বছরে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু ১৪ হাজারের বেশি
গত এক দশকে বিশ্বব্যাপী পানিতে ডুবে ২৫ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর পানিতে ডুবে প্রায় ১৪ হাজারের বেশি শিশু মারা যায়। যা ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রধান কারণ।
পানিতে ডুবে বেশির ভাগ শিশুদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে আশেপাশের জলাশয়ে। গ্রামে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। শহরের শিশুরাও বেড়াতে গিয়ে এমন করুণ মৃত্যুর শিকার হয়।
সম্প্রতি বরগুনার সাংবাদিকদের নিয়ে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু বিষয়ক প্রশিক্ষণে এসব তথ্য জানায় সোসাইটি ফর মিডিয়া এ্যান্ড সুইটাবেল হিউম্যান কমিউনিকেশন টেকনিকস।
জরিপের তথ্যানুযায়ী জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। বেশিরভাগ শিশু মারা যায় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টার মধ্যে এবং মায়ের ১০০ গজ দূরত্বের মধ্যে। আর বেশিরভাগ শিশু যারা ইতিমধ্যে পানিতে ডুবে মারা গেছে তারা সবাই অস্বচ্ছল দরিদ্র পরিবারের।
সরেজমিনে পরিদর্শনে এর কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, বাবা-মায়ের কাজের ফাঁকে চোখের আড়ালে বাড়ির নিকটবর্তী পুকুর কিংবা জলাশয়ে পড়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
সোসাইটি ফর মিডিয়া এ্যান্ড সুইটাবেল হিউম্যান কমিউনিকেশন টেকনিকস এর পরিচালক রেজাউল হক শাহিন বলেন, প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এই মৃত্যু কমানো সম্ভব। পানিতে ডুবে শিশুদের মৃত্যুর কারণ-পারিপার্শ্বিক অবস্থা, অভিভাবকদের ভূমিকা, সতর্কতা এবং আত্মরক্ষায় সাঁতার ও সচেতনতার লক্ষ্যে বরগুনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করছি।
তিনি আরও বলেন, এই কাজে মিডিয়ার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ সংক্রান্ত সংবাদ তৈরি, সচেতনতা সৃষ্টি এবং ওয়াচ ডগ হিসেবে সাংবাদিকদের নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি।
এ বিষয়ে প্রশিক্ষণে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির ইইসিডি প্রকল্পের গবেষক তারিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পানিতে ডুবে শিশুদের মৃত্যু কমাতে হলে সন্তানকে অবশ্যই সাঁতার শেখানোর কোনো বিকল্প নেই।
এদিকে বরগুনা সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বরগুনায় গত ৫ বছরে ১১৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ২৫, ২০১৯ সালে ৩৪, ২০২০ সালে ২৮, ২০২১ সালে ১৬ ও ২০২২ সালে ১০ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, একদিকে শিশুদের অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব, অন্যদিকে অধিকাংশ পরিবারের বাড়ির উঠানে বড় বড় পুকুরসহ আশেপাশে খাল, নদী ও জলাশয় থাকায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু থামছে না। এই মৃত্যু কমাতে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধে প্রতি বছর আন্তজার্তিক দিবস পালিত হচ্ছে। এ দিবসের মাধ্যমে অনেক বাবা-মাসহ অভিভাকরা সচেতন হচ্ছেন। এভাবে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সবাই সচেতন হলেই পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে শিশুর সুরক্ষা এবং মৃত্যু ঝুঁকি কমিয়ে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ‘ইনটেগ্রেটেড কমিউনিটি বেইজড সেন্টার ফর চাইল্ড কেয়ার, প্রটেকশন অ্যান্ড সুইম-সেইফ ফেসিলিটিজ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সারাদেশে ১৬টি জেলার ৪৫টি উপজেলায় ৮ হাজার শিশু-যত্নকেন্দ্র পরিচালনা করা হবে। এসব যত্নকেন্দ্রে ৬-১০ বছর বয়সী শিশুদের সাঁতার শেখানো হবে।
এসআইএইচ