ঘুষ ছাড়া মিলছে না কৃষি যন্ত্র!
ফাইল ফটো
কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে সরকার ভর্তুকি দিয়ে আমন মৌসুমে কৃষকদের দিচ্ছেন কম্বাইন হারভেস্টার, সিডার ও পাওয়ার থ্রেসার নামের যন্ত্র। সহজে স্বল্প সময়ে ধান কেটে জমিতেই ধান ছুঁড়ে মারার সুবিধা রয়েছে এই যন্ত্রে। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার একাধিক কৃষক বলছেন, মোটা অংকের উৎকোচ ছাড়া মিলে না এই যন্ত্র। টাকা দিলে কৃষক নয় যে কেউই পাচ্ছেন এই যন্ত্র। এদিকে উৎকোচের টাকা ২-৩ ভাগে ভাগাভাগির খবরও কৃষকদের মুখে শোনা যাচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন, উৎকোচ নয়। কিছু অফিস খরচ নিয়ে থাকেন অফিস সহকারী আসাদুজ্জামান।
এমন সব অনিয়মের বিরূদ্ধে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারাও।
অনুসন্ধানে একাধিক কৃষক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, অনেক মূল্যবান এই যন্ত্র বিতরণে কৃষকদের উল্লেখযোগ্য সুবিধা দিচ্ছে সরকার। নামমাত্র ডাউন পেমেন্ট নিয়ে যন্ত্র দিচ্ছে। মাসিক কিস্তির সুবিধা দিয়ে লম্বা সময়ে টাকা দিচ্ছেন কৃষকরা। নিশ্চিন্তে স্বল্প সময়ে আরাম আয়েশে ধান কাটতে পারছেন কৃষকরা এবং সেই জমিতেই ছুঁড়ছেন। অন্যের জমির ধান কেটে টাকা আয় করছেন। এ জন্য প্রতি বছরের আমন মৌসুমে সরাইল উপজেলায় ৩০-৩৩ জন কৃষককে দেওয়া হয় এই যন্ত্র। কিন্তু যন্ত্র পাওয়ার তালিকা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে।
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) সকালে সরাইলে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১৩-১৮ নম্বর ক্রমিকের ৬ জন কৃষককে কম্বাইন হারভেষ্টার প্রদান করা হয়। বিতরণ শেষে অরূয়াইল ইউনিয়নের বারপাইকা গ্রামের কৃষক আবুল কাসেম বলেন, ‘যন্ত্রটি পেতে কত জায়গায় যেতে হয়েছে বলতে পারব না। তবে প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে দেড় লাখ টাকা উৎকোচ দিতে হয়েছে। উনারা বলেছেন-এটা নাকি অফিস খরচ। ১-১২ নম্বর সিরিয়ালের কাউকে না দিয়ে ১৩ নম্বর থেকে ৬ জনকে কেন দিলেন? বুঝলাম না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরো একাধিক কৃষক বলেন, যদিও যন্ত্রগুলো সরকার কৃষকের জন্য দিচ্ছেন। প্রকৃত কৃষক পাচ্ছে কিনা সেইটা কি কেউ খতিয়ে দেখছেন? উৎকোচের বিনিময়ে যে কেউ বাগিয়ে নিচ্ছেন এসব যন্ত্র। একই ব্যক্তি কৌশলে অন্য নাম ব্যবহার করে উৎকোচ দিয়ে যন্ত্র নিচ্ছেন। এলাকায় ও এলাকার বাহিরে সুবিধা বুঝে বিক্রিও করে দিচ্ছেন। গত দুই বছরের বিতরণকৃত যন্ত্র গুলোর কয়টি এলাকায় আছে? এই তথ্য কি কৃষি অফিসের কাছে আছে? উৎকোচের টাকা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাসহ ২-৩ ভাগে ভাগ হয়ে আসছে। এ তালিকায় রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের পদধারী প্রভাবশালী নেতাও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দপ্তরের একাধিক ব্যক্তি জানান, যন্ত্র প্রাপ্তির জন্য নিজ ইউনিয়নের ব্লক সুপারভাইজার স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্র লাগে। সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নিজের ইচ্ছায় শুক্রবার বন্ধের দিন বিতরণ করে ফেলেছেন। পরে পেছনের তারিখে তাদের স্বাক্ষর নিবেন।
এ বিষয়ে অফিস সহকারী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, অফিস খরচ ও ষ্ট্যাম্পের জন্য কেউ খুশি হয়ে দিলে এক থেকে দেড় হাজার টাকা নিয়ে থাকি।
এ প্রসঙ্গে সরাইল সদর ইউপি আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মো. কায়কোবাদ বলেন, কৃষকের জন্য ভর্তুকি দিলেও সরকারের প্রচার নেই। প্রকৃত কৃষক যন্ত্র পাচ্ছে না। সুবিধা পেয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীকে দেওয়া হচ্ছে। বঞ্ছিত হচ্ছে কৃষক।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুর রাশেদ বলেন, উৎকোচের বিনিময়ে যন্ত্রগুলি বিতরণ করছেন। সরকারের কথা বলছেন না। প্রকৃত কৃষকরা বারবার বঞ্ছিত হচ্ছে। তারা যন্ত্রগুলোর ধারে কাছেও আসতে পারছে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. একরাম হোসেন বলেন, ১৩ থেকে ১৮ নম্বর পর্যন্ত এমপি মহোদয়ের অনুমোদন করানো। তাই তাদেরকে প্রথমে দিতে হয়েছে। বড় অংকের টাকা লেনদেনের বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে আমি কোম্পানির কাছ থেকে একটা অনিয়ম পেয়ে থাকি। কৃষক পরিচয়ের সকল কাগজপত্র যাচাই-বাচাই করে দিয়ে থাকি। ব্যবসা ভালো হলে চাহিদা থাকলে একই কৃষক একাধিকবার যন্ত্র পেতে পারে।
এসআইএইচ