দেশীয় ধান কাটার মেসিনে আশার আলো দেখছে কৃষকরা
দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ব্রী হোলফিড কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেসিন রংপুরের কৃষকদের নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে। এই মেসিনে উচু-নিচু হেলেপড়াসহ যেকোনো জমির ধান, গম কাটা ও মড়াই করা যাবে। এর ফলে অতি কম খরচে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।
জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষ আবাদের লক্ষে খামারে কৃষি যন্ত্রপাতির গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধিকরণ(এসএফএমআরএ) প্রকল্পের পরিচালক একে এম সাইফুল ইসলামের তত্বাবধানে ব্রী হোলফিড কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেসিনের প্রথম অবকাঠামো তৈরি করা হয়। তার তত্বাবধানে নিরলসভাবে চেষ্টা করে এই যন্ত্রের প্রথম প্রোটোটাইপ তৈরি করে বিভাগীয় বিজ্ঞানীরা।
মেশিনটি তৈরি করার পর শনিবার (২৬ নভেম্বর) সকালে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার রশিদপুর গ্রামে প্রথমবার মাঠ প্রদর্শনীতে আনা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ শাহ আলম, এসএফএমআরএ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম, ডিএই রংপুর জেলার বীজ প্রত্যয়ন অফিসার মো. খোরশেদ আলম, ডিএই রংপুর জেলার প্রশিক্ষণ অফিসার, ব্রি আঞ্চলিক কার্যালয় রংপুরের প্রধান ও সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার ড. রকিবুল হাসান, এফএমপিএইচটি বিভাগের সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার মো. কামরুজ্জামান পিন্টুসহ প্রমুখ।
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক একে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, আমদানিকৃত কম্বাইন হারভেস্টারগুলো আমাদের ছোট জমিতে ভালো কাজ করে না এবং এর মূল্য অনেক বেশী। ১৯টি বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে ব্রি হোল ফিড কম্বাইন হারভেস্টারটি দেশীয় উপযোগী করে প্রস্তুত করা হয়েছে। কৃষকের ছোট ও কর্দমাক্ত জমি বিশেষ করে হাওর এলাকার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। তবে অন্য এলাকাও সমানভাবে প্রযোজ্য। এর মূল্য আমদানিকৃত কম্বাইন হারভেস্টারের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। বাংলাদেশের খণ্ডিত ও কর্দমাক্ত জমির ধান কাটতে এটি অধিক কার্যকর। এই মেসিন দিয়ে গম কাটা, মাড়াই ও ঝাড়াইয়ের কাজ করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, হারভেস্টিং ক্ষমতা ঘন্টায় এক একরের বেশী, জ্বালানি খরচ একর প্রতি ১০ লিটার এবং হারভেস্টিং লস শতকরা এক ভাগেরও কম। উচু-নিচু ও কাঁদা জমিতে যন্ত্রটি সহজে চালনার জন্য ৩০০ মিলিমিটার গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স রাখা হয়েছে। সাধারণ ট্রাকে পরিবহন উপযোগী। স্থানীয় কাঁচামাল দিয়ে স্থানীয় কৃষি যন্ত্র প্রস্তুতকারকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে। ইঞ্জিন ছাড়া সকল পার্টস স্থানীয় ওয়ার্কশপে তৈরি করা সম্ভব।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ব্রি হোলফিড কম্বাইন হারভেস্টারটি দেশে উৎপাদনে সরকারি নীতি ও আর্থিক সহায়তায় পেলে কৃষি যন্ত্রপাতির অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাবে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করবে। বিদেশে রপ্তানি করা যাবে এবং খুচরা যন্ত্রাংশ প্রস্তুতের বাজার তৈরি হবে। মাঠ পরীক্ষণে উপস্থিত সকল সদস্য যন্ত্রটির কার্যকারিতা প্রত্যক্ষ্য করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। স্থানীয় কৃষি যন্ত্র প্রস্তুতকারীদের সক্ষমতা এবং ব্রি’র বিজ্ঞানীদের ডিজাইন ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা যদি যন্ত্রটি প্রস্তুত করি তবে এটি হবে আমাদের অসাধারণ সাফল্য। সরকারি এবং বেসরকারী উদ্যেগে এ দেশে এসেম্বলী লাইন তৈরি করতে পারলে স্বল্প মূল্য যন্ত্রটি প্রস্তুত করা সম্ভব হবে। ব্রি হোল ফিড কম্বাইন হারভেস্টারটি বাংলাদেশের কৃষকের জন্য এক অনন্য উপহার। বাংলাদেশের কৃষি যান্ত্রিককরণে ব্রি হোলফিড কম্বাইন হারভেস্টার বিপ্লব ঘটাবে।
এসআইএইচ