীতে কাঁপছে। জেঁকে বসা শীতের কারণে তারা টানা ১০ থেকে ১২দিন মাছ ধরতে যেতে পারেননি। ফলে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারি-বেসরকারি ও সেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনগুলো তাদের পাশে এগিয়ে আসেনি।
জীবন-জীবিকা ও বেঁচে থাকার তাগিদে এসব মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নৌকায় বসবাস করেন। মানতা জনগোষ্ঠীর (সর্দার) সৌরভ মাঝি বলেন, এক সময় আমাদের এ গ্রুপে ১২০টি পরিবারের বসবাস ছিল। বর্তমানে ৮০টি পরিবারের বসবাস। বাকি ৪০ পরিবার শেখ হাসিনার দেওয়া উপহার পাবে। কেউ আমাদের সহয়তা করেন না। বাতাস বাড়লে শীতও জেঁকে বসে। আমরা অনেক কষ্টে আছি।
এদিকে রায়পুরের উত্তর চরবংশী, দক্ষিন চরবংশী, চরমোহনা, উত্তর আবাবিল, দক্ষিন চরআবাবিল ইউনিয়নের এই চরগুলোতে (চরকাছিয়া, চরবংশী, চর জালিয়া, চরপক্ষি, চরইন্দ্রুরিয়া, চর কুচিয়া, চর মিয়ারহাট, চরমোহনা) প্রায় অর্ধলাখ মানুষের বসবাস। তীব্র শীতে এসব অঞ্চলের শ্রমিক, মজুর ও দৈনন্দিন খেটে খাওয়া মানুষের কাজকর্মেও ছন্দপতন ঘটে চলেছে। বাসিন্দারা জানান, চরাঞ্চলের মানুষ বেশির ভাগ কৃষি ও মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। যোগাযোগবিচ্ছিন্ন এলাকা হওয়ার কারণে চিকিৎসাসহ সরকারি অনেক সেবা থেকে বঞ্চিত তারা।
মেঘনা নদীর পাশের চরবংশী ইউপির চরকাছিয়া এলাকার বাসিন্দা খোকন মাঝি বলেন, চরাঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ নিম্ন আয়ের (জেলে-দিনমজুর-রিকশা চালক) । মানুষগুলো শীতে অবস্থা খারাপ। এখানকার মানুষকে শীত থেকে রক্ষা পেতে আগুন জালিয়ে ঘরের সামনে বসে থাকতে দেখা গেছে।
একই এলাকার বাসিন্দা মোস্তফা বেপারি, রামগতির বড় খেরীর মিজানুর রহমান ও চর কালকিনি এলাকার রমিজ উদ্দিন জানান, হঠাৎ শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় অধিক কষ্টের মধ্যে এসব চরাঞ্চলের মানুষ। কারণ চরাঞ্চলে প্রাকৃতিক পরিবেশটা সুন্দর না থাকায়, অর্থাৎ গাছপালা কম হওয়ার কারণে নদীর তীরবর্তী এলাকা কুয়াশা আর বাতাস দুটোই তাদে ছোট ঘরগুলোতে প্রভাব বিস্তার করে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনজন দাশ বলেন, সরকারিভাবে পাওয়া প্রায় ৫-হাজার ৩৭০টি কম্বল ১০টি ইউনিয়ন পরিষদে বিতরণ হয়। চরাঞ্চলের শীতার্তদের আলাদাভাবে কিছু করতে পারলে ভালো লাগবে। চেষ্টা করব তাদের শীত নিবারণের জন্য কিছু করতে।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, গত কয়েক দিনেরশীতে জেলাবাসীর জনজীবনে দুর্ভোগ বেড়েছে। তবে বেশি কষ্ট পাচ্ছে মেঘনার উপকূলের বাসিন্দারা। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সবসময় অসহায় মানুষের পাশে থেকে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছে। আগামীতেও করবে।
এএজেড