সুন্দরবনে বাঘ গুনতে বসছে ক্যামেরা, ফলাফল আগামী বছর

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে বাঘ গুনতে বসছে ক্যামেরা। সাতক্ষীরা রেঞ্জের হলদিবুনিয়া এলাকা থেকে ক্যামেরা স্থাপন শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথমধাপে আগামী এপ্রিল পর্যন্ত সাতক্ষীরা ও শরণখোলা রেঞ্জে এবং নভেম্বর থেকে চার মাস শুমারি হবে শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে।
তবে অভয়ারণ্য ও অভয়ারণ্য এলাকা শুমারির বাইরে থাকবে। বনের কম লবণাক্ত, মধ্যম লবণাক্ত ও বেশি লবণাক্ত সব এলাকাই জরিপের আওতায় আসবে। বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক এবং সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা আবু নাসের মো. মোহসিন হোসেন জানান, বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বাঘ সংরক্ষণ, বাঘের সংখ্যা এবং বর্তমান অবস্থা জানার জন্য শুমারি হয়েছে।
কালাবগি এলাকায় রোববার ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘগণনার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার। শুমারির তথ্য প্রকাশ করা হবে আগামী বছরের জুনে। মোহসিন বলেন, এর আগে ২০১৫ ও ২০১৮ সালে একই পদ্ধতিতে বাঘগণনা করা হয়েছিল। তবে ২০১৫ সালের আগে পায়ের ছাপ দেখে শুমারি করা হতো।
গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে কালাবগি ফরেন ফাউন্ডেশনের আওতাধীন খালগুলোর দুইপাশে জরিপ করে বাঘের গতিবিধি ও পায়ের ছাপ লক্ষ্য করার কাজ চলছে। এই খাল সার্ভের মাধ্যমে বাঘের পাগমার্ক বা পায়ের ছাপ দেখা হবে গোটা সুন্দরবনে। আর এখন বনের গাছের সঙ্গে মাটি থেকে ৫০ সেন্টিমিটার ওপরে ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে।
প্রতিটি পয়েন্টে দুটি করে ক্যামেরা থাকবে ৪০ দিন। ১৫ দিন পরপর ক্যামেরার ব্যাটারি ও মেমোরি কার্ড পরিবর্তন করা হবে। বাঘ, হরিণ, শূকর বা অন্য কোনো প্রাণী ক্যামেরার সামনে দিয়ে গেলে সেই ছবি ও ১০ সেকেন্ডের ভিডিও ধারণ হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে।
মোহসিন আরও বলেন, ক্যামেরা ট্র্যাপিং ও খাল সার্ভের কাজ সম্পন্ন হলে সব তথ্য-উপাত্ত ঢাকায় বন বিভাগের রিসোর্স ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইউনিটে পাঠানো হবে। সেখানে পর্যালোচনার পর ২০২৪ সালের জুনে শুমারির ফল ঘোষণা করা হবে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, বাঘের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ ও বাঘ সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ২৩ মার্চ সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
এরমধ্যে বাঘশুমারি খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। শুধু শুমারির জন্য সম্প্রতি দুইকিস্তিতে এক কোটি ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে বন বিভাগ। মেয়াদ ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত। শুমারি দলে থাকা বাঘ গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ আজিজ বলেন, ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের জন্য সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা জানা খুবই জরুরি।
তিনি বলেন, জরিপে যদি দেখা যায়, বাঘের সংখ্যা বেড়েছে, তাহলে বোঝা যাবে ব্যবস্থাপনা ভালো আছে। আর যদি দেখা যায় বাঘের সংখ্যা কমেছে, তাহলে বুঝতে হবে ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি আছে। তখন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। তবে তার ধারণা, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা এবার বাড়বে। ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘ ছিল ১১৪টি। ২০১৫ সালে ছিল ১০৬টি।
এএজেড
