বক্তব্য রাখছিলেন ওবায়দুল কাদের, বাইরে বিস্ফোরণ
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই এমপির অনুসারীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, গোলাগুলি ও ককটেল বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
শনিবার (৫ নভেম্বর) দুপুর ১২ টার দিকে যখন সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এবং সংরক্ষিত আসনের এমপি আঞ্জুম সুলতানা সীমার সমর্থকদের মধ্যে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্মেলন মঞ্চে বক্তব্য রাখছিলেন।
প্রায় ২৫ মিনিট ধরে চলে এ সংঘর্ষ; বিস্ফোরিত হয় প্রায় অর্ধশতাধিক ককটেল। জানা গেছে, শনিবার কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন কুমিল্লা টাউন হল মাঠে আয়োজন করা হয়। মহানগর কমিটির সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের নেতৃত্বে এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
সম্মেলন শুরু হওয়ার পর মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনজুম সুলতানা সীমা এমপি ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সম্মেলন স্থলে যেতে চাইলে তাদের কুমিল্লা টাউন হল গেইট দিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এসময় এমপি সীমার সমর্থক নেতা-কর্মী ও এমপি বাহারের সমর্থক নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।
এসময় নজরুল এভিনিউ রোডে উভয় গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি, ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। মুহুর্মুহু বিস্ফোরণে আতঙ্কিত লোকজন ছুটাছুটি শুরু করে। মুহূর্তেই ফাঁকা হয়ে যায় কান্দিরপাড়-পূবালী চত্তরের সড়ক। শনিবার বেলা সোয়া ১১টায় কুমিল্লা টাউন হল মাঠে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন শুরু হয়।
বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ, কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মো. আবদুস সবুর, কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা সদর আসনের এমপি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।
সম্মেলন শুরু হওয়ার পর বেলা পৌনে ১২টার দিকে ওবায়দুল কাদের টাউন হল মাঠের সম্মেলনস্থলে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এ সময় সম্মেলনে প্রবেশের চেষ্টা করেন আঞ্জুম সুলতানা। কিন্তু তাঁকে সম্মেলনে ঢুকতে দেননি এমপি বাহার সমর্থক নেতা-কর্মীরা। বাধা পেয়ে সেখান থেকে চলে আসেন সীমা। এরপর ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলির শুরু হয়।
ওবায়দুল কাদের বক্তব্য চলা অবস্থাতেই প্রায় ২৫ মিনিট ধরে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আজিম খান জুয়েলসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।
পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কুমিল্লার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, কান্দিরপাড় এলাকায় দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। ওই এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে। ঝামেলা হয়েছিল টাউন হল মাঠের বাইরে অন্য সড়কে।
প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। যোগাযোগ করা হলে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও সদ্য বিলুপ্ত কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আঞ্জুম সুলতানা বলেন, আমি কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, অথচ আমাকে সম্মেলনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে আমি সেখান থেকে চলে আসি। এরপর ঝামেলা হয়েছে।
এদিকে সম্মেলনে এমপি সীমার সমর্থক নেতা-কর্মীরা আসতে না পারা ও সম্মেলনের বাইরের গোলাগুলির বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ তার বক্তব্যে বলেন, সম্মেলনে যারা আসতেন পারে নাই, তারা আসলে খুশি হতাম।
এএজেড