সিত্রাংয়ের আঘাতে কক্সবাজারে অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে অস্বাভাবিক পানিতে প্লাবিত হয়েছে কক্সবাজারের অর্ধশত গ্রাম। সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাতের জোয়ারে জেলার দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া, মহেশখালী, কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও এবং টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে এসব গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে এতে কোনো প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও নোনা পানির স্রোতে তলিয়ে গেছে অন্তত পাঁচ শতাধিক চিংড়ি ঘের। এ ছাড়াও জোয়ারে পানিতে নষ্ট হয়েছে ঘরবাড়ির আসবাবপত্র, রাস্তাঘাট।
জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা জানান, উপজেলার ছয় ইউনিয়নের সব নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা সব বসতি পানিতে প্লাবিত হয়ে নানা ধরনের আসবাবপত্রের ক্ষতি হয়েছে। পানির স্রোতে ক্ষতি হয়েছে চিংড়ি ঘের। এতে সাগরে ভেসে গেছে অন্তত ১০০’র অধিক মাছের ঘের। ক্ষতি হয়েছে রাস্তাঘাটেরও। তবে কোনো প্রাণহানি হয়নি।
ইউএনও আরও জানান, রাতের জোয়ারে লোকালয়ে প্রবেশ করে সাগরের পানি। তবে তার আগেই এসব গ্রামের লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়।
কুতুবদিয়ার পর বেশি প্লাবিত হয়েছে মহেশখালীতে। মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াছিন জানান, মহেশখালী উপজেলায় মাতারবাড়ীতে বেড়িবাঁধ ডিঙ্গিয়ে পানি প্রবেশ করে সাইট পাড়া, উত্তর সিকদার পাড়া, সাইরার ডেইল, উত্তর রাজঘাট, ওয়াপদা পাড়া প্লাবিত হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে কোটি টাকার চিংড়ি ঘের। পাশের ইউনিয়ন ধলঘাটার মহিরাঘোনাস্থ বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
অন্যদিকে সোনাদিয়ার দ্বীপের পুরো এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে ঘরবাড়ির আসবাবপত্র ও রাস্তাঘাটের ক্ষতি হয়েছে। তবে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে বড় ধরনের ক্ষতি না হলেও পুরো ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, সেন্টমার্টিনের চারপাশের সব নিচু এলাকার ঘরবাড়ি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তবে এসব বসতির আসবাবপত্র নষ্ট হওয়া ছাড়া বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এদিকে সোমবারের রাতের জোয়ারে কক্সবাজার শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলর আকতার কামাল জানান, এলাকার নাজিরারটেক ও সমিতি পাড়ার বেশির ভাগ বসতঘরে হাঁটু পরিমাণ পানি প্রবেশ করে। এতে ঘরবাড়ির আসবাবপত্রের বেশ ক্ষতি হয়েছে।
অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার পোকখালি ও চৌফলদন্ডীর নিচু এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। এর অংশ হিসেবে জেলার অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার অর্ধ লক্ষাধিক মানুষকে আঘাত হানার পূর্বেই আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহিদ ইকবাল বলেন, রাতের জোয়ারের আগেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। সেখানে রাতে অবস্থান করে সকালের দিকে সবাই বাড়িতে ফিরে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক খবর নিয়েছি। বাড়িঘরে পানি ঢুকে আসবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্রের ক্ষতি হয়েছে। চিংড়ি ঘেরও পানির তোড়ে ভেসে যায়। কিছু রাস্তাঘাটের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া কোথাও কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বা প্রাণহানি হয়নি।
এসআইএইচ
