নীলফামারী হানাদার মুক্ত দিবস আজ
আজ ১৩ ডিসেম্বর নীলফামারী হানাদারমুক্ত দিবস। দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে জেলার ৭১ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ হাজার হাজার নিরস্ত্র বাঙালির আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের এইদিনে পাক-হানাদার মুক্ত হয়েছিল নীলফামারী। আজও তার বেদনা বহুল স্মৃতি বহন করে নীলফামারী সরকারি কলেজের বধ্যভূমি। এখনো এখানে আসলে ৭১ এর ভয়বহতা চোখে পড়ে।
জানা যায়, কলেজের পুরনো একটি কুয়ার মধ্যে অগনিত মানুষকে হত্যা করে সেখানে ফেলে দিয়েছিল স্থানীয় পাকবাহিনীর দোসর আলবদর, আল শামস ও রাজাকারের দল। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনের পর কুয়াটি সংরক্ষণ করে সেখানে তৈরি করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ।
জেলার নাম জানা ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধা জীবন দিয়েছিলেন ওই মুক্তিসংগ্রামে। তারা হলেন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন নোকো, শহীদ ক্যাপ্টেন বাসার (সদর), শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন (সদর), শহীদ আহমেদুল হক প্রধান (ডোমার), শহীদ মোজাম্মেল হক (ডোমার), শহীদ জাহেরুল ইসলাম চিলাহাটি (ডোমার), শহীদ আঞ্জারুল হক ধীরাজ চিকন মাটি (ডোমার), শহীদ মিজানুর রহমান চিকন মাটি (ডোমার), শহীদ বাবু সুভাষ সিংহ (ডিমলা), শহীদ সামসুল কিবরিয়া খগাখড়িবাড়ী (ডিমলা), শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ রায় পূর্ব বালাগ্রাম (জলঢাকা), শহীদ আমজাদ মিস্ত্রী চাঁদখানা (কিশোরগঞ্জ), শহীদ আব্দুর রশিদ মাগুড়া (কিশোরগঞ্জ), শহীদ আব্দুল বারেক মাগুড়া (কিশোরগঞ্জ), শহীদ শাহ্বুদ্দিন সিট রাজিব (কিশোরগঞ্জ), শহীদ আব্দুল মজিদ কাশিরাম বেলপুকুর (সৈয়দপুর), শহীদ জয়নাল আবেদীন বোতলাগাড়ী (সৈয়দপুর), শহীদ মির্জা হাবিবুর রহমান বেগ ঘুঘুমারী (জলঢাকা)। বাকি ৫৩ জন শহীদের নাম এখনো জানা যায়নি।
এদিন, মুক্তিযোদ্ধারা প্রথম জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে একটি বাঁশের খুঁটিতে উত্তোলন করেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা। বর্তমানে সেখানে স্মৃতি অম্লান চত্বর তৈরি করা হয়েছে। জেলার ছয় থানা নিয়ে নীলফামারী ছিল একটি মহকুমা শহর। সেদিন প্রাণপনে মুক্তিযোদ্বারা নিজের জীবনকে বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তি সংগ্রামে।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নীলফামারীর অগণিত কৃষক, শ্রমিক ছাত্র-জনতা মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম শুরু করে। ভারতে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ৬নং সেক্টরের অধীন মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে গেরিলা আক্রমণের মাধ্যমে পরাস্ত করতে শুরু করে।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জানান, নীলফামারী ৬নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন খাদেমুল বাশার। তার নেতৃত্বে জেলা শহর ১২ ডিসেম্বর রাতে শত্রু মুক্ত হতে থাকে। তিনি আরও বলেন, ৯ মাস হানাদাররা নিরস্ত্র বাঙালি নিধনে মেতে উঠেছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আহত হন ও অনেকেই শহীদ হন। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছর জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নানা কর্মসূচি গ্রহন করে থাকে।
১৩ ডিসেম্বর নীলফামারী শহর হানাদার মুক্ত হওয়ার ফলে বিজয়ের উল্লাসে মেতে উঠে মুক্তিকামী সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। 'জয় বাংলা' শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে তৎকালীন মহকুমা শহর। ৯ মাসের গেরিলা আক্রমণ আর সম্মুখ যুদ্ধে জেলার ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর মুক্ত করে তাঁরা এগিয়ে আসেন নীলফামারী শহরের দিকে। ১৩ ডিসেম্বর ভোরে হানাদার মুক্ত হয় নীলফামারী শহর। শহরে উড়ে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা।
এএজেড