বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে মিষ্টির প্যাকেট

মিষ্টি একটি আদি সুস্বাধু খাদ্য। মিষ্টি পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সকলেই মিষ্টি পছন্দ করে। আর বিয়েসহ নানান সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এর কদর অপ্রতুল। এক সময় মিষ্টির জন্য মাটির হাড়ি ছিল বহনের একমাত্র বাহন। তবে আধুনিক যুগে তা সহজলভ্যতার কারণে কাগজে তৈরি প্যাকেটের উপর নির্ভর করতে হয়। এক সময় প্যাকেটগুলো হাতে তৈরি হলেও এখন তৈরি হচ্ছে মেশিনে। মেশিনে তৈরি করতে গিয়ে মেশানো হচ্ছে অনুমোদনহীন বিষাক্ত কেমিক্যাল। যার ফলে মানবদেহে সৃষ্টি হচ্ছে ক্যান্সার থেকে শুরু করে নানান ধরনের রোগ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় মিষ্টির প্যাকেট নির্মাণ কারখানা মাত্র ২টি রয়েছে। সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের নাটাই উত্তর পাড়ায় মো. আলী মিয়া ও সুলতানপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের সোহরাব খানের কারখানা রয়েছে। সরেজমিনে এসব কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় অনুমোদনের কোনও কাগজপত্র তাদের নেই। কাঁচামাল হিসেবে তুলা ও টিস্যুর গাদ দিয়ে নোঙরা আবর্জনা স্তুপে তৈরি করা হচ্ছে এসব প্যাকেট। নেই শ্রমিকদের নিরাপত্তাও। ফলে যেকোনো সময় কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কাও থেকে যায়।
এসব অব্যস্থাপনার বিষয়ে নাটাই উত্তর পাড়ায় অবস্থিত কারখানার মালিক মো. আলী বলেন, দীর্ঘ ২০ বছর থেকে এ ব্যবসা করছি। ব্যবসা করার জন্য ইউনিয়ন ট্টেড লাইসেন্স ছাড়া আমার কাছে আর কোনো কাগজপত্র নেই। কেউ আমাকে কখনও বলেনি কী কী কাগজপত্র লাগবে বা প্রয়োজন আছে।
নোঙরা পরিবেশ ও বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করি না।
নিউ সিনেমা রোডের আদর্শ মাতৃ ভাণ্ডারের মালিক মিষ্টি ব্যবসায়ী দুলাল ঘোষ জানান, মিষ্টির প্যাকেট কিভাবে তৈরি হচ্ছে তা জানার কোনো প্রয়োজন মনে করি না। আমরা ওজন, মজবুত ও দামে কম পাওয়ায় তা আমরা ব্যবহার করি।
তিনি আরো বলেন, এখন কাগজের প্যাকেট সহজলভ্যতার কারণে আমরা তা পরিবেশন করে থাকি। যদিও ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর থেকে এসব প্যাকেটের ওজন প্রকার ভেধে নির্ধারণ করে দিলেও মালিকপক্ষ তা কর্ণপাত করছে না।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান জানান, জেলার কোন কোন জায়গায় এসব প্যাকেট তৈরি হয় তা আমাদের জানা নেই। আমরা মিষ্টির দোকানের মালিকপক্ষকে প্রতি কেজি মিষ্টির প্যাকেট ওজন ৬০ গ্রাম এবং দুই কেজি প্যাকেটের ওজন ১০০ গ্রাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। তবে আমাদের মনিটরিং আরও বাড়াতে হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খালেদ হাসান বলেন, হাতে তৈরি প্যাকেটগুলো আমাদের আওতামুক্ত। তবে কারখানা থাকলে তা অবশ্যই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র লাগবে। আমি এই জেলায় নতুন এসেছি, এখনো অনেক কিছুই আমার জানা নেই। তবে ধীরে ধীরে সবগুলোই নিয়মের আওতায় আনার চেষ্টা করব। জেলায় পাঁচ শতাধিক মিষ্টির দোকান থাকলেও প্যাকেট বাজারজাতকরণের সংখ্যা ছোট-বড় প্রায় ১০টি রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন না থাকায় তাদের অধিকাংশ মালিকই পার্শ্ববর্তী জেলা কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার বিভিন্ন কারখানা থেকে আমদানি করে জেলার বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে পরিবেশন করে।
এসআইএইচ
