পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জমা দিলেই মিলছে ব্যাগভর্তি বাজার
কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে বাজার সাদাই করতে টাকা লাগছে না। পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের সামগ্রী জমা দিলে মিলছে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপকরণ।
পরিত্যক্ত প্লাস্টিককে সবাই অবমূল্যায়ন করলেও এবার সেই প্লাস্টিকই হয়ে উঠেছে মূল্যবান। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জমা দিয়েই ব্যাগভর্তি বাজার করতে পারছেন সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারা। ১ থেকে ৫ কেজি প্লাস্টিক জমা দিয়ে চাল, ডাল, তেল, মুরগী, ডিম, আটা, সুজি, কম্বল, শীতের কাপড় ও লুঙ্গী নিচ্ছে দ্বীপবাসী। তাদের দাবি, প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কারের পাশাপাশি উপকৃত হচ্ছেন তারা। আর সৈকতকে দূষণমুক্ত রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আজ শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সকালে সেন্টমার্টিন দ্বীপে গিয়ে দেখা যায়, সবার হাতে বস্তা। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে নারী-শিশু সবাই ছুটছেন এই বস্তা নিয়ে। তবে বস্তার ভেতরে রয়েছে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল, চিপস ও জুসের প্যাকেট। বেড়াতে এসে পর্যটকদের ফেলে দেওয়া এসব প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেছেন দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা। যা জমা দিয়ে বিনিময়ে বাজার করবেন তারা। তবে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে সেখানে আর টাকার প্রয়োজন হবে না। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জমা দিয়ে সেন্টমার্টিনের অধিবাসীরা ব্যাগভর্তি বাজার বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, পর্যটকরা দ্বীপে আসলেই অনেকে প্লাস্টিকের বোতল, চিপস ও জুসের প্যাকেট সৈকতের বালিয়াড়িতে ফেলে দেয়। আর আমরা এসব পরিত্যক্ত প্লাস্টিকগুলো সংগ্রহ করে রাখি। এরই মধ্যে এক সপ্তাহে ৫ বস্তা প্লাস্টিক সংগ্রহ করেছি। এখন এসব প্লাস্টিক জমা দিয়ে
ব্যাগভর্তি বাজার করে ঘরে নিয়ে যাবো।
তিনি আরও বলেন, বেলা ১২টা না বাজতে দ্বীপের মেরিন পার্ক এলাকা মানুষে ভরে যায়। বস্তাভর্তি প্লাস্টিক নিয়ে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে থাকেন নারী-পুরুষ ও শিশুরা। এরপর প্লাস্টিক জমা দিলেই মিলছে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজীয় পণ্য। অবিশ্বাস্য হলেও পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জমা দিয়েই বিনামূল্যে সেন্টমার্টিনের অধিবাসীরা ব্যাগভর্তি বাজার নিয়ে বাসায় যাচ্ছেন। প্লাস্টিকের বিনিময়ে নিত্যপণ্য পাওয়ায় খুশি দ্বীপের মানুষও।
দ্বীপের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা আয়েশা খাতুন বলেন, ১০ কেজি প্লাস্টিক জমা দিয়ে ১০ টাকা দিয়েছে। তার মধ্যে ৫ টাকা দিয়ে একটি মুরগী, ১ টাকা চাল, ২ টাকা তেল, আর বাকি ২ টাকা দিয়ে ১ ডজন ডিম নিয়েছি। অনেক খুশি আমরা।
দ্বীপের আরেক বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব কেবলমাত্র সরকারের। কিন্তু আন্তরিক চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও সরকারের একার পক্ষে পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা। এ ছাড়াও পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের মূল্য দেওয়া বা রিসাইকেল করার মতো কোনো ব্যবস্থা সেন্টমার্টিনে না থাকায় সেখানকার মানুষ প্লাস্টিককে অপ্রয়োজনীয় মনে করে ফেলে দেন।
প্লাস্টিকের দূষণ থেকে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপকে বাঁচাতে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। এতে তাদের সহযোগিতা করছেন জেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য মো. জামাল উদ্দিন বলেন, সংগৃহীত প্লাস্টিক দ্বীপ থেকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে রিসাইকেল করা হয়। সংগৃহীত প্লাস্টিকের একটি অংশ দিয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা কক্সবাজারে তৈরি করেছেন বিশাল আকৃতির একটি ‘প্লাস্টিক দানব’। ধারণা করা হচ্ছে-এই দানব এশিয়ার সমুদ্র সৈকতের সবচেয়ে বড় স্ট্যাচু। এটি তৈরির মাধ্যমে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন মানব সমাজকে একটি বার্তা দিতে চায় যে প্লাস্টিকের ফলে পরিবেশ যে হারে দূষিত হচ্ছে তা ধীরে ধীরে দানবে রূপ নিচ্ছে। আর এই দানব পরবর্তীতে মানবসমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, সেন্টমার্টিনসহ অন্যান্য দ্বীপ ও সমুদ্র সৈকতকে দূষণমুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসন নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরও মানুষের অসচেতনতা ও অবহেলার কারণে সেটি পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করে ও তাদের সম্পৃক্ত করে যে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে তাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে জেলা প্রশাসন। আশা করছি এই উদ্যোগের মাধ্যমে দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা হবে। প্রতি ১৫ দিন পরপর প্লাস্টিকের বিনিময়ে এসব পণ্য সরবরাহ করে বিদ্যানন্দ। যা শুরু গত মাসে। এতে প্রতিবার ৮ থেকে ১০ টন প্লাস্টিক জমা দেয় দ্বীপের মানুষ, যা ঢাকায় নিয়ে রিসাইকিলিং করে করা হয় ব্যবহার উপযোগী।
এসআইএইচ