নারীকে অশ্লীল গালাগালির অডিও ভাইরাল, এসআই ক্লোজড
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে রেস্তোরাঁয় বৈঠকে বসতে অসম্মতি জানালে সেবা প্রত্যাশী এক নারীকে পুলিশের উপপরিদর্শকের গালাগাল দেওয়া অডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় ওই উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রতন মিয়াকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (১৬ অক্টোবর) রাতে রতন মিয়াকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয় বলে জানিয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান।
ভুক্তভোগী সেতারা বেগম কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের আকবর হাজী বাড়ির মৃত আবুবক্কর ছিদ্দিকের স্ত্রী। তিনি জানান, গত শনিবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর দিন সকালে ভুক্তভোগী ওই নারীর বাড়ি গিয়েও হুমকি-ধমকি দিয়ে শাসিয়ে এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে বারণ করে আসেন এসআই রতন।
সেতারা বেগম বলেন, ৭ মাস আগে আমার ছেলে নুরনবীকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সৌদি নিয়ে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সৌদি প্রবাসী সাইফুল ইসলাম। কথা ছিল সাইফুল সৌদি নিয়ে আমার ছেলেকে আবাসিক হোটেলে চাকরি দেবে। বেতন হবে ১ হাজার ৮০০ রিয়াল। কিন্তু তিন মাস একটা রুমে রাখে চাকরি না দিয়ে। গত ৭ মাসেও সে আমার ছেলেকে কোনো চাকরি দিতে পারেনি। একপর্যায়ে আকামা করার জন্য আবার ১ হাজার রিয়াল নেয়। এখানেও সাইফুল প্রতারণা করে আমার ছেলেকে খুরুজ লাগানো আকামা দেয়। এ কারণে কেউ তাকে আকামা দেখে কাজ দেয় না।
তিনি আরও বলেন, এসব প্রতারণার অভিযোগ তুলে গত ১৫-২০ দিন আগে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করি। ওই অভিযোগে বিবাদী করা হয় সৌদি প্রবাসী সাইফুল ইসলামের মা-বাবা ও স্ত্রীকে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি এ অভিযোগের তদন্ত করার দায়িত্ব দেন এসআই রতনকে। সমস্যার সমাধান করতে রতন আমাদের কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করে। পরে তাকে ২ হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা পরে দেওয়ার কথা ছিল।
ওই নারী আরও জানান, গত শুক্রবার প্রথম বৈঠকে থানায় বিবাদী পক্ষের কেউ আসেনি। দ্বিতীয় বৈঠক বসার জন্য এসআই রতন বিবাদীদের বাড়িতে গিয়ে বৈঠকে বসার বিষয়ে জানিয়ে আসেন। তারপর গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে এসআই রতন বাদীকে ফোন দিয়ে জানায় থানায় কোনো বৈঠক হবে না। বৈঠক হবে বসুরহাট বাজারের হক হোটেলে। এ নিয়ে অভিযোগকারী নারী রেস্তোরাঁয় গিয়ে বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানালে এসআই রতন ওই নারীকে মুঠোফোনে অশ্রাব্য-অশ্লীল ভাষায় বেজায় গালাগাল করেন। তখন মুঠোফোনে ওই নারী এসআই রতনকে জানান থানায় অভিযোগ করেছি বৈঠকও থানায় হবে। এরপর এসআই তাকে থানার গেইটে আসতে বলে। সেবা প্রত্যাশী নারী থানার গেইটের ভেতরে প্রবেশ করলে পুনরায় সে ওই নারীকে বিশ্রী ভাষায় প্রকাশ্যে সাধারণ মানুষের সামনে গালমন্দ করে। যা লেখার অযোগ্য। পরে ওই নারী কাঁদতে কাঁদতে থানা থেকে চলে যান। এসআই রতনের অশ্রাব্য-অশ্লীল ভাষায় গালাগালের একটি অডিও রেকডিং ও ভিডিও এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষতি আছে।
ভুক্তভোগী অভিযোগ করে আরও বলেন, একজন মাকে তার ছেলের সামনে প্রকাশ্যে এভাবে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা গালিগালাজ করতে পারে! যা সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। ওই নারী আরও জানান, তিনি আতঙ্কে গত দুদিন ধরে কিছুই খেতে-ঘুমাতে পারছেন না। এ ঘটনায় তিনি এসআই রতনের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন বাংলাদেশ পুলিশ প্রধানের কাছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রতন মিয়া বলেন, ওই নারী থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি। তার মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি বিষয়টি সমাধান করতে চেয়েছিলেন। তবে হোটেলে বৈঠকে না যাওয়ায় তিনি রাগের মাথায় একটু উত্তোজিত হয়ে ওই নারীর সঙ্গে ব্যবহার করেছিলেন। তবে ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে তাকে শাসানো হয়নি এবং টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রতন মিয়ার পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত (ক্লোজড) করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ভুক্তভোগী নারী কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও সম্পর্কের কারণে বিষয়টি সমাধানে এসআই রতন তৎপর ছিল। কিন্তু গালিগালাজের যে অডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়েছে তা দুঃখজনক। গতকাল রাতেই তাকে ক্লোজড করা হয়েছে।
এসএন