মেরামতের ২০ দিনেই উঠে যাচ্ছে সড়কের পাথর

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সড়ক মেরামতের অনিয়ম তুলে ধরে গত ৬ নভেম্বর বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর তড়িঘড়ি করে সড়ক মেরামত কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু কার্পেটিংয়ের কাজ নিম্নমানের হওয়ায় মেরামতের ২০ দিনেই উঠে যাচ্ছে পাথর।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চাড়োল ইউনিয়নের লাহিড়ী বাজার থেকে পশ্চিম দিকে পাড়িয়া বাজার পর্যন্ত ৫ দশমিক ১ কিলোমিটার সড়ক মেরামতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬ লাখ টাকা। ইমরান হোসেন নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি পেলেও মেসার্স রহমান এন্টারপ্রাইজের হয়ে সহকারী ঠিকাদার আসাদুজ্জামান লাভলু এ কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) সকালে চাড়োল ইউনিয়নের লাহিড়ী থেকে পাড়িয়া বাজার পর্যন্ত ৫ দশমিক ১ কিলোমিটার সড়কে সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসাদুজ্জামান লাভলু নামে ওই ঠিকাদার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ২টি সড়ক মেরামত ও ১টি সড়ক পাকাকরণের কাজ পেয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ৩টি সড়কে নিম্নমানের ইট ও সামগ্রী ব্যবহার করলেও খতিয়ে দেখার কেউ নেই।
নজরুল ইসলাম নামে এক বৃদ্ধ অভিযোগ করেন, রাস্তায় যখন নির্মাণ কাজ চলছিল তখন স্থানীয়রা বারবার নিম্নমানের ইট ব্যবহারে না করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করেছে। কিন্তু তারা সেটাতে কোনো কর্ণপাত করেনি। পরে গত ৪ নভেম্বর তাদের কাজে বাধা দিতে গেলে স্থানীয় লোকজন ও ঠিকাদারের লোকজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি থানা পুলিশ ও হাসপাতাল পর্যন্ত গড়ায়। তবুও বন্ধ হয়নি অনিয়ম, ঠিকাদারের লোকজন ইচ্ছেমতো অনিয়ম করে গেছে। দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার ও তার অফিসের লোকজন তো অন্ধ, দেখেও দেখে না।
খায়রুল ইসলাম নামে একজন বলেন, এই সড়কের কাজ এক ঠিকাদার করে যাবেন। এরপর ৩ মাসের মধ্যে পাথর উঠে যাবে। পরের মাসে আরেকজন ঠিকাদার এসে আবার মেরামত করে যাবেন। জনগণের টাকা এভাবে লুটপাট করে খাওয়ার জন্যই এসব নাটক। এগুলো বন্ধের দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার আসাদুজ্জামান লাভলু বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে একটু এদিক-ওদিক করতে হচ্ছে। এরপরেও এ কাজে লাভ হবে না বলে জানান তিনি।
উপজেলা প্রকৌশলী মাইনুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার কার্যসহকারী আবু সুফিয়ান বলেন, প্রকৌশলী মাইনুল ইসলামকে পার্শ্ববর্তী হরিপুর উপজেলায় বদলি করা হয়েছে। তিনি সেখানে দায়িত্ব বুঝে নিতে ব্যস্ত থাকতে পারেন।
ঠাকুরগাঁও এলজিইডি'র প্রধান প্রকৌশলী শাহারুল আলম মন্ডল আলম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদগুলো আমাদের নজরে এসেছে। আমরা ওই ঠিকাদারের কাজের মান যাচাই করছি। আপাতত বিল বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের কারণে গত ২৪ নভেম্বর আজকের পত্রিকার বালিয়াডাঙ্গী প্রতিনিধি আল মামুন জীবনকে হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আসাদুজ্জামান লাভলু ও তার সহযোগী ইমরান হাসান পান্নার বিরুদ্ধে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ২৫ নভেম্বর বিবৃতি দেয় ঠাকুরগাঁও রিপোর্টার্স ইউনিটি ও বালিয়াডাঙ্গী প্রেস ক্লাব।
ঠাকুরগাঁও রিপোর্টার্স ইউনিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল প্রধান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমরা আন্দোলনে যাব। সাংবাদিকরা অনিয়মের কাছে মাথা নত করবে না।
এসজি
