অন্যের বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন সুখ জাদীর

সুখ জাদী (৫৭)। দুই বছর বয়সী মেয়ে মরিয়মকে রেখে মারা যান স্বামী হ্যাসপেসু। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই একমাত্র মেয়েকে নিয়ে স্বামীর রেখে যাওয়া ৪ শতক জমিতে একটি টিন সেটের চালায় থাকতেন তিনি। ছিল না কোনো আবাদি জমি। বাবা-মা সুখে থাকার আশায় মেয়ের নাম রেখেছেন সুখ জাদী। স্বামী গরীব থাকলেও বেঁচে থাকা অবস্থায় স্বামীর ছোট সংসারে সুখ জাদী সুখে ছিল। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই সুখ জাদীর সুখ চিরকালে বিলীন হয়ে যায়। সুখ জাদী গোদ রোগী ছিলেন। দুই পায়ে গোদ রোগ হওয়ায় তেমন কাজ-কর্ম করতে পারেননি। একমাত্র মেয়েকে কিভাবে মানুষ করবেন সেই সময় চরম দুশ্চিন্তায় ছিলেন। পরে তিনি মেয়েসহ নিজের জীবন-জীবিকার তাগিদে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন। এভাবেই ভিক্ষাবৃত্তিসহ মানুষের সহযোগিতায় একমাত্র মেয়ে মরিয়মকে বড় করে তোলেন। মেয়ে মরিয়মও মাঝেমধ্যে প্রতিবেশিদের বাড়িতে কাজও করতেন। এভাবেই মা-মেয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। আট বছর আগে মেয়ে মরিয়মকে লালমনিরহাট জেলার বড়বাড়ী এলাকায় বিয়ে দেন মা সুখ জাদী। বিয়ের ১ বছর পর মেয়ে জামাই মেয়েকে রেখে অন্য এলাকায় চলে যান। মেয়ে মরিয়ম একটু বোবা প্রকৃতির হওয়ায় শত চেষ্ঠা করেও মেয়ের সংসার ঠেকাতে পারেনি মা সুখ জাদী। মেয়ে বোবা প্রকৃতির হওয়ায় মেয়ের দ্বিতীয় বিয়েও দিতে পারেননি তিনি।
সুখ জাদী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের তালুক শিমুলবাড়ী গ্রামের মৃত হ্যাসপেসু মিয়ার স্ত্রী। তিন বছর আগে স্বামীর রেখে যাওয়া ওই জমির উপর তোলা ভিটাটুকুও বারোমাসিয়া নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। এতে তিনি শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা হলেও উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত শিমুলবাড়ী গ্রামের শাহালম মিয়ার বাড়ির পেছনে ছোট্ট একটি টিনের চালায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাকে। গোদ রোগ থাকার পরেও জীবন-জীবিকার তাগিদে কোনো রকমে ভিক্ষাবৃত্তি করেই মেয়ে মরিয়মকে নিয়ে দিন পার করছেন তিনি।
বর্তমানে বিধবা ভাতার টাকা মাসে ৫০০ টাকা হলে তিন মাস পর পর ১ হাজার ৫০০ টাকা পান সুখ জাদী। বিধবা ভাতার টাকা ও ভিক্ষাবৃত্তি করেই যেখানে মা-মেয়ের জীবন চলা দায় সেখানে গোদ রোগের চিকিৎসা করাবেন কিভাবে। এদিকে বয়সের ভাঁড়ে প্রতিদিন ভিক্ষাও করতে পারেন না তিনি। যেদিন ভিক্ষা করতে যান মাত্র ২ কেজি চাল ও ৩০ থেকে ৪০ টাকা পান। ভিক্ষায় যা পান আর বিধবা ভাতার টাকা দিয়ে কোনো রকমে দু-বেলা দু-মুঠো খাবার জোটে সুখ জাদীর কপালে। ভিক্ষা করলে পেটে ভাত না পড়লে উপবাস থাকতে হয়। এভাবেই চরম দুচিন্তার মধ্যে দিয়ে মানুষের বাড়িতে অনেক কষ্ট করে ছোট একটি ছাপড়ায় থাকেন।
সুখ জাদী জানান, স্বামীর ভিটা-মাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় একমাত্র মেয়েকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। তারা কোনো রকমে বাড়ির এক কোণায় ছোট্ট একটি টিন সেটের চালায় অতি কষ্টে দিন পার করছি। থাকা-রান্নাসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। তাই এখানে থাকতে পারছি না। নিজের জায়গা, জমি না থাকায় শত শত কষ্টের মাঝেও এখানে পড়ে আছি। সেই সঙ্গে পেটের তাড়নায় অসুস্থ শরীরে দুই বাড়ি ভিক্ষা করতে হয়। আমার কষ্ট দেখে প্রতিবেশী এক ভাই থাকার জন্য ৪ শতক জমি দিয়েছে। টাকা-পয়সায় অভাবে সেখানে যেতে পারছি না।
সরকারি সহায়তার পাশাপাশি স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানসহ সমাজের সকল দানশীল ব্যক্তির কাছে একটা থাকার ঘর তৈরি করে দেওয়ার আকুতি আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রাশেদুল ইসলাম জানান, তিনি (সুখ জাদী) খুব কষ্টে মানুষের বাড়িতে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন এবং তাকে সহায়তার দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস জানান, তিনি যোগযোগ করলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহায়তা করা হবে।
এসআইএইচ
