গোবিন্দগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস আজ
আজ ১২ ডিসেম্বর, গোবিন্দগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং এ দেশীয় পাকিস্তানি দালালদের সৃষ্ট বিভীষিকাময় দিনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে শত্রুমুক্ত হয় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা।
৭ ডিসেম্বর তৎকালীন গাইবান্ধা মহুকুমা শহর ও পরবর্তী কয়েক দিনে অন্যান্য থানা শত্রুমুক্ত হলেও গোবিন্দগঞ্জ ছিল পাকিস্তানিদের কবলে। মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষলগ্নে অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের উপর্যুপরি গেরিলা আক্রমণে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে পাক হানাদার বাহিনী। ১১ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ১২ ডিসেম্বর মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ আক্রমণে কাটাখালী সেতুর কাছে শত্রুর শেষ ঘাঁটিটি গুঁড়িয়ে দিলে চূড়ান্ত বিজয়ের চার দিন আগেই হানাদার মুক্ত হয় তৎকালীন রংপুর জেলার প্রবেশদ্বার গোবিন্দগঞ্জ। গোবিন্দগঞ্জ শত্রুমুক্ত হওয়ার মাধ্যমে পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হয় তৎকালীন গাইবান্ধা মহুকুমা।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা একেএম শামসুদ্দিনের 'গোবিন্দগঞ্জের সেই যুদ্ধ' শিরোনামের একটি লেখা থেকে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের শেষলগ্নে গোবিন্দগঞ্জ থানা সদরের অদূরে রংপুর-বগুড়া সড়কের কাটাখালী সেতুর দক্ষিণপাড়ে নদীকে সামনে রেখে প্রতিরক্ষা ব্যুহ তৈরি করে শক্ত অবস্থান নিয়ে বসেছিল পাকিস্তানের ৩২ বেলুচ ও ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট। বগুড়ার মহাস্থান পর্যন্ত পৌঁছার লক্ষ্যে সেতুটি দখলে নিতে মিত্রবাহিনীর ২০ মাউন্টেন ডিভিশনের ৩৪০ মাউন্টেন ব্রিগেড সেখানে পৌঁছালে চূড়ান্ত লড়াই শুরু হয়। পালানোর সময় পাকিস্তানিরা কাটাখালী সেতুটিকে ধ্বংস করে দিতে পারে এমন অশঙ্কায় তাদের সঙ্গে মুখোমুখি যুদ্ধের বদলে ভিন্ন কৌশলে এগোয় মিত্রবাহিনী।
ছোট একটি দলকে দিয়ে নদীর উত্তর দিক থেকে গুলি ছুড়ে তাদের ব্যস্ত রেখে পূর্বদিকের কাজলা এলাকা দিয়ে করতোয়া নদী পেরিয়ে দক্ষিণে গিয়ে পেছন থেকে আক্রমণ করে। এর ফলে সামনে ও পেছনে উভয় দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকবাহিনী। চূড়ান্ত আঘাত আসে ১১ ডিসেম্বর ভোর রাতে। সেদিন হিলি, গাইবান্ধা, বোনারপাড়া এবং মহিমাগঞ্জ থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর ত্রিমুখী আক্রমণে শতাধিক পাক সেনা নিহত হয়। এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পাক সেনারা তাদের পোশাক পরিবর্তন করে লুঙ্গি ও গেঞ্জি পড়ে প্রাণভয়ে পালিয়ে যায় বলে জানান স্থানীয়রা। ফলে চূড়ান্ত বিজয়ের চারদিন আগেই স্বাধীনতার স্বাদ পান এখানকার মুক্তিকামী মানুষ। সেদিনের এ বিজয়ের খবরে উচ্ছ্বাস আর আনন্দে ফেটে পড়েছিল গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মুক্তিকামী মানুষ। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ফুলছড়ি, গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ি, সাঘাটার পর শত্রমুক্ত হয় গোবিন্দগঞ্জ।
১২ ডিসেম্বর 'জয় বাংলা' স্লোগানে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে বিজয় আসে এ জনপদে। স্বাধীনতাকামী গণমানুষের তুমুল হর্ষধ্বনি আর মিছিলে মিছিলে বিজয়ের বার্তা জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও ছাত্র-জনতা গোবিন্দগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে সমবেত হয়ে লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের গর্বিত পতাকা উড়ে মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকল আর রেলস্টেশনসহ সর্বত্র।
এদিকে ১২ ডিসেম্বর গোবিন্দগঞ্জ মুক্ত দিবস উপলক্ষে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এসজি