'এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় বিভীষিকাময় সেই স্মৃতি'

'যুবক ছিলাম তখন। গায়েও শক্তি ছিল অনেক। কিন্তু আমার বয়সে এমন বন্যা আর দেখি নাই। ঘরবাড়ি ভেঙে সব কিছু তছনছ হয়ে যায়, ঘর চাপা পড়েও অনেক মানুষ মারা যায়। মুহূর্তেই পানি এসে সব তলিয়ে যায়।চোখের সামনে অনেক লাশ পানিতে ভেসে যায়। অনেকের খোঁজও মেলেনি। বিভীষিকাময় সেই স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়ায়।' ১৯৭০ সালের ভয়াল ১২ নভেম্বরের বিভীষিকাময় সাইক্লোনের স্মৃতি তুলে ধরে কথাগুলো বলছিলেন উপকূলীয় বরগুনা জেলার পাথরঘাটা পৌরশহরের বাসিন্দা সিরাজুল হক মোল্লা।
জানা যায়, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের আজকের দিনে বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বাগেরহাট, সাতীরা, পিরোজপুর সহ উপকূলীয় অঞ্চল দিয়ে বয়ে গিয়েছিল ভয়াল সাইক্লোন। এতে লাধিক মানুষ ও গবাদি পশুর প্রাণহানি ঘটে। সেই সঙ্গে এর তাণ্ডবলীলায় তছনছ হয়ে যায় পুরো উপকূলীয় অঞ্চলের বাড়িঘর ও গাছ- পালা। সেই ভয়াল ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় কাছ থেকে দেখেছিলেন বরগুনার বলেশ্বর নদী পাড়ের পদ্মা গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা হাজী আবদুল কাদের।
সেদিনের সেই স্মৃতি কথা বলতে গিয়ে আবদুল কাদের বলেন, 'আমরা চোখে দেখেছি ৭০ এর পানির তাণ্ডব। মুহুর্তেই সব কিছু তছনছ করে দেয়। বিষখালী নদী থেকে ভেসে আসতে দেখেছি শুধু লাশ আর লাশ। লাশ দাফনেরও কোন ব্যবস্থা ছিল না। অনেক লাশ নিজের হাতেও সরিয়ে দিয়েছি। বন্যার পর অভাবের তাড়নায় মানুষ ভাতের মার খেয়েছে দিনের পর দিন।'
পাথরঘাটার গহরপুর গ্রামের ইদ্রিস আলী খান বলেন, 'আমরা চোখে দেখেছি পানির সেই তাণ্ডব। আমরা ৭ ভাই-বোন ছিলাম। পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে ছোট দুই ভাইকে নিয়ে পাশেই ওয়াপদা ভবনের উপরে দিয়ে আসার পর, বাকিদের আনার জন্য বাড়ি পর্যন্ত যেতে পারিনি। এর আগেই পানিতে সব তলিয়ে গিয়েছিল।'
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর সংঘটিত ঘূর্ণিঝড়টি পৃথিবীর সর্বকালের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণঘাতী ঝড় হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। চলতি বছরের ১৮ মে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বিশ্বের পাঁচ ধরনের ভয়াবহ প্রাণঘাতী আবহাওয়ার ঘটনার শীর্ষ তালিকা প্রকাশ করে।
এতে বলা হয়, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে ১৩ নভেম্বর ভোর পর্যন্ত বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে সর্বকালের ভয়াবহ প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে। সরকারি হিসেবে এতে তিন থেকে পাঁচ লাখ মানুষ মারা যান। তবে বেসরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি ছিল।
এএজেড
