শিক্ষক আমেরিকায়, জাল স্বাক্ষরে বেতন!

রংপুরের মাওলানা কেরামত আলী কলেজের জীববিদ্যা বিভাগের প্রদর্শক শিক্ষক মোছা. মাসুদা বেগম পরিবারসহ বছরের বেশিরভাগ সময় থাকেন আমেরিকায়। এমনকি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত রংপুরে আসেননি তিনি। এরপরেও সুদূর আমেরিকায় বসে কলেজের বেতন বিলে নিয়মিত স্বাক্ষর করছেন তিনি। শহরের কাচারী বাজার সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে তুলছেন বেতনের টাকাও।
অভিযোগ উঠেছে, কলেজ সভাপতির ছোট বোন হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে সব সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন মাসুদা বেগম।
জানা যায়, মাসুদা বেগম ১৯৯১ সালে জীববিদ্যা বিভাগের প্রদর্শক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। কিন্তু তার পরিবার আমেরিকায় থাকায় ২০১৪ সাল থেকে বেশিরভাগ সময় দেশের বাইরেই থাকেন তিনি। চলতি বছরের ফ্রেরুয়ারির পর রংপুরে আসেননি তিনি। স্বাক্ষর জালিয়াতি করে নিয়মিত তুলছেন বেতন-ভাতা, নিচ্ছেন সব সুযোগ-সুবিধা।
বিষয়টি জানতে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. বারেক আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থানরত মাসুদা কবে নাগাদ দেশ ছেড়েছেন এর নির্দিষ্ট তারিখ জানাতে না পারলেও তিনি বলেন, সম্ভবত ফেব্রুয়ারির পর থেকে ছুটিতে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।
দীর্ঘ ৮ মাস ছুটিতে থাকলেও বেতন-ভাতা গ্রহণ করার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেসরকারি কলেজ একবার বন্ধ করলে পরে বেতন উত্তোলনে নানা জটিলতা হতে পারে। এ জন্য তাকে বেতন দেওয়া হচ্ছে।
তবে দেশের বাইরে অবস্থান করলেও নিয়মিত বেতন উত্তোলনে মাসুদার স্বাক্ষর থাকার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক বলেন, বর্তমান সভাপতি এবং সাবেক অধ্যক্ষ মো. মনোয়ার হোসেনের স্বেচ্ছাচারিতার জন্য কলেজে নানা অনিয়ম দেখা দিয়েছে। তার ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। এ ঘটনায় সম্প্রতি রংপুর অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালককে এবং জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কলেজের এক শিক্ষক।
মাসুদার বড় ভাই কলেজ সভাপতি ও সাবেক অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেন বলেন, অসুস্থতাজনিত ছুটিতে মাসুদা আমেরিকায় অবস্থান করছেন। গত তিন মাস ধরে মাসুদাকে অর্ধেক বেতন দেওয়া হচ্ছে।
রংপুরের সোনালী ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার নন্দিতা সরকার বলেন, গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মাসুদা বেগমের অ্যাকাউন্টে নিয়মিত পূর্ণ মাসের বেতন ঢুকেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর এস এম আবদুল মতিন লস্কর বলেন, বেশ কিছু লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। বিষয়টি তদন্তাধীন হওয়ায় কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
এসজি
