রংপুরে আইনজীবী হত্যায় দুইজনের ফাঁসি, একজনের যাবজ্জীবন

রংপুরে আইনজীবি আসাদুল হক হত্যা মামলায় দুইজনকে ফাঁসি ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়াও প্রত্যককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সোমবার (১৪ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় এ রায় দেন রংপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ-১ নম্বর আদালতের বিচারক হাসান মাহমুদুল ইসলাম।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৫ জুন আইনজীবী আসাদুল হকের স্ত্রী ছেলে-মেয়েসহ তার স্বজনরা মিঠাপুকুরে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। এ সুযোগে বারআউলিয়া মহল্লার আসামি রতন মিয়া ও খোদ্দ তামফাট মহল্লার সাইফুল ইসলাম বাসার দেয়াল টপকে দুপুর আড়াইটায় বাসায় প্রবেশ করে আইনজীবী আসাদুল হককে ছুরি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এরপর বাসার দেয়াল টপকে পালিয়ে যাবার সময় এলাকার লোকজন রতনকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিসহ হাতেনাতে আটক করে। এ ঘটনায় নিহতের ছোট মেয়ে মোছাম্মৎ আরফিন নাহার অংকন বাদী হয়ে দুই আসামির নাম উল্লেখ করে রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত রবিউল ইসলাম হত্যা মামলাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করলে মামলাটি সিআইডি পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্ত শেষে আসামি রতন, সাইফুল ইসলাম ও মোরশেদা বেগমের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি পুলিশ।
মামলায় ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৭ জনের সাক্ষী ও জেরা শেষে আসামি রতন ও সাইফুল ইসলামকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। সেইসঙ্গে দুজনকে ৫০ হাজার করে জরিমানা এবং আসামি মোরশেদা বেগমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। সেইসঙ্গে মামলার তদন্তে চরম গাফিলতি করার অভিযোগে পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত বর্তমানে রংপুর মেট্রোপলিটন পশুরাম থানার ওসি রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ সদর দপ্তরকে নির্দ্দেশ দেয় আদালত।
রাষ্ট্র পক্ষের পিপি আব্দুল মালেক বলেন, রংপুর আইনজীবী সমিতির সদস্য সিনিয়র আইনজীবী আসাদুল হক হত্যা মামলায় আমরা ন্যায়-বিচার পেয়েছি। এ রায়ে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি। সেইসঙ্গে হাইকোর্টে দ্রুত ডেথ রেফারেন্স নিস্পত্তি করা হবে বলে দাবি করছি।
মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি আব্দুস সাত্তার বলেন, এই মামলায় আসামি রতন ও সাইফুল ইসলাম ১৬৪ ধারায় আদালতে ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। প্রকাশ্যে দিবালোকে একজন আইনজীবী আসাদুল হককে নৃশংসভাবে হত্যা করার ঘটনাকে বিচারক ঠাণ্ডা মাথায় খুন বলেছেন। সেইসঙ্গে এ নৃশংস খুনের একমাত্র সাজা মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্য কোনও দণ্ড দেওয়া যায় না। তাদের মৃত্যুদণ্ডই হলো একমাত্র শাস্তি।
তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞ বিচারক আসামি রতন ও সাইফুল ইসলামকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন।
রায় ঘোষণার পর নিহতের ছোট মেয়ে মামলার বাদী আরফিন নাহার অংকন রায় বলেন, একটু দেরি হলেও এ রায়ে তার পরিবার এবং সে নিজে সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবি জানান।
অপরদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবি মোঃ আমজাদ হোসেন বলেন, উচ্চ আদালতে আপিল করার আমাদের অধিকার আছে। আমরা আপিল করব।
এসআইএইচ
