যশোরে শেখ হাসিনার প্রথম জনসভার প্রস্তুতি চলছে
যশোরে আগামী ২৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় প্রায় ৮ লক্ষ লোকের সমাগম ঘটাতে চলছে নানা প্রস্তুতি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিভিল প্রশাসন থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীরা পার করছে ব্যস্ত সময়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ব্যানারে শেখ হাসিনার প্রথম জনসভা এটি। এই জনসভাটিকে স্মরণকালের বড় গণসমাবেশে পরিণত করতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ।
জনসভায় যশোর জেলার ৮ লক্ষ মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে সেজন্য কাজ করছেন দলীয় নেতা কর্মীরা। দলে নেতাদের দাবি জনসভা ঘিরে চাঙ্গা হয়েছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল। ইতোমধ্যে জেলার ৮ উপজেলা, ৮টি পৌরসভা ও ৯৩ টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গণসংযোগ করছেন জনসভা সফল করার জন্য ১৯৭২ সালের ২৬ ডিসেম্বও এই যশোর স্টেডিয়ামে জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
সেই জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। একই স্টেডিয়ামে ৫০ বছর পর আগামী ২৪ নভেম্বর জনসভায় ভাষণ দিবেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে কোম্পানির মাইকে ভাষণ দিয়ে জাতিকে জাগ্রত করেছিলেন, সেই কলরেডির মাইকে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধান মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে যশোরের সাধারণ মানুষের মধ্যেও নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।
যশোর মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, যশোর বিমান বন্দর অন্তর্জাতিক মানের করণ, ভবদহের জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসন, বেনাপোল বন্দর কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক জোন সৃষ্টি, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের নামে সাগরদাঁড়িতে সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি রয়েছে সহ একগুচ্ছ দাবি নিয়ে রাজপথে আছেন তারা। এসব দাবির বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণে ইতিমধ্যে রাজপথে মানববন্ধন, সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদানের মত কর্মসূচি পালন করা হয়েছে বলে জানান, যশোর পৌর মেয়র হায়দার আলী খান পলাশ।
জনসভা সামনে রেখে ইতিমধ্যে একাধিকবার স্টেডিয়াম পরিদর্শন করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা ও মন্ত্রী। সমাবেশস্থল নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিরাও যশোরে অবস্থান করছেন। যশোর জেলা স্টেডিয়ামের আমেনা খাতুন ক্রিকেট প্যাভেলিয়নের দোতলায় মঞ্চ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেওয়ার মঞ্চটি নৌকা আকৃতির ৮০ বাই ৬০ ফুটের মাপে তৈরি হচ্ছে। নৌকার মাপের মঞ্চটি হবে ৪ হাজার ৮০০ বর্গফুটের। সার্কিট হাউজে জনসভার সার্বিক বিষয়ে আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন জানান, জনসভা স্মরণকালের ঐতিহাসিক মহাসমাবেশে পরিণত করতে যশোর স্টেডিয়ামের উত্তর পাশের দেয়াল ভেঙে আব্দুর রাজ্জাক কলেজের মাঠকে সংযুক্ত করে জনসভাস্থল বাড়নো হয়েছে।
যাতে করে প্রধানমন্ত্রীসহ অতিথিদের বক্তব্য দেয়ার স্টেজসহ জনসভাকে সফল করা যায়। জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ কাজটি করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন। তিনি আরও জানান, জনসভায় যশোর জেলার ৮ লক্ষ মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে সে জন্য সাংসদ সদস্যরাসহ জেলা উপজেলার সর্ব স্তরের নেতা কর্মীরা কাজ করছে। বর্তমান সরকারের আমলে কি পেয়েছে, আগামীতে কি পাবে সেটা তারা প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে শুনবেন।
যশোর পৌরসভা পৌরমেয়র মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গনী খান পলাশ জানান, রাস্তার ধারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, বৈদ্যুতিক পোস্টে বাল্ব লাগানো, বিভিন্ন প্যানা অপসারণ, দেয়ালে লাগানো বিভিন্ন পোস্টার উঠানো ও মশা নিধনের জন্য স্প্রে কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রীর স্টেডিয়ামে জনসভা উপলক্ষে আরবপুর রেললাইনের কাছ থেকে শুরু করে স্টেডিয়াম পর্যন্ত রাস্তার ধারের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ফলে পাল্টে গেছে শহরের চেহারা।
তিনি আরও জানান, আমরা এসব কার্যক্রম করে যাচ্ছি। যাতে করে সুন্দর পরিবেশে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখতে পারেন। এছাড়া শহরের শহরের সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য বিভিন্ন মোড়ে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান জানান, প্রধানমন্ত্রীর জন্য ৪ স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রশিক্ষিত ও চৌকস ফোর্স এবং অফিসারদের সমন্বয়ে গঠন করা হচ্ছে এই নিরাপত্তা বেষ্টনী।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আনা হচ্ছে গোটা জেলাকেই। আজ বুধবার থেকে সভার দিন পর্যন্ত কয়েকশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে বিভিন্ন রাস্তায়। সভা মাঠের অদুরে ওয়াচ টাওয়ার থেকে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে জনসভাস্থল ও জনসভা মঞ্চ পর্যবেক্ষণ করা হবে। পোষাকধারী ছাড়াও সাদা পোষাকধারী পুলিশ থাকবে।
পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটসহ আরও কয়েকটি সংস্থা এই নিরাপত্তা বলয়ে থাকবে। এই ৪ স্তরের বাইরেও প্রধানমন্ত্রীর নিরপত্তায় থাকবে চৌকস এসএসএফ ফোর্স। গুগল ও স্যাটেলাইট সহায়তা নিয়েও নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে।
এএজেড