সিত্রাংয়ের আঘাতে ঝরছে কৃষকের চোখের জল
ভোলায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর আঘাতে কৃষকের স্বপ্ন ভেঙ্গে ঝরছে চোখের জল। উপকুলিয় অঞ্চলে যেসময় কৃষকের স্বপ্নপুরন ছুঁইছুঁই তখনই যেন হানা দেয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতি বছরই হেমন্তের শুরুতে দেশের দক্ষিনাঞ্চল উপকুলীয় এলাকায় কমবেশি প্রকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয় লঘুচাপ বা নিম্নচাপের প্রভাবে। দমকা বাতাস, প্রবল বর্ষন, অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি এসব মিলিয়ে একটা ক্ষতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয় উপকুলীয় এলাকায়। এসব দূর্যোগে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক। এসময় শীতের সবজি চাষ ও আমন ধান বের হওয়ার মোক্ষম সময়।
কিছু ধান বের হয়ে যায়, কিছু বের হতে থাকে, আবার দু চার দিন পর কিছু বের হবে ঠিক এমনই একটা মুহুর্ত হেমন্তের শুরুতে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এইসব ধানেরও সবজি চাষির ক্ষতি হয় বেশি। এই সময়টা কৃষকের কাছে একটা বিপজ্জনক সময়। উপকুলীয় জেলার কৃষক সমাজে প্রবাদ আছে 'কাইত্তাল্লা ঘাতলে' আল্লাহ বাঁচালে গোলা ভরবে ফসলে। এ অঞ্চলের কৃষক ধরে নেয় যে কার্তিক মাসে কিছু না কিছু দুর্যোগ হতেই পারে। তবে একাধিক কৃষক বলেন বিগত বছরে ঘটে বুলবুল বন্যার পরে এইবছর আবার সিত্রাং এর তান্ডবে আমাদের স্বপ্ন কেড়ে নিলো। বুলবুল বন্যার মতো এবছরও তার বেতিক্রম হয়নি।
অনেক আগেই উপকূলীয় অঞ্চলে বর্ষাঋতু পার হয়েছে। এখন শরৎকাল শেষে হেমন্তের শুরু। আর এই অসময়ে উপকুলীয় ১৩ জেলায় বন্যা হানা দিয়েছে। আচমকা বানের পানিতে চরাঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন ভেঙে ঝরছে চোখের জল। হঠাৎই মেঘনার পানি বৃদ্ধিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের কৃষকেরা। তারা জানিয়েছেন, এই প্রলয়ে তাদের কয়েক কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে। কাঁচা ও আধাপাকা ধান কেটে নিলেও শষা, বেগুন, টমেটো, সিম, রেখা, মরিচ, কেপ্সিকাপসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত সিত্রাংএর পানিতে তলিয়ে গেছে। চোখের সামনে সাজানো ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যেতে দেখে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
তবে লাখ লাখ টাকা খরচ করে সদ্য লাগানো বিভিন্ন সবজিক্ষেত সিত্রাংয়ের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আবারো নতুন করে চাষ করতে হবে কৃষকদের। এতে চরাঞ্চল কৃষকদের আকস্মিক বন্যার থাবায় কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে। অনেক আশা আর স্বপ্ন নিয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিভিন্ন ফসল চাষ করলেও সব স্বপ্ন আর আশা ভাসিয়ে নিয়ে গেল সিত্রাং। খালেক, দোলোয়ার, ইসমাইল, ইউসুফসহ অনেকে জানান, বুক ভরা আশা আর স্বপ্ন নিয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে শষা, রেখার চাষ করেছিলাম। হঠাৎ বানের পানি বৃদ্ধি, সাথে বৃষ্টি আমাদের সব স্বপ্ন শেষ করে দিলো। আমরা এখন পুরো বছর কিভাবে চলব।
পান চাষি আকুবআলি ও নাজিম বলেন, অনেক আশা ছিল পান ভেঙ্গে নতুন পানের বরজ তুলব, পাওনা-দাওনা শোধ করব কিন্তু আকস্মিক বন্যা সব কেড়ে নিলো তাই বাধ্য হয়ে ভেঙ্গেপরা বর কেটে নিচ্ছি।
কৃষি সম্প্রসারণ উপ-সহকারী মঞ্জুরুল আলম বলেন আমার কর্মস্থল এলাকা রাজাপুরে পান চাষি ও রবিশস্য তরকারি চাষির সংখ্যা বেশি। এখানকার চাষিদের কয়েক কোটি টাকার লোকসান গুনতে হবে। তারা বলেন, এই বন্যায় ২০০ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি পানিতে তালিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি ও বৃষ্টির কারণে প্রায় দেড় শত হেক্টর বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। তবে পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে।
ভোলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক হাসান মোঃ ওয়ারিসুল কবির জানান ক্ষতি গ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে তালিকা অনুযায়ী কৃষকদের ভর্তূকি প্রদান করা হবে।
এএজেড