বাগান বিক্রির টাকায় এবার দক্ষিণ কোরিয়ার ৪ কিলোমিটার পতাকা

ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। আছে উম্মাদনা, ভক্তদের নানান ব্যতিক্রমী কাজ কারবারও। এবার আসন্ন কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে নিজের আম বাগান বিক্রি করে ও স্ত্রীর জমানো টাকা দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার ৪ কিলোমিটার পতাকা বানালেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক যুবক। তিনি নিজ বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই পতাকা টাঙিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে জীবিকার তাগিদে দক্ষিণ কোরিয়ায় যান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আবু কাউসার মিন্টু। তিনি উপজেলার দড়িকান্দি ইউনিয়নের খাল্লা গ্রামের পশ্চিম পাড়ার হাজী আবুল হাশেমের ছেলে। ২০০২ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ খেলা দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মাঠে বসে কোরিয়ার ফুটবল খেলা উপভোগ করেন মিন্টু। তখন থেকেই দক্ষিণ কোরিয়া ফুটবল দলের প্রেমে পড়ে যান তিনি। এরপর থেকে ফুটবলের বিভিন্ন আসরে দক্ষিণ কোরিয়া অংশ নিলে সমর্থন জানিয়ে আসছেন তিনি।
প্রবাস জীবন শেষে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ২০১৩ সালে দেশে ফিরেন মিন্টু। এর আগে ২০০৬ সালে ছুটিতে দেশে এসে পাশের ইউনিয়ন তেজখালীর পশ্চিম পাড়ার সাবিনা বেগমকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর স্বামীর পাশাপাশি সাবিনাও দক্ষিণ কোরিয়ার ফুটবল দলের ভক্ত হয়ে যান। তাই এবার আসন্ন ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে আমের বাগানের জায়গা বিক্রয় করে এবং স্ত্রীর জমানো টাকা দিয়ে নিজ বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার লম্বা দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা টাঙালেন আবু কাউসার মিন্টু।
আরও জানা গেছে, ৪ কিলোমিটার লম্বা পতাকাটি বানাতে তাদের খরচ পড়ে ৫ লাখ টাকা। এ কারণে স্ত্রীর ৮টি মাটির ব্যাংকে জমানো ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু এই টাকাতেও পতাকাটি বানানো সম্ভব না হলে নিজের পৈতৃক ভাবে পাওয়া একটি আমের বাগান বিক্রি করে দেন মিন্টু। পরে এর থেকে পাওয়া ৩ লাখ ২০ হাজার টাকাও পতাকা তৈরিতে ব্যয় করা হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মো.সোহাগ বলেন, ‘দীর্ঘদিন কোরিয়াতে থাকায় আবু কাউসার মিন্টু দেশটিকে ভালবাসে। কোরিয়ার খেলা হলেই তিনি বাড়িতে পতাকা ঝুলাতেন। তিনি কোনও লাভের জন্য এই পতাকাটি তৈরি করেননি। তিনি চান কোরিয়ার মানুষ বাংলাদেশটাকে আরও জানুক-চিনুক। বাংলাদেশের সঙ্গে কোরিয়া সম্পর্ক আরও সুসংগঠিত হোক, তিনি চান।’
আবু কাউসারের স্ত্রী সাবিনা বেগম বলেন, আমাদের বিয়ে হয়েছিল ২০০৬ সালে। এরপর থেকে আমার স্বামী দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কে অনেক কথা জানিয়েছেন। তারপর থেকে আমিও দক্ষিণ কোরিয়া ফুটবল দলকে সমর্থন করি। আমাকেও সেই দেশে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কোরিয়ার প্রতি ভালবাসা থেকে মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা ও আম বাগান বিক্রয়ের টাকা দিয়ে এই পতাকা বানিয়ে ঝুলিয়েছে।
এ ব্যাপারে আবু কাউসার মিন্টু বলেন, প্রথম যখন বিশ্বকাপ দেখেছিলাম তখন দক্ষিণ কোরিয়া দলের আঞ্জুয়ান নামের এক খেলোয়ার দুর্দান্ত খেলেছিল। এরপর থেকেই মূলত আমি দলটির ভক্ত হয়ে যাই। প্রবাস থেকে ফিরলেও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি আমার ভালোবাসা কমেনি। গত বিশ্বকাপেও আমি রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় ওভার ব্রিজে এক হাজার ফুট দৈর্ঘ্যের দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা ঝুলিয়েছিলাম। কিন্তু এতে আমার মন ভরেনি। আমি চাই আমার এই পতাকার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ বাংলাদেশকে ভালোভাবে জানুক এবং সম্পর্ক সুদৃঢ় হোক।
এসআইএইচ
