হিলিতে আবারও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা
ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ও আমদানি কমের অজুহাতে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে পাইকাড়িতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৯ থেকে ১০ টাকা করে। একইভাবে হিলি বাজারে খুচরাতেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৮টাকা করে। হঠাৎ করে আবারও পেঁয়াজের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকারসহ নিন্ম আয়ের মানুষজন।
হিলি স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বন্দর দিয়ে ইন্দোর, নাসিক ও নগর জাতের পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। বন্দরে ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ বর্তমানে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩১ থেকে ৩২ টাকা দরে, যা পূর্বে ২২ থেকে ২৪ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। এ ছাড়াও নগর জাতের পেঁয়াজ ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা পূর্বে ২৬ থেকে ২৭ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। আর নাসিক জাতের পেঁয়াজ ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা পূর্বে ৫/৭ টাকা কমে বিক্রি হয়েছিল।
হিলি বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা ইকবাল হোসেন বলেন, একে তো এই সময়ে আমাদের কোনো কাজকর্ম নেই যার কারণে আমাদের আয় রোজগার কম হচ্ছে। এর উপর নতুন করে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় আমরা চরম বিপাকের মধ্যে পড়ে গেছি। যে পেঁয়াজ কয়েকদিন আগে কিনলাম ২০ থেকে ২২ টাকা সেই পেঁয়াজ এখন ২৮ থেকে ৩০ টাকা হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে কিছুটা খারাপ পেঁয়াজ কম দামে কিনছি সেই সঙ্গে পরিমাণ যেখানে আগে এক কেজি কিনতাম এখন সেখানে হাফ কেজি কিনছি। দাম বাড়ার কারণে আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে। তাই দাম কমলে আমাদের মতো মানুষদের ভালো হয়।
হিলি বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আবু তাহের বলেন, হিলি বাজারে সাধারণত স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা পেঁয়াজের ব্যালেন্স পেঁয়াজগুলো বিক্রি করা হয়। এসব পেঁয়াজের কিছু ছাল উঠাসহ কিছুটা নিন্মমানের হওয়ার কারণে তুলনামূলক দাম কম থাকে। কিন্তু এসব পেঁয়াজের দামও বাড়তি। কারণ বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি কম হচ্ছে। যার কারণে বন্দরেই বেশী দাম দিয়ে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। আমাদের বাড়তি দামে কিনে নিয়ে আসতে হচ্ছে যার কারণে বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজ ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা কয়েকদিন আগে ২০ থেকে ২২ টাকা বিক্রি হয়েছিল। আর মোকামে দেশীয় পেঁয়াজের দাম বাড়ায় দেশী পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৬ টাকা কেজি দরে।
হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা আইয়ুব আলী বলেন, আবারও পেঁয়াজের দাম উর্দ্ধমুখী, যার কারণে সকাল থেকে বন্দরে ঘুরছি কিন্তু পেঁয়াজ কিনতে পারছি না। বন্ধের পূর্বে যে পেয়াজ ২২ টাকা কেজি দরে ক্রয় করেছি সেই পেঁয়াজ বর্তমানে দাম বেড়ে ৩০/৩২ টাকায় উঠে গেছে। আমরা তো বন্দর থেকে পেঁয়াজ ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠাই। কিন্তু কয়েকদিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা করে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণে আমাদের পেঁয়াজ কিনতে ভয় লাগছে। আমরা এত দামে পেঁয়াজ নিয়ে গিয়ে কি করব মোকামে যদি সেইভাবে পেঁয়াজের দাম না বাড়ে তাহলে তো আমাদের লোকশান গুনতে হবে।
এ বিষয়ে হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম বলেন, দুর্গা পূজা উপলক্ষে টানা ৮ দিন হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি বন্ধ ছিল। একইভাবে দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি বন্ধের কারণে পেয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। এতে করে সরবরাহ কমায় দেশের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা খানিকটা বেড়েছে। এ ছাড়া পূজার কারণে ভারতে পেঁয়াজের মোকাম বন্ধ ছিল যার কারণে কৃষকরা ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ উত্তোলন বন্ধ রেখেছিলেন। এখন মোকাম খুললেও কৃষকরা পুরোপুরি উত্তোলন শুরু না করায় আগের মতো পেঁয়াজের সরবরাহ নেই। সেই সঙ্গে ভারতের ব্যাঙ্গালুর অঞ্চলে বন্যার কারণে পেঁয়াজের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এতে করে ইন্দোর ও নাকিস অঞ্চল থেকে পেঁয়াজ ওই প্রদেশে যাচ্ছে, যার কারণে সেই দেশের বাজারেই পেয়াজের দাম খানিকটা বেশী। এ ছাড়া ভারতের রাজ্য সরকার কর্তৃক গাড়ি প্রতি সেল ট্যাক্স পরিশোধ করতে হচ্ছে, যার কারণে পরিবহন খরচ বাড়ার প্রভাব পড়ছে পেঁয়াজের দামের উপরে। এর ফলে বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনতে হওয়ায় বন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি কমেছে। এতে করে দেশের বাজারেও চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, এদিকে দেশীয় পেয়াজের দাম মন প্রতি ২০০/৩০০ টাকা করে বেড়েছে যে পেয়াজ পূর্বে ৯০০ টাকা মন ছিল সেটি এখন বেড়ে ১২/১৩০০ টাকা হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে আমদানিকৃত পেয়াজের দামের উপরে।
এ ব্যাপারে হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, দুর্গা পূজা উপলক্ষ্যে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। পূজার ছুটি শেষে আমদানি রপ্তানি শুরুর পর বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে বন্ধের পর শুরুর দিকে বন্দর দিয়ে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল বর্তমানে সেই তুলনায় পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। ৮দিন বন্ধের পর ৮ অক্টোবর পুনরায় আমদানি-রপ্তানি শুরুর দিনে ৩০টি ট্রাকে ৮৭৪ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। ১০ অক্টোবর ৩১টি ট্রাকে ৮৫৭ টন পেঁয়াজ আমদানি হয় যেখানে গতকাল ১১ অক্টোবর ২২টি ট্রাকে ৫৯৪ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। আজো বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে।
এসআইএইচ