মানিকগঞ্জে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় মামলা
মানিকগঞ্জে ইউপি(ইউনিয়ন পরিষদ) চেয়ারম্যান শফিক ও তার অনুসারীদের হামলার শিকার হয়েছেন দুই সাংবাদিক। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে এ ঘটনায় মামলা হলেও অভিযুক্তদের কেউ এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি বলে জানা গেছে।
আহতরা হলেন-দৈনিক অধিকার পত্রিকার মানিকগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক টেলিগ্রাম পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি রফিক খান এবং দৈনিক টেলিগ্রাম পত্রিকার মাল্টিমিডিয়া প্রতিনিধি খাববাব হোসেন ত্বোহা।
মামলার এজাহার সূত্র জানা গেছে, মঙ্গলবার(১ নভেম্বর) দুপুরে দৌলতপুর উপজেলার চকমিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম তার অনুসারীদের নিয়ে সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তার সঙ্গে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আনিসুর রহমান, বিএনপি নেতা আমিনুর রহমান, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুমন মিয়া, বিএনপি নেতা ও ভূমিদস্যু মো. রফিকসহ অজ্ঞাত আরো ২০-২৫ জন্য দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বেধরক মারধর করে। এক পর্যায়ে টেনে হিছড়ে বাজার সংলগ্ন একটি ভবনের পৃথক দুটি রুমে নিয়ে আটক করে তাকে
প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে অবৈধভাবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়ার চেষ্টা করে ইউপি চেয়ারম্যান শফিক এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সম্পাদক আতাউর রহমান। পরে এ ঘটনায় আহত সাংবাদিকের ভাই দৈনিক টেলিগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সুজন বাদী হয়ে ১১ জনকে আসামি করে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় দৌলতপুর থানায় মামলা করেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক রফিক খান বলেন, ঘন্টাব্যাপী চলে শারিরিক নির্যাতন, ধারণ করা হয় এসব ভিডিও। চাওয়া হয় চাঁদাবাজের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি। অস্বীকৃতি জানালে বদ্ধ ঘরে চলে বেধড়ক নির্যাতন, যা ইউপি চেয়ারম্যানের সামনেই হচ্ছিল। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে থাকা মুঠোফোন এবং ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় চেয়াম্যানের লোকজন। মুছে ফেলা হয় সকল তথ্য। মুঠোফোন ফেরত পেলেও ব্যবহৃত ক্যামেরাটি পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, এদিন চকমিরপুর ইউনিয়নের চক খরিচরণ এলাকায় সরকারি জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণের বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শন করে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন তারা।
এ বিষয়ে প্রধান অভিযুক্ত সফিক চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে দ্বিতীয় অভিযুক্ত উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমারে সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ঘটনার শেষে সেখানে যাই। সফিক চেয়ারম্যানসহ সবাই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের অবস্থার অবনতি দেখে আমি তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। আমি এ ঘটনার সাথে জড়িত না বরং সাংবাদিকদের সহযোগিতা করেছি।
এদিকে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনও আসামি গ্রেপ্তার হয়নি জানিয়ে শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরজাহান লাবনী বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এ ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করে দৌলতপুর উপজেলার চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম রাজা বলেন, ‘অন্যায়কারী যেই হোক আইন তার গতিতে চলবে। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের দাবী করি।’
সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম ছারোয়ার ছানু, সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব চক্রবর্তীসহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ। তারা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করে সর্বচ্চ শাস্তি দাবি করেন।
এসআইএইচ