পিছিয়ে গেছে জাইকার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ

চলে যাচ্ছে ২০২২ সাল। প্রকল্প চলছে ২০২০ সালের। সরাইলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে জাইকার (জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা) প্রতিনিধির মতবিরোধের কারণে দুই বছর পিছিয়ে গেছে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি হয়েও কিছুই জানেন না বলে অভিযোগ করছেন ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগম ও আবু হানিফ।
প্রকল্প গ্রহন, বাজেট ও অর্থ উত্তোলনে তাদেরকে পাত্তাই দিচ্ছেন না জাইকার স্থানীয় প্রতিনিধি মো. মমিনুল। ক্ষোভে ভাইস চেয়ারম্যান আবু হানিফ ৬ মাস আটক রেখেছিলেন প্রশিক্ষণ প্রকল্পের ফাইল। তবে সভা করে সকলের মতাতের ভিত্তিতেই নিয়ম মাফিক প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা বলছেন জাইকার প্রতিনিধি।
২০২০-২১ সালের প্রকল্প ২ বছর পর তড়িগড়ি করে শেষ করা হচ্ছে ২০২২ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের হার যখন শুন্যের কোঠায়। প্রতিরোধের যুদ্ধও প্রায় শেষ। এ সময়ে জাইকা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন করোনা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ের। বিষয়টি নিয়ে প্রশিক্ষণ শেষে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য কর্মী রাজিবসহ অনেকেই।
উপজেলা প্রশাসন ও জাইকার স্থানীয় প্রতিনিধি সূত্র জানায়, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কাজের পারফরমেন্সের ভিত্তিতে ২০২০-২১ সালে সরাইল উপজেলাকে জাইকা বরাদ্ধ দেন ৭০ লাখ টাকা। এই টাকায় উপজেলা পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষে মডেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা। ব্যক্তিগত সুবিধার প্রকল্প এর আওতাভুক্ত নয়। পদাধিকার বলে ভাইস চেয়ারম্যানরা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি। কিন্তু ভাইস চেয়ারম্যানদের অজান্তেই প্রশিক্ষণ খাতে ১০ লাখ আর অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে ৬০ লাখ টাকার ব্যয় বরাদ্ধের বাজেট তৈরী করা হয়েছে।
উন্নয়ন কাজ প্রায় শেষ। ৩ শত টাকার ৭টি ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন ভাইস চেয়ারম্যানদের। অথচ প্রকল্প গ্রহন, বরাদ্ধ, বাস্তবায়ন ও টাকা উত্তোলনের বিষয়ে কিছুই জানেন না চেয়ারম্যানদ্বয়। জাইকার প্রতিনিধির সাথে শুরূ হয়ে যায় জনপ্রতিনিধিদের মতবিরোধ। উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায়ও এই বিষয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আমরা। ৭টি ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিলেন।
প্রকল্প গ্রহনের বিষয়ে আমাদেরকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না কেন? সভায় এমন সব প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন ভাইস চেয়ারম্যানরা। ক্ষোভে এক সময় প্রশিক্ষণ প্রকল্পের ফাইল নিজের কাছে আটক রাখেন ভাইস চেয়ারম্যান আবু হানিফ। ৬ মাস পর অতিসম্প্রতি দায়িত্বশীল লোকদের মধ্যস'তায় ফাইল ফিরিয়ে দিয়েছেন।
জনপ্রতিনিধি ও জাইকার স্থানীয় প্রতিনিধির মতবিরোধ মতানৈক্যের কারণেই কাজে দীর্ঘসূত্রিতা হয়েছে। অথচ ২০২১-২২ সালের বরাদ্ধ ৬০ লাখ ও ২০২২-২৩ সালের মূল্যায়নে সফল হলে বরাদ্ধ আসবে ৫০ লাখ টাকা। ২২ সালের নভেম্বর চলে যাচ্ছে এখনো ওই দুই বছরের প্রকল্প শুরূর গন্ধও নেই।
ভাইস চেয়ারম্যান আবু হানিফ ও রোকেয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, প্রশিক্ষণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন কোন প্রকল্প বাস্তবায়নেই আমাদেরকে কিছুই জানান না। বাজেট কত? কখন কীভাবে টাকা উত্তোলন হচ্ছে? তাও আমাদের অজানা। জাইকার প্রতিনিধি সম্পুর্ণ নিজের মত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রধানদের সাথে মিলে যেভাবে ইচ্ছো প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়ন করছেন। টাকাও উত্তোলন করছেন তারাই।
এসব কারণেই প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা হচ্ছে। জাইকার সরাইল উপজেলা সমন্বয়কারী (প্রতিনিধি) মো. মুমিনুল সকল অভিযোগকে অযৌক্তিক অসত্য বলে উড়িয়ে দিয়ে ৭টি ষ্ট্যাম্পে ভাইস চেয়ারম্যানদ্বয়ের স্বাক্ষর নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি নিয়ম মাফিক সভা করে সকলের মতামতের ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়ন করছি। দপ্তর প্রধান ও বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিবরা সভাপতিকে পত্র দ্বারা অবহিত করছেন। এমনকি প্রশিক্ষণে উনারা লোকও দিচ্ছেন। কেন ৭ মাস ফাইল আটক ছিল? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি নীরব থাকেন।
এএজেড
