রেলস্টেশনে পুলিশের সামনেই টিকিট কালোবাজারি!
পূর্বাঞ্চল রেলপথের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে জংশন আখাউড়া। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এ রেলওয়ে জংশন। এ রেলপথের অন্যান্য স্টেশনের চেয়ে আখাউড়া স্টেশনের রাজস্ব আয় বেশি হলেও যাত্রীসেবার মান নেই বললেই চলে। এ স্টেশনে আন্তঃনগরসহ অন্যান্য ট্রেনের যাত্রী সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও প্রতিনিয়ত কমেছে আসন যুক্ত আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আখাউড়া জংশন ঘিরে গড়ে ওঠেছে একাধিক টিকিট কালোবাজারি চক্রের অপতৎপরতা।
এ কারণে সাধারণ যাত্রীদের নাগালের বাইরে থাকছে ট্রেনের টিকিট। অপর দিকে বিশাল এড়িয়া জুড়ে জংশন এলাকা হওয়ায়, রেলওয়ে থানা মূল স্টেশন থেকে কিছুটা দূরে। থানা এলাকায় রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের অফিস রয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের তেমন সমাগম নেই। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সেখানে গড়ে উঠেছে মাদক ও জুয়ার আসর।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আখাউড়া স্টেশনে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের পেছনে সহযোগী হিসাবে কাজ করছেন রেলওয়ে পুলিশ, রেলস্টেশনের বুকিং সহকারীরা সহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা। আর থানার পাশেই অবস্থিত লাল হোসেন ইনিস্টিউট চত্বরের বাংলাদেশ রেলওয়ে এমপ্লয়ীজলীগ কার্যালয় কক্ষে প্রতিদিন সন্ধ্যায় বসে মাদক ও জুয়ার আসর। এ ব্যাপারে অবগত হলেও একে অন্যের দায়িত্ব বলে অজানা কারণে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা রেলওয়ে থানার ও বেঙ্গল থানা পুলিশ।
ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানান, আখাউড়া স্টেশনে ট্রেনের টিকিট যাত্রার ৫ দিন আগে অনলাইনে ও স্টেশন কাউন্টারে বিক্রি করা হয়। এখন নির্ধারিত মোট আসনের ৫০ শতাংশ অনলাইনে এবং ৫০ শতাংশ কাউন্টারে বিক্রি করা হচ্ছে। সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, টিকিট বিক্রি শুরুর অল্পসময়ের মধ্যেই তা শেষ হয়ে যায়। বিশেষ করে আখাউড়া থেকে ঢাকামুখী আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটের ব্যাপক সংকট দেখা যায়। তবে কাউন্টারে টিকেট না পাওয়া গেলেও কাউন্টারের সামনেই ২-৩গুন দামে প্রতিনিয়ত বিক্রি হয় টিকেট।
যদিও আখাউড়া রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ চেলেঞ্জ করেছেন উনি আসার আগে কালোবাজারি হলেও উনি আসার পর কালোবাজারি বন্ধ রয়েছে। তবে গত ২ ও ৩ নভেম্বর সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ঠিক তার উল্টো, আগের তুলনায় টিকেট নিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি এখন আরও বেড়েছে। কালোবাজারি ছাড়া এখন আর কাউন্টারে তেমন একটা পাওয়া না অন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট। এবং কালোবাজারিদের টিকেট বেচতে দেখা যায় মূল ফটকের সামনেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট-নোয়াখালী ও ময়মনসিংহ রেলপথে চলাচলকারী আন্তঃনগর ২২টি ট্রেন আখাউড়ায় যাত্রাবিরতি রয়েছে। সেই সঙ্গে আছে মেইল ও লোকাল ট্রেনের যাত্রাবিরতি। এ স্টেশন থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী আন্তঃনগর মেইল লোকাল ট্রেন দিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই স্টেশন দিয়ে ভ্রমণ করছেন। তবে যাত্রীদের অভিযোগ এই স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের চাহিদানুযায়ী আসন যুক্ত টিকিট নেই। অথচ প্রত্যেকটি ট্রেনে আসনের দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি যাত্রী দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করছে।
আখাউড়া থেকে ঢাকা মুখি আন্তঃনগর মেইল গুলোর শোভন চেয়ারের ভাড়া ১২০ থেকে ২০০ টাকা, স্নিগ্ধা চেয়ারের ভাড়া ৩০০ থেকে ৫৫০ টাকা। তবে কালোবাজারিদের হাতে গেলেই তা হয়ে যায় যথাক্রমে ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা এবং ৬০০ থেকে ৮৫০ টাকা। বিশেষ দিন বা ঢাকায় সরকারি চাকরির পরীক্ষার তারিখ থাকলে কালোবাজারে এই টিকিটের দাম আরও বেড়ে যায়।
আখাউড়া থানার অফিসারের ইনচার্জ মোঃ আসাদুল ইসলামের কাছে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেলওয়ে থানার পাশে জুয়া খেলা ও মাদক সেবনের এই অভিযোগটি আমি আগেও পেয়েছি এবং একবার গিয়েও ছিলাম। কিন্তু ওইটা রেলওয়ের জায়গা এবং রেলওয়ে থানা ঘেঁষে, তাই এইটা দেখবালের দায়িত্বও তাদের। যদি তারা না পারে আমাদের অবগত করুক, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিব।
এর কিছুক্ষন তিনি আবার ফোন করে জানান, আমি আপনার ফোন পাওয়ার পর এখন ঘটনাস্থলে এসেছি,এইটা রেলওয়ের জায়গা এবং এইটা দেখাশোনার দায়িত্ব রেলওয়ে পুলিশের। এখানে জুয়া খেলে সহ সবকিছু করে রেলের কর্মচারীরা। রেলওয়ে থানার ওসি অযুক্তিকভাবে বিষয়টি আমাদের বলে দ্বায় এড়িয়ে যেতে চাচ্ছেন। আমি এক্ষন উনার সাথে দেখা করে এই বিষয়ে সমন্বয় করে কথা বলে যাব।
এএজেড