কর বাড়লেও সেবার মান বাড়েনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায়
দেড়শ বছরেরও বেশি পুরোনো ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার নিবন্ধিত ইজিবাইক ও রিকশার সংখ্যা ৪ হাজার ১০০টি। তবে বাস্তবে এই সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ ইজিবাইক ও রিকশা চলাচল করছে সড়কে। ফলে শহরে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে যানজট। আর দীর্ঘক্ষণ যানজটে পড়ে নষ্ট হচ্ছে মানুষের কর্ম ঘণ্টা। এ ছাড়া শহরের অধিকাংশ রাস্তাই ভাঙাচোরা। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানি জমে সড়কে। এ অবস্থায় সেবার মান না বাড়িয়ে উল্টো কর বাড়িয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষুব্ধ পৌরবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮৬৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভায় প্রায় ২ লাখ মানুষের বসবাস। তবে প্রথম শ্রেণির ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌসভার অধিকাংশ রাস্তা ভাঙাচোরা। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় এসব রাস্তায় চলাচলে দুর্ভোগে পড়তে হয় চলাচলকারীদের। সরু ড্রেনগুলো থেকে ময়লা উপচে পড়ে রাস্তায়। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় জমে হাঁটুপানি। তখন আর দুর্ভোগের অন্ত থাকে না পৌরবাসীর।
এ ছাড়াও পৌরসভার কয়েকটি ড্রেন দিয়ে ময়লা গিয়ে পড়ে তিতাস নদীতে। বিশেষ করে শহরের পাইকপাড়া ও কুমারশীল মোড় এলাকার দুইটি ড্রেন দিয়ে প্রতিনিয়ত ময়লা পড়ে বিষাক্ত হচ্ছে নদীর পানি। এ নিয়েও উদাসীন পৌর কর্তৃপক্ষ। তবে এসব সমস্যার সমাধান না করে নতুন অর্থবছরের শুরুতেই হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে ২০ শতাংশেরও বেশি।
টিনের বাড়ির জন্য সর্বনিম্ন হোল্ডিং ট্যাক্স ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সেমি পাকা ঘরের ক্ষেত্রে প্রতি স্কয়ার ফিট ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬০ পয়সা এবং পাকা বাড়ির জন্য হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হবে ৯৫ পয়সা থেকে ১ টাকা ১৫ পয়সা পর্যন্ত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় হোল্ডিং আছে প্রায় ২৬ হাজার। গত অর্থবছরে পৌর কর্তৃপক্ষ হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করেছে ৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। তবে হোল্ডিং ট্যাক্স ছাড়াও বিভিন্ন লাইসেন্স এবং হাট-বাজার ইজারাসহ আরও কয়েকটি আয়ের খাত রয়েছে পৌরসভার।
করোনার কারণে গত দুই বছর অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় তখন হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন নাগরিক সমাজের নেতারা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা আরিফুর রহমান জানান, এমনিতেই পৌরসভার রাস্তা-ড্রেনেজ ব্যবস্থার নাজেহাল অবস্থা। পৌরসভা যে ট্যাক্স নিচ্ছে সেটি সেবার তুলনায় বেশি। এখন আবার ট্যাক্স বাড়ানো একেবারেই অযৌক্তিক। নাগরিকদের উপর করের বোঝা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে পৌর কর্তৃপক্ষের সরে আসার দাবি জানান তিনি।
শহরের হালদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. হানিফ জানান, পৌরসভা থেকে অতিরিক্ত ইজিবাইক ও রিকশার লাইসেন্স দেওয়ায় প্রতিদিন রাস্তায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন মানুষ। পাশাপাশি দীর্ঘ সময় যানজটে পড়ে কর্ম ঘণ্টা নষ্ট হয়। শহরের অনেক সড়কই ভাঙা। নাগরিকদের দুর্ভোগ কমাতে এ সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন পৌর কর্তৃপক্ষের।
নদী নিরাপত্তা সংগঠন ‘নোঙর’ এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ জানান, কিছু ড্রেনের ময়লা সরাসরি নদীতে গিয়ে পড়ছে। এতে বিষাক্ত হচ্ছে নদীর পানি। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ভাঙা সড়কগুলো মেরামত না করে ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। পৌর কর্তৃপক্ষকে আগে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
জেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি পীযূষ কান্তি আচার্য বলেন, ‘গত দুই বছর করোনা মহামারির পর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নাগরিকদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। তাছাড়া পৌরসভার সেবার মান বাড়েনি। যানজট ও জলাবদ্ধতার কারণে নাগরিকদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।’
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির বলেন, ‘যতগুলো রিকশা ও ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া প্রয়োজন, ততগুলোই দেওয়া হয়েছে। একই লাইসেন্স দিয়ে একাধিক রিকশা-ইজিবাইক চলছে। এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আর ৬ বছর পর ২০ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। এটিও সবার সঙ্গে আলোচনা করেই করা হয়েছে। এ ছাড়া নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর জন্যও কাজ চলছে। ভাঙা সড়কগুলো সংস্কার কাজও দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে।’
এসআইএইচ