সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে ৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে সৃষ্ট দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ফেনীর উপকুলীয় সোনাগাজী উপজেলায় সামুদ্রিক জোয়ার, ঝড় ও ভারী বর্ষণে ৭ কোটি ৩৫ লাখ ২০ হাজার ৭৫০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মনজুরুল হক ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ইকবাল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, সোমবার রাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়া ও সামুদ্রিক জোয়ারের পানিতে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১০-১২টি গ্রামের শতাধিক ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে শতশত মৎস্য খামার, পুকুর, গবাদি পশু, রোপা আমনের ক্ষেতসহ রাস্তা-ঘাট। বিদ্যুতের তার ছিড়ে, খুঁটি ভেঙে এবং ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ। এতে প্রায় ৭ কোটি ৩৫ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মনজুরুল হক বলেন, ঝড় ও জোয়ারের পানিতে উপজেলার চর চান্দিয়া, সদর, আমিরাবাদ ও চর দরবেশ ইউনিয়নের ১০-১২টি গ্রামসহ উপজেলার অন্যান্য এলাকায়ও ঝড়ো বাতাসে ও বাড়িঘর, গাছপালা ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, বুধবার উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের পাঠানো প্রাথমিক প্রতিবেদনে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝড়ো বাতাস ও জোয়ারের পানিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান তুলে ধরেছেন।
এর মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১১৫টি কাঁচা ও পাকা ঘরবাড়ি বিধস্ত হয়ে ১৯ লাখ ৫০ হাজার, ৭০ হেক্টোর আমনের ফসল ও শস্যে ২১ লাখ ১ হাজার ২৫০ টাকা, বিদ্যুতের ১২টি খুঁটি ভেঙ্গে ৮টি ট্রান্সফর্মার নষ্টসহ তার ছিড়ে ২১০ কিলোমিটার লাইনের ক্ষতি ১২ লাখ ৩০ হাজার, বন বিভাগের বিভিন্ন সড়কে গাছপালা ভেঙ্গে ও উপড়ে পড়ে ৫০ হাজার, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৫০০ কিলোমিটার সড়কের পিচ উঠে ও ভেঙ্গে ৪০ লাখ ২৫ হাজার, ১৭টি বিদ্যালয় ও মাদরাসার ভবন ও বেড়া ভেঙ্গে ২৫ লাখ ৬৫ হাজার, শতাধিক খামারের ১০০ হেক্টর ও ২৫০টি পুকুরের মাছ জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়ে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, একটি ট্রলার ডুবে ও ভেঙ্গে এক লাখসহ স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট আরও বেশকিছু প্রয়োজনীয় সম্পদ নষ্ট হয়ে প্রায় ৭ কোটি ৩৫ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আরও বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, ঝড় ও জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্তদেরকে সহায়তা প্রদানের জন্য বুধবার ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করে জেলা প্রশাসকের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে সরকারীভাবে যে সহায়তা আসবে তা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। দক্ষিণ চর চান্দিয়া গ্রামের মৎস্য খামারী মোশারফ হোসেন বলেন, তার খামার থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।
মুহুরী প্রকল্প এলাকার বাসিন্দা মৎস্য খামার ব্যবসায়ী শেখ ইকবাল হোসেন জানান, তার ৬০ একর বিশিষ্ট খামার থেকে জোয়ারের পানিতে প্রায় কোটি টাকার মাছ ভেসে যাওয়ায় তিনি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
চর চান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন মিলন বলেন, ঝড় ও জোয়ারের পানিতে ঘরবাড়ি, খামার ও পুকুরের মাছ ভেসে এবং গাছপালা ভেঙ্গে গিয়ে তার ইউনিয়নের বাসিন্দা সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানায়, সরকারীভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ধরা হলেও চারটি ইউনিয়নের উপকূলীয় বাসিন্দাদের মতে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এএজেড
