যৌতুক না পেয়ে গৃহবধূকে ভারতে বিক্রি, মামলা

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে যৌতুকের টাকা না পেয়ে রিনা আক্তার নামে এক গৃহবধূকে ভারতের পতিতালয়ে বিক্রির অভিযোগে উঠেছে স্বামী মো. সোহাগের (২২) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর বাবা তাজুল ইসলাম বাদী অভিযুক্ত মো. সোহাগসহ দুই জনকে আসামী করে সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। শুক্রবার (২১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোসলেহ উদ্দিন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ভূক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয়দের সহযোগীতায় কৌশলে সোহাগকে আটক করে কমলনগর থানা পুলিশ। সোহাগ সদর উপজেলা ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরউভূতি গ্রামের সফিক উল্যার ছেলে।
ভূক্তভোগীর পরিবার জানায়, প্রায় ৫ মাস আগে সোহাগের সঙ্গে কমলনগরের চর কালকিনি ইউনিয়নের মতিরহাট এলাকার তাজুল ইসলামের মেয়ে রিনা আক্তারের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এতে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দেওয়ার কথা থাকলেও ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকার জন্য সোহাগ স্ত্রীকে চাপ প্রয়োগ করে। এর মধ্যেই বিয়ের দুই মাস অতিবাহিত হয়।
পরে বেড়ানোর কথা বলে সোহাগ তার স্ত্রীকে ঢাকা নিয়ে যায়। সেখানে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে ড্রামে করে চোরাইপথে রিনাকে ভারতের কলকাতার কাছাকাছি স্থানে সাহিদা নামে তার (সোহাগের) এক বোনের কাছে নিয়ে যায়। পরে সোহাগ দেশে চলে আসলেও রিনাকে রেখে আসে। সহিদা সেখানকার একটি পতিতালয়ের সর্দার।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে গৃহবধূ রিনার খোঁজ না পেয়ে পরিবারের লোকজন চাপ দিলে সোহাগ জানায়, রিনা তার বোনের কাছে ঢাকায় আছে। কিন্তু যোগাযোগের জন্য ঠিকানা বা মোবাইল নাম্বার চাওয়া হলেও সোহাগ তা দিচ্ছিল না। ঘটনাটি সন্দেহ হওয়ায় গত ১০ অক্টোবর রিনার ভাই মো. জাহাঙ্গীর কমলনগরের হাজিরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে সোহেলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয়।
পুলিশের চাপে নিরুপায় হয়ে এক সপ্তাহ আগে রিনাকে অচেতন করে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। স্বাভাবিক হয়ে রিনা বুঝতে পারে তিনি স্বামীর বাড়িতে আছেন। স্বামীর বাড়ি থেকে গোপনে তিনি বাবার বাড়িতে চলে আসেন। পরে পরিবারের লোকজনকে জানায়, তাকে কলকাতার পতিতালয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছিল।
পুলিশ জানায়, যৌতুকের বাকি টাকা দেবে বললে লোভে পড়ে সোহাগ বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাতে শ্বশুর বাড়িতে আসে। সেখানে তাকে আটকে রেখে শ্বশুর বাড়ির লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। পরে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়।
ভুক্তভোগী রিনা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে ভারতে সহিদা নামে একজনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সোহাগের বোন। সেখানে ৩ মাস আমাকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের কথা না শুনলেই শারিরীকভাবে নির্যাতন করতো।
এ ব্যাপারে কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে সোহাগকে আটক করা হয়েছে। এঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আটককৃত আসামীকে সদর থানায় হস্তান্তর করা হবে।
এএজেড
