নরসিংদীতে চক্ষুসেবায় নেই সরকারি হাসপাতাল
মানব জীবনে বেঁচে থাকার জন্য চোখ একটি অমূল্য সম্পদ। আর এই চোখের সেবা পাওয়ার জন্য নরসিংদীতে সরকারিভাবে নেই কোনো হাসপাতাল । ফলে বেসরকারিভাবে গড়ে উঠা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন জনসাধারণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, বিশ্বে প্রায় ৪ কোটি মানুষ নিবারণযোগ্য অন্ধত্বের শিকার। এ ছাড়া দৃষ্টিহীন মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৪ কোটি।
চক্ষু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রতি মিনিটে ১২ জন মানুষ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে ৭৫ লাখেরও বেশি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষ রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার শিশু। বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতার প্রধান কারণ ছানিজনিত। দেশে বছরে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ অন্ধত্বজনিত ছানির রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
এদিকে ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী নরসিংদীতে প্রায় সারে ২২ লাখ জনগোষ্ঠী। এর মধ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ২০১৩ সালের জরিপ অনুযায়ী নরসিংদীতে শুধুমাত্র দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর সংখ্যা প্রায় ৪ হাজারের মতো। জেলার এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারিভাবে সেবা পাওয়ার জন্য নেই কোনও বিশেষ হাসপাতাল। এ ছাড়া জেলার হাসপাতালগুলোতে প্রায় এক যুগ ধরে নেই চোখের সেবা দেওয়ার মতো কোনো চিকিৎসকও। যার ফলে সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার এই বিপুল সংখ্যাক জনগোষ্ঠী।
বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা প্রোগ্রেসিভ লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালের এক হিসেবে বছরে ১ লাখেরও বেশী মানুষ চক্ষু সেবা নিচ্ছেন। আর চোখের অপারেশন করাচ্ছেন ৫ হাজারেরও বেশী এবং অন্যান্য অপারেশন করাচ্ছেন ১ হাজারের বেশী মানুষ। সরকারিভাবে চোখের কোনো সেবা না পাওয়ায় নরসিংদীতে গড়ে উঠেছে নামী-বেনামী একাধিক চোখের হাসাপাতাল। যার মধ্যে দু-একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকিগুলোতে সেবা পেতে প্রতারিত হচ্ছে এই জনগোষ্ঠী।
সেবা গ্রহীতা বিল্লাল হোসেন জানান, নরসিংদীর বিপুল সংখ্যক দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর সংখ্যা থাকলেও তাদের জন্য কোনো বিশেষ হাসপাতাল বা চিকিৎসক না থাকাটা আমাদের দুর্ভাগ্য। আর কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা। আমাদের মতো সাধারণ মানুষ সেবা পেতে বেসরকারিভাবে সেবা নেওয়ার অর্থ না থাকায় অন্ধত্ব বরণ করতেই হচ্ছে। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি দ্রুত চক্ষু হাসপাতাল তৈরি ও সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক দেওয়ার জন্য।
চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা: আবুল হোসেন জানান, যাদের বয়স ৪০ এর উপড়ে তারাই বেশী চক্ষু সমস্যায় ভুগে থাকে। তাই ছানি পড়লে তাদের অপারেশন করা না হলে জীবনের জন্য অন্ধত্ব বরণ করতে হবে। এ জন্য নিয়মিত চোখের পরিচর্যা নিতে হবে।
ঢাকা প্রোগ্রেসিভ লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ননী গোপাল দাস জানান, শুধুমাত্র লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালেই দৈনিক ৫ শতাধিক চোখের সমস্যাজনিত কারণে সেবা দেওয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়া এখানে প্রতি মাসে প্রায় ৮০০ জন মানুষের চোখের অপারেশন করা হয়। এর মধ্যে অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের হওয়ায় তাদের স্বল্পমূল্যে ও বিনামূল্যে এই সেবা দেওয়া হয়ে থাকে।
জেলার হাসপাতালগুলোতে চক্ষু চিকিৎসকের মাধ্যমে এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠিকে সেবা দেওয়ার আহ্বান জানান জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন অফিসার সুরভী আফরোজ।
এ ব্যাপারে নরসিংদী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আবু কাউছার সুমন জানান, নরসিংদীতে সরকারিভাবে বেশ কিছু হাসপাতাল থাকলেও তাতে দীর্ঘদিন চোখের বিশেষজ্ঞ না থাকায় চোখের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে এ বিষয়ে একাধিক পত্র দেওয়া হলেও শুধুমাত্র আশ্বাসই পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে জেলার প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে চক্ষু ইউনিট স্থাপন করে চক্ষু চিকিৎসকের মাধ্যমে এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী সেবা পাবে-এমন প্রত্যাশা সকলের।
এসআইএইচ