শ্রমিক ইউনিয়নের নামে বছরে কোটি টাকা চাঁদাবাজি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শ্রমিক ইউনিয়নের নাম ভাঙ্গিয়ে হাজার হাজার সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালককে কৌশলে জিম্মি করে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। সড়ক মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে এসব চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। আর এর পেছনে শ্রমিক ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নেতৃবৃন্দ ও তাদের লাঠিয়াল বাহিনী নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতে করে প্রতি বছরে তারা ৩ কোটি টাকারও বেশী অর্থ লোপাট করছে। মূলত শ্রমিকদের কল্যানের কথা বলে এসব চাঁদা নেয়া হলেও তা যাচ্ছে একটি সিন্ডিকেটের পকেটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা থেকে প্রতিদিন কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে জেলার কসবা-নবীনগর ও মেড্ডা-সরাইল-নাসিরনগর সড়ক, আশুগঞ্জসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে ১৪ হাজারের অধিক সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চলাচল করে। তবে এসব সড়কে চলাচল করতে চালকদের প্রতিদিন দিতে হচ্ছে চাঁদা। অন্যথায় তাদের সিরিয়াল না দেয়াসহ কোন সড়কেই চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না। উপায়ন্তর না দেখে চালাকরাও বাধ্য হয়েই চাঁদা দিয়ে থাকে।
সূত্র জানায়, ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলা (সিএনজি) চালিত অটোরিক্সা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজিঃ-নং-চট্টঃ-২৫২৮) এর কাউতলী শাখার সভাপতি মোঃ আইয়ুব মিয়া এবং সহ-সভাপতি মোঃ সুমন মিয়ার তত্ত্বাবধানে প্রতিদিন ১২০০ গাড়ি থেকে রিসিট দিয়ে ২০ টাকা করে ২৪ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।
এছাড়া একই শ্রমিক ইউনিয়ন পুরাতন জেলখানার মোড় শাখার নেতা মোঃ মহসিন মিয়ার তত্ত্বাবধানে একই কায়দায় ৮০০ গাড়ি থেকে ২০ টাকা করে ১৬ হাজার টাকা নিচ্ছে। শুধু তাই নয় ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলা (সিএনজি) চালিত অটোরিক্সা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজিঃ-নং-চট্টঃ-২৫২৮) সভাপতি মোঃ হেবজুল করিম এবং যুগ্ম সম্পাদক মোঃ দেওয়ান মিয়ার বিরুদ্ধেও চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র মতে, তাদের শ্রমিক ইউনিয়নের দায়িত্বশীল পদে থাকা এই দুই ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে প্রতিদিন ৭শ সিএনজি অটো থেকে তথা কথিত রিসিটি দিয়ে ২০ টাকা করে ১৪ হাজার টাকা আদা করা হয়ে থাকে। একই ধরণের চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা (সিএনজি) চালিত অটো রিক্সা পরিবহন মালিক সমিতি (রেজিঃ-নং-চট্টঃ-১৮৭১) বিরুদ্ধেও। সংগঠনের সহ-সাধারন সম্পাদক মোঃ মানিক মিয়ার তত্ত্বাবধানে লাঠিয়াল মোঃ জয়নাল মিয়া ও মোঃ রৌফ মিয়া রিসিট ছাড়া চাঁদা তুলে থাকে। প্রতিদিন ১৫শ সিএনজি অটোরিক্সা থেকে ১০ টাকা করে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।
এছাড়াও একই সংগঠনের প্রধান কার্যালয় পূর্ব মেড্ডা অটোরিক্সা টার্মিনালের সমাজ কল্যান সম্পাদক মোঃ হামিদ বক্সের সেলটারে বিশ্বরোড উত্তর সাইটে লাঠিয়াল মোঃ জুবায়েদ বক্স রিসিট ছাড়া চাঁদা তুলে। প্রতিদিন ১৪শ সিএনজি অটো থেকে ২০ টাকা করে ২৮ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। অনুসন্ধান করে ও সূত্র মতে তথ্য পাওয়া যায়, প্রতিমাসে জেলায় বিভিন্ন সিএনজি চালিত অটোরিক্সা স্ট্যান্ড থেকে প্রতি মাসে ২৯ লক্ষ ১০ হাজার টাকা চাঁদা উঠে। আর এসব টাকা থেকে কর্মচারীদের বেতন, কার্যালয়ের খরচ মেটানোসহ আইন শৃংখলা রক্ষাকারীদেরও মাসোহারা দেয়া হয়ে থাকে।
সূত্র মতে, পূর্ব মেড্ডা জেলা অফিসে প্রতি মাসে খরচ রয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা। এখান থেকে চাঁদা সংগ্রহকারী ৬জন কর্মচারীকে প্রতিমাসে ৯০হাজার টাকা দেয়া হয়। অফিস কেরানীকে ৬হাজার টাকা, পিওনকে ৩ হাজার, আইন শৃংখলা রক্ষাকারীদের ১৯ হাজার ৫০০ টাকা দেয় হয়ে থাকে।
কাউতলী শাখা অফিসে মাসে খরচ হয় ৯৮ হাজার টাকা। যোগান দেয়া হয় চাঁদার টাকা থেকেই। মাসে অফিস খরচ ১০ হাজার টাকা, ৪ জন চাঁদা সংগ্রহকারীর বেতন ৬০ হাজার টাকা, কেরানী ৬ হাজার, পিওনকে ৩ হাজার টাকা, আইন শৃংখলা রক্ষাকারীদের ১৯ হাজার টাকা।
জেলখানা মোড় শাখা অফিসে মাসে খরচ হয় ৯১ হাজার টাকা। ৪ জন চাঁদা আদায়কারীর মাসে বেতন ৬০ হাজার টাকা, কেরানী ৬ হাজার, পিওনকে ৩ হাজার টাকা, আইন শৃংখলা রক্ষাকারীদের ১৯ হাজার ৫শ টাকা দেয় হয়ে থাকে এবং অফিস ভাড়া ৩ হাজার টাকা।
ঢাকা-সিলেট-কুমিল্লার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্বরোড মোড়ে উত্তর সাইটে অফিস মাসে খরচ ৬০হাজার টাকা। ৪ চাঁদা সংগ্রহকারীর মাসে বেতন ৬০ হাজার টাকা। বিশ্বরোড মোড় দক্ষিন সাইটে অফিস খরচ রয়েছে ৬৩ হাজার টাকা। ৪ জন চাঁদা সংগ্রহকারীর বেতন ৬০ হাজার টাকা এবং অফিস ভাড়া ৩ হাজার টাকা। সে হিসেবে প্রতিমাসে সিএনজি চালিত অটোরিক্সাগুলো থেকেই চাঁদা উত্তোলন হয় ২৯ লক্ষ টাকার অধিক।
সব মিলিয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। সূত্র জানায়, খরচ বাদে প্রতিমাসে উত্তোলিত চাঁদার ২৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা অবশিষ্ট থাকে। যা জেলা (সিএনজি) অটোরিক্সা পরিবহন মালিক সমিতি (রেজিঃ-নং-চট্টঃ-১৮৭১) ও (সিএনজি) অটোরিক্সা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজিঃ-নং-চট্টঃ-২৫২৮) মাঝে সমান ভাগ করে ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা করে নিয়ে যায়। সেখান থেকে জেলা (সিএনজি) চালিত অটোরিক্সা পরিবহন মালিক সমিতি (রেজিঃ-নং-চট্টঃ-১৮৭১) তাদের প্রাপ্ত ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা থেকে সংগঠনের ২১ কার্যকরী সদস্যদের মাঝে ২ হাজার টাকা করে ৪২ হাজার টাকা ভাগ করে দেয়।
বাকি ১১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা জমা থাকে সংগঠনের সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল কুদ্দুস নিকট। অনুরূপভাবে জেলা (সিএনজি) চালিত অটোরিক্সা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজিঃ-নং-চট্টঃ-২৫২৮) প্রাপ্ত চাঁদার টাকা থেকে সংগঠনের কার্যকরী ২১ সদস্যদের মাঝে ২ হাজার টাকা করে ৪২ হাজার টাকা ভাগ করে দেয়। অবশিষ্ট টাকা জমা থাকে সংগঠনের সভাপতি মোঃ হেবজুল করিম ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ স্বপন মিয়ার কাছে।
জেলা (সিএনজি) অটোরিক্সা পরিবহন মালিক সমিতি (রেজিঃ-নং-চট্টঃ-১৮৭১) এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল কুদ্দুস (০১৭১৯-৮৮৯৯৬২) জানান, এসব টাকা দিয়ে সংগঠনের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটানো হয়। অফিসে আসেন সব কথা মোবাইলে বলা যাবে না। জেলা (সিএনজি) অটোরিক্সা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজিঃ-নং-চট্টঃ-২৫২৮) সভাপতি মোঃ হেবজুল করিম (০১৭২৬-৮৩৫৯২৭) বলেন, সংগঠনের রশিদে লেখা আছে কি কাজে ব্যবহার করা হয়।
এএজেড