প্ল্যান্টলেটের চারা দিয়ে উৎপাদন হবে আলু

নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলায় ভিত্তিবীজ আলু উৎপাদন খামারে চলতি মৌসুমে ৪১৯ একর জমিতে আলু চাষ করার প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে জমি তৈরি ও আলু রোপনের ধুম চলছে এই খামারটিতে। বিশাল আকারের খামারটিতে এখন শুধুই চলছে আলু রোপনের কাজ। সবাই মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকরা আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইতোমধ্যে জমি তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। জমিগুলোতে এখন চলছে আলু রোপনের কাজ। চলতি মৌসুমে ডোমার ভিত্তিবীজ আলু উৎপাদন খামারে আলুর গাছ থেকে প্ল্যান্টলেট (আলুর চারা) উৎপাদন করা হয়েছে। আলুর গাছ থেকে টিস্যু সংগ্রহ করে ল্যাবে ২০/২২ দিনের মধ্যে প্ল্যান্টলেট তৈরি করা হয়। এখন সেই চারাগুলো দিয়ে উৎপাদন হবে আলু। বর্তমানে মিনিটিউবারের আলুর চারা রোপনের কাজ চলছে। খামারের ১৭ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের মিনি টিউবারের আলু চাষ করা হবে।
ডোমার ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামারের উপ-পরিচালক আবু তালেব মিঞা জানান, ২০০৭ সাল থেকে এই খামারে প্ল্যান্টলেট হতে মিনি টিউবার (আলুর চারা) উৎপাদন করা শুরু হয়। আমাদের খামারের নিজস্ব ল্যাবে প্ল্যান্টলেটের মাধ্যমে প্রায় ১৮ লাখ মিনি টিউবার (আলুর চারা) উৎপাদন করা হয়েছে। এখানে ডায়মন্ড, কার্ডিনাল, সানশাইন, এস্টারিক্সসহ ১৮ জাতের আলুর প্ল্যান্টলেটের মাধ্যমে মিনি টিউবার উৎপাদন করা হয়। জমি তৈরির পর নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে এই চারা গুলো মাঠে রোপন করা শুরু হয়েছে। মিনি টিউবারের আলুর চারাগুলো রোপনের ৭৫/৮০ দিনের মধ্যে ফসল উৎত্তোলন করা যায়। ভাইরাসমুক্ত হওয়ায় আলু উৎপাদনও ভালো হয়। মিনি টিউবারের মাধ্যমে আলুর যে চারাগুলো উৎপাদন হয় তা আলু চাষের জন্য সাশ্রয়ী। আলুর বিভিন্ন জাতগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। মিনি টিউবারের মাধ্যমে চারা তৈরি করলে বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা কমার পাশাপাশি আলু চাষে খরচ অনেকটা কম হবে।
আলুর গাছ থেকে টিস্যু সংগ্রহ করে ল্যাবে ২০/২২ দিনের মধ্যে প্ল্যান্টলেট (আলুর চারা) তৈরি হয়। একটি চারা থেকে অনেক চারা তৈরি করা হয়ে থাকে। এই টিউবারের চারাগুলো ভাইরাসমুক্ত থাকায় অলুতে রোগ আক্রমণ করার সম্ভাবনা অনেকটাই কম। চলতি মৌসুমে প্ল্যাটলেটের মাধ্যমে ১৮ জাতের আলুর চাষ করা হচ্ছে এই খামারটিতে। কৃত্রিম উপায়ে উদ্ভিদ বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশে প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ল্যাবরেটরিতে স্বল্প সময়ে মাতা উদ্ভিদ টিস্যু বা অঙ্গ থেকে দ্রুত অধিক পরিমাণ সুস্থ অনুচারা বা অঙ্গজ বীজ উৎপাদন করাই হলো টিস্যু কালচার পদ্ধতি। এই পদ্ধতির চারাগুলো ভাইরাসমুক্ত হওয়া আলুর উৎপাদন পাওয়া যায় দ্বিগুণ।
প্ল্যাটলেট ছাড়াও বাকি ৪০০ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ করার লক্ষ্যে পুরোদমে কাজ চলছে। দম ফেলার কুসরত পাচ্ছেন না কর্মকর্তা থেকে কর্মচারী পর্যন্ত। এরমধ্যে নেট হাউজের মাধ্যমে ১৪০ একর আলু চাষ করা হবে খামারটিতে। এর আগে প্রায় আড়াইশ একর জমিতে আউশ ধানবীজ চাষ করা হয় খামারটিতে। লক্ষ্যমাত্রা ধরার হয়েছিল ৩০৮ টন। প্রতিকুল আবহাওয়ার মধ্যেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭২ টন ধানবীজ বেশি উৎপাদন করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন খামার কর্তৃপক্ষ।
উপ-পরিচালক আবু তালেব মিয়া আরও জানান, আবহাওয়া অনুকূল থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও রের্কড পরিমাণ আলু উৎপাদন করা সম্ভব হবে চলতি মৌসুমে।
আরএ/
