সুন্দরবন থেকে অপহৃত ১১ জেলে উদ্ধার

মাছ ধরার সময় সুন্দরবন থেকে অপহৃত ১১ জেলেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) ভোরে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জে ও শরণখোলা এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।
১১ জেলের মধ্যে ৯ জনকে মোংলা থানা পুলিশ ও ৩ জনকে উদ্ধার করেছে শরণখোলা থানা পুলিশ। তবে অপহরণের সঙ্গে জড়িতে কোনো দস্যুকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর বিকালে সুন্দরবন র্পূব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের বেড়ির খাল ও হরমল খালে জেলেবহর থেকে ১১ জনকে অপহরণ করে দস্যুরা। পরে জেলেপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করে দস্যুরা। উদ্ধার হওয়া জেলেরা বাগেরহাটের রামপাল, মোংলা, মোরেলগঞ্জ, সদর এবং খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বাসিন্দা।
মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, উদ্ধার হওয়া জেলেরা বর্তমানে মোংলা থানা পুলিশের কাছে রয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাগেরহাট পুলিশ সুপার (এসপি) কেএম আরিফুল হক বলেন, জেলেদের অপহরণের খবরে সুন্দরবনে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণে কোনো বনদস্যুকে আটক করা সম্ভব হয়নি। বনদস্যুদের আটকে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মহাপরিচালককে প্রধান সমন্বয়কারী করে সুন্দরবনে জলদস্যু দমনে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এরপর থেকে বনদস্যু ও জলদস্যুমুক্ত করতে প্রক্রিয়া শুরু করে র্যাব। ২০১২ সাল থেকে র্যাবের জোরালো অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়ে বনের গহীনে থাকা জলদস্যুরা।
র্যাবের তৎপরতায় দস্যু বাহিনীগুলো ফেরারি জীবন শুরু করে। এরপর দস্যুতার অবসান ঘটিয়ে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেয় তারা। ২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনের মোট ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ সদস্য ৪৬২টি অস্ত্র ও ২২ হাজার ৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করে। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সবশেষ ৬টি দস্যু বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। সেই অনুষ্ঠানে সুন্দরবনকে 'দস্যুমুক্ত' ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আত্মসমর্পণ করা দস্যু বাহিনীগুলোর মধ্যে- মাস্টার বাহিনীর ১০ জন, মজনু বাহিনীর ৯ জন, ইলিয়াস বাহিনীর ২ জন, শান্ত বাহিনীর ১৪ জন, আলম বাহিনী ও সাগর বাহিনীর ১৩ জন, খোকাবাবু বাহিনীর ১২ জন, নোয়া বাহিনীর ১২ জন, জাহাঙ্গীর বাহিনীর ২০ জন, ছোট রাজু বাহিনীর ১৫ জন, আলিফ বাহিনী ও কবিরাজ বাহিনীর ২৫ জন, মানজু বাহিনীর ১১ জন, মজিদ বাহিনী ৯ জন, বড় ভাই বাহিনীর ১৮ জন, ভাই ভাই বাহিনীর ৮ জন, সুমন বাহিনীর ১২ জন, ডন বাহিনীর ১০ জন, ছোট জাহাঙ্গীর বাহিনীর ৯ জন, ছোট সুমন বাহিনীর ৮ জন, দাদা ভাই বাহিনীর ১৫ জন, হান্নান বাহিনীর ৯ জন, আমির আলী বাহিনীর ৭ জন, সূর্য বাহিনীর ১০ জন, ছোট সামসু বাহিনীর ৯ জন, মুন্না বাহিনীর ৭ জন, আনোয়ারুল বাহিনীর ৮ জন, তইবুর বাহিনীর ৫ জন, সিদ্দিক বাহিনীর ৭ জন, আলামিন বাহিনীর ৫ জন, সাত্তার বাহিনীর ১২ জন এবং শরীফ বাহিনীর ১৭ জন। তারা সবাই আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বর্তমানে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন।
এসজি
